অতীতের সব রেকর্ড ভেঙ্গেছে সোনার দাম।
গতকাল সোমবার বিশ্ববাজারে সোনার দাম বেড়ে হয় প্রতি আউন্স এক হাজার ৯৪৪.৭১ ডলার, যা ইতিহাসের সর্বোচ্চ দামের নতুন রেকর্ড। এর আগে সর্বোচ্চ দাম ছিল ২০১১ সালের সেপ্টেম্বরে এক হাজার ৯২১.১৮ ডলার। গতকাল সোনার দাম বাড়ে ১.৬ শতাংশ। গত এক মাসে বিশ্ববাজারে সোনার দাম বেড়েছে প্রায় ১০ শতাংশ, এক বছরে বেড়েছে ৩৬.২২ শতাংশ।
কভিড-১৯ মহামারি শুরু হওয়ার পর থেকেই বিশ্ববাজারে যেন লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে সোনার দাম। বাংলাদেশের ইতিহাসে সর্বোচ্চ দামের রেকর্ড ছাড়িয়ে এবার বিশ্ববাজারেও নতুন রেকর্ড গড়ল সোনা। বিশ্লেষকরা বলছেন, চীন-যুক্তরাষ্ট্র রাজনৈতিক ও বাণিজ্যিক উত্তেজনা, দ্বিতীয় দফায় বিশ্বজুড়ে করোনার ব্যাপক সংক্রমণ, ডলার ক্রম দুর্বল হওয়া এবং সুদের হার নিম্নমুখী থাকায় অর্থনৈতিক অনিশ্চয়তায় ভুগছেন বিনিয়োগকারীরা। তাই নিরাপদ হিসেবে সোনায় বিনিয়োগ বাড়াচ্ছেন তাঁরা।
সেই সঙ্গে বাড়ছে রুপার দামও বাড়ছে। গত এক মাসেই রুপার দাম বেড়েছে ৩৬ শতাংশ।
ফোর্বস ম্যাগাজিনের এক বিশ্লেষণে বলা হয়, মহামারির কারণে যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনীতি অনেকটাই নিশ্চল হয়ে পড়েছে। এ অবস্থায় দেশটির সরকার বড় অঙ্কের অর্থ ধার করে প্রণোদনা দিচ্ছে। এতে ডলারের ক্রয়ক্ষমতা নিয়ে বিনিয়োগকারীরা উদ্বিগ্ন। যুক্তরাষ্ট্র সরকারকে এ অর্থ পূরণ করতে হবে হয় কর বাড়িয়ে না হয় আরো ডলার মুদ্রণ করে। কিন্তু এতে মূল্যস্ফীতি বাড়বে ব্যাপকভাবে। এসব কারণে সোনার চেয়ে ডলারনির্ভর সম্পদের মূল্য কমছে। ফলে আন্তর্জাতিক অন্যান্য মুদ্রার বিপরীতে কমছে ডলারের দাম। বিপরীতে শক্তিশালী হচ্ছে সোনা।
বিনিয়োগ প্রতিষ্ঠান গোল্ডম্যান স্যাকস এক প্রতিবেদনে জানায়, আগামী ১২ মাসের মধ্যেই সোনার দাম প্রতি আউন্স দুই হাজার ডলারে উঠে আসবে। এমনকি উন্নত দেশগুলো করোনা থেকে সেরে উঠলেও সোনার দাম ঊর্ধ্বমুখী থাকবে নিম্ন সুদের হার এবং ডলারসহ আন্তর্জাতিক মুদ্রাগুলোর অবমূল্যায়নের কারণে।
সোনার বাজার বিষয়ক গবেষণা প্রতিষ্ঠান মেটাল ফোকাস জানায়, করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাবের কারণেই সোনার বাজার ঊর্ধ্বমুখী হয়ে উঠেছে। লকডাউনের কারণে বিশ্বে সোনার দুই বড় বাজার চীন ও ভারতে কমেছে অলংকার বিক্রি। কিন্তু অস্থির এ সময়ে নিরাপদ হিসেবে সোনায় বিনিয়োগ বাড়াচ্ছেন পশ্চিমা ব্যবসায়ীরা। সে কারণেই দাম বাড়ছে। অ্যাক্সিকর্পের প্রধান বৈশ্বিক বাজার বিশ্লেষক স্টেফেন ইনেস বলেন, ‘ডলার দুর্বল হওয়ার পাশাপাশি করোনা সংক্রমণের হার বেড়ে যাওয়ায় বিভিন্ন দেশে অর্থনীতি বাঁচাতে আরো প্রণোদনার দাবি তৈরি হচ্ছে। এমন পরিস্থিতিতে সংগত কারণেই সোনার দাম ঊর্ধ্বমুখী থাকবে।’
এদিকে প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের পাশাপাশি সোনার মজুদ বাড়াচ্ছে কেন্দ্রীয় ব্যাংকগুলোও। যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে রাজনৈতিক উত্তেজনার কারণেও অনেক দেশ সোনা মজুদ করছে যেকোনো সংকটে ব্যবহার করার জন্য। ওয়ার্ল্ড গোল্ড কাউন্সিল জানায়, এ বছরের জানুয়ারি থেকে মে পর্যন্ত ১৪৮ টন সোনা ক্রয় করে তুরস্ক রিজার্ভ হিসেবে সোনার সবচেয়ে বড় ক্রেতা দেশে পরিণত হয়েছে। এর আগে সবচেয়ে বড় ক্রেতা ছিল রাশিয়া। সম্প্রতি হংকং ইস্যুতে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প এক আদেশে চীনের ব্যাংকগুলোর ডলার ক্রয় আটকে দিয়েছেন। তাই সোনায় বিনিয়োগ বাড়াচ্ছে চীনও। মেটাল ফোকাস জানায়, এ বছর কেন্দ্রীয় ব্যাংকগুলো ৩৫০ টন সোনা ক্রয় করবে।
করোনা মহামারি শুরু হওয়ার পর থেকে আন্তর্জাতিক বাজারের সঙ্গে সংগতি রেখে বাংলাদেশেও দফায় দফায় বাড়ছে সোনার দাম। দেশে সবচেয়ে ভালো মানের বা ২২ ক্যারেটের প্রতি ভরি (১১ দশমিক ৬৬৪ গ্রাম) সোনার দাম বর্তমানে ৭২ হাজার ৭৮৩ টাকা। যা এ দেশের ইতিহাসে সর্বোচ্চ দাম।
সূত্র : লাইভমিন্ট, ফোর্বস ম্যাগাজিন, রয়টার্স।