1. sparkleit.bd@gmail.com : K. A. Rahim Sablu : K. A. Rahim Sablu
  2. diponnews76@gmail.com : Debabrata Dipon : Debabrata Dipon
  3. admin@banglanews24ny.com : Mahmudur : Mahmudur Rahman
  4. mahmudbx@gmail.com : Monwar Chaudhury : Monwar Chaudhury
ঈদুল ফিতর : খুশি ও প্রত্যাবর্তনের বার্তা
বৃহস্পতিবার, ০৮ জুন ২০২৩, ১০:১৯ পূর্বাহ্ন




ঈদুল ফিতর : খুশি ও প্রত্যাবর্তনের বার্তা

ড. মোহাম্মদ বাহাউদ্দিন
    আপডেট : ২১ এপ্রিল ২০২৩, ২:৪৮:৫৪ অপরাহ্ন

বিশ্বমানবতার পরম সুহৃদ মহানবী (সা.) ইরশাদ করেছেন, ‘প্রতিটি জাতি-গোষ্ঠীর উৎসবের উপলক্ষ রয়েছে, আর আমাদের খুশির উৎসব হচ্ছে ঈদ’। ঈদ মানে খুশি, আবার ঈদ মানে ফিরে আসা বা প্রত্যাবর্তিত হওয়া। তাই ঈদের মাধ্যমে খুশির উৎসব ও প্রত্যাবর্তনের বার্তা লিপিবদ্ধ রয়েছে। ঈদ উপলক্ষে খুশির হাওয়া বইতে থাকে, সর্বত্র উৎসবের আমেজ বিরাজ করে, মানুষের পুনর্মিলনী বা সম্মিলন ঘটে। তাই প্রাণের এ উৎসবকে আমরা ঈদ বলে থাকি। আবার মহাকালের ঘূর্ণাবর্তে প্রতি বছরই ঈদ আমাদের মাঝে ফিরে আসে, মানবচিত্তে আনন্দ-উল্লাসের দোলা দিয়ে যায়, সমাজ-মানসে নিখুঁত শিল্পীর অদৃশ্য তুলি দিয়ে প্রত্যাবর্তনের চিত্রাঙ্কন করে বেড়ায় এবং এ প্রত্যাবর্তনের গল্পে থাকে তাৎপর্যময়তা ও জীবন-জগতের জন্য পরম শিক্ষা। তাই আমাদের উচিত, ঈদ পালনের ভেতর দিয়ে শুধু উৎসবের সাগরে অবগাহন না করে প্রকৃত অর্থে এই প্রত্যাবর্তনের বার্তা, তাৎপর্য ও শিক্ষাকে গ্রহণ করা; তবেই আমাদের ঈদ উদযাপন সার্থক হয়ে উঠবে।

মুসলিম সংস্কৃতির অনিবার্য এক অংশ হচ্ছে ঈদ। আমাদের উদযাপনের জন্য রয়েছে দুটি ঈদ। একটি ঈদুল ফিতর, যা মাহে রমজানের সিয়াম সাধনার সমাপনীতে আর অপরটি ঈদুল আজহা, যা কুরবানির ঈদ নামেও পরিচিত; জিলহজের দশম তারিখে উদযাপিত হয়ে থাকে। ঈদ উদযাপনের ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপট বিবেচনা করলে আমরা দেখতে পাব, মহানবী (সা.) মদিনায় হিজরতের পর দেখতে পেলেন, মদিনার অধিবাসীগণের মধ্যে বছরে নির্দিষ্ট দুটি দিনে উৎসব পালনের রেওয়াজ রয়েছে। রাসুলে পাক (সা.) এটি জানার পর তাদের কাছে এ ধরনের উৎসব পালনের কারণ জানতে চান। মদিনার লোকেরা তাঁকে বলেন, হে আল্লাহর রাসুল (সা.)! আমরা সনাতন প্রথা অনুযায়ী জাহেলি যুগ থেকেই বছরে দুদিনে এমন উৎসব পালন করে আসছি; যা এখনো প্রচলিত আছে। প্রত্যুত্তরে মহানবী (সা.) বলেন, তোমাদের জন্য বরং এরচেয়েও পবিত্র ও সুন্দরতম দুটি উৎসবের উপলক্ষ আছে, যা তোমরা আমরা সম্মিলিতভাবে উদযাপন করব। আর তা হলো ঈদুল ফিতর এবং ঈদুল আজহা। ইতিহাসের দিকে তাকালে আমরা আরো দেখতে পাব, মূলত দ্বিতীয় হিজরিতে শাবান মাসে মাহে রমজানের সিয়াম সাধনাকে ফরজ করার বিষয়ে সিদ্ধান্ত হয়েছে। সেই হিসেবে মুসলিম জীবনে ইতিহাসের প্রথম ঈদ পালিত হয়েছিল দ্বিতীয় হিজরির রমজান পালন শেষে শাওয়াল মাসের প্রথম তারিখে ঈদুল ফিতর উদযাপনের মধ্য দিয়ে। এখানে আরো উল্লেখ্য, খুশি বা উৎসবের এই উপলক্ষটিকে ‘ঈদুল ফিতর’ এ কারণেই বলা হয়ে থাকে যে, ‘ফিতর’ মানে হলো রোজা ভঙ্গ করা; যেহেতু এই ঈদ পালনের মধ্য দিয়েই মাসব্যাপী দিনের বেলায় পানাহারের ওপর যে নিষেধাজ্ঞা ছিল তা ভাঙা হয়ে থাকে- তাই এই ঈদকে ঈদুল ফিতর নামে অভিহিত করা হয়েছে।

আমরা ঈদুল ফিতরের রাত ও দিনের মর্যাদার কথা যদি আলোচনায় নিয়ে আসি তবে দেখতে পাব, মহানবী (সা.) বলেছেন- যে ব্যক্তি ঈদের রাতে জাগ্রত থাকবে, ইবাদতের মধ্য দিয়ে রাতটি কাটাবে, তার অন্তঃকরণ সেই দিন মৃত হয়ে থাকবে না, যেদিন ইস্রাফিল (আ.) শিঙ্গায় ফুৎকার দেবেন (কেয়ামতের দিন)। অর্থাৎ কেয়ামত দিবসে এ কারণে তার অন্তর মহান আল্লাহর স্মরণে জীবিত ও জাগ্রত থাকবে। তিনি আরো বলেন, যে ব্যক্তি ইবাদতের মাধ্যমে ঈদের রাতে নিজেকে জিন্দা রাখবে মহান আল্লাহ তাকে ভয়াবহ সেই দিনে জিন্দা রাখবেন, যেদিন অন্যরা থাকবে মৃত। রমজানের শেষ রাতেই হলো ঈদুল ফিতরের রাত; হাদিস শরিফের ভাষ্য অনুযায়ী এ রাতে মহান আল্লাহ তাঁর অসংখ্য বান্দার প্রতি ক্ষমার সিদ্ধান্ত ঘোষণা করেন। আর ঈদুল ফিতরের দিনের কথা বলতে গেলে অফুরন্ত পুণ্যভাণ্ডারই আমাদের সামনে উন্মুক্ত হয়ে যায়। মহানবী (সা.) বলেছেন- ‘ঈদুল ফিতরের প্রত্যুষ থেকে আল্লাহর মনোনীত ফেরেশতাগণ রোজাদারের পথ-প্রান্তর মুখে দাঁড়িয়ে থেকে ঘোষণা করতে থাকেন, ওহে আল্লাহর বান্দারা! পুণ্যকর্মের তাওফিক দানকারী ও সওয়াব বর্ধিতকারী মহান আল্লাহর দিকে অতি শীঘ্র চলো। রমজানের রাতগুলোয় তোমরা ইবাদত করেছ আর দিবসগুলোয় রোজাব্রত পালন করেছ। তোমরা অসহায় ফকির-মিসকিনদের খাদ্য দিয়েছ, আজ এসবের পুরস্কার গ্রহণ কর। যখন আল্লাহর বান্দারা ঈদগাহে সমবেত হয়ে ঈদের নামাজ আদায় করে, তখন একজন ফেরেশতা বলতে থাকে, ওহে মুসল্লিগণ! মহান আল্লাহ তোমাদের ক্ষমা করে দিয়েছেন। এবার তোমরা নিষ্কলুষ ও নিষ্পাপ অবস্থায় আপন গৃহে প্রত্যাবর্তন করো। আজকের এই দিন পুরস্কার দেয়ার দিন, কেননা আকাশে আজকের এই দিনকে উপহার প্রদানের দিন হিসেবে সাব্যস্ত করা হয়েছে।’ মহানবী (সা.) বছরের যে পাঁচটি রাতকে ইবাদত কবুলের রাত ও জান্নাত প্রাপ্তির রাত হিসেবে ঘোষণা করেছেন তার মধ্যে দুই ঈদের রাত হচ্ছে অন্যতম।

পবিত্র রমজানকে বলা হয়েছে সহানুভূতির মাস। রমজানের এ সহানুভূতির শিক্ষা কাজে লাগিয়ে আমাদের উচিত ঈদুল ফিতর উপলক্ষে সমাজের অসহায়, দুর্দশাগ্রস্ত, ফকির, মিসকিন ও অভাবী লোকদের যথাসম্ভব সহযোগিতা করা। পবিত্র কুরআনে রয়েছে- ‘ওয়াফি আমওয়ালিহিম হাক্কুল্ লিস্ সায়েলে ওয়াল মাহরুম’ অর্থাৎ তাদের সহায়-সম্পত্তিতে অভাবী প্রার্থী ও বঞ্চিতদের অধিকার রয়েছে। এটি এমন নয় যে, অভাবী মানুষদের কিছু দিয়ে আমরা তাদের প্রতি করুণা করলাম; বরং সম্পদশালীদের সম্পদে নিরন্ন মানুষের জন্য খোদাপ্রদত্ত ও নির্দেশিত অধিকার জেনে ও মেনেই তাদেরকে সহযোগিতা করতে হবে। ঈদের শিক্ষা মানবতার, মহানুভবতার ও মানুষকে ভালোবাসার শিক্ষা; মানুষের পাশে থেকে তাদের দুঃখ মোছন, অনাহারীর মুখে অন্ন তুলে দেয়া, বস্ত্রহীনকে পোশাকের ব্যবস্থা করা ঈদের অন্যতম আচার; প্রকৃত মানুষ এরই মাঝে আসল আনন্দ খুঁজে পান। আমিরুল মোমেনিন হজরত উমর ফারুক (রা.)-এর শাসনামলে একবার ঈদের জামাতের জন্য নির্ধারিত সময় হয়ে যাওয়ার পরেও ইমামতি যিনি করবেন সেই খলিফাতুল মুসলেমিন তখনো উপস্থিত হতে পারেননি। জানা গেল হজরত উমরের (রা.) রয়েছে একটি মাত্র জামা, যেটি ঈদের সকালে ধুয়ে দেয়া হয়েছে; এখনো শুকায়নি, তাই খলিফার ঈদগাহে আসতে খানিকটা বিলম্ব হচ্ছে।

আমাদেরও উচিত ভোগ-সম্ভোগে গা না ভাসিয়ে জীবনযাপনে মধ্যপন্থা অবলম্বন করা। ঈদুল ফিতরে ইসলামি শরিয়ত নির্ধারিত সম্পন্নকৃত কার্যাদির মধ্যে রয়েছে, ফজরের নামাজ জামাতে আদায়ের পর প্রয়োজনীয় তাসবিহ-তাহলিল শেষে সকালেই গোসল সেরে নেয়া, মিষ্টি জাতীয় খাদ্য গ্রহণ করা, ঈদগাহে যাওয়ার প্রস্তুতি নেয়া, উত্তম পোশাক পরিধান ও সুগন্ধি মাখা, তাকবির পড়তে পড়তে ঈদগাহে যাওয়া, ঈদের নামাজ আদায় করা, পরস্পরের সঙ্গে কুশলাদি বিনিময় করা, আপনজনদের খবরাখবর নেয়া, প্রতিবেশীর ভালোমন্দ দেখা, পায়ে হেঁটে ঈদগাহে যাওয়া, এক রাস্তায় যাওয়া এবং অন্য রাস্তায় আসা, অন্যদের সাধ্যমতো পানাহার করানো, ঈদগাহে যাওয়ার পূর্বেই সাদকাতুল ফিতর প্রদান করা, নিজের জন্য, নিজের মা-বাবা, আত্মীয়-স্বজন, পাড়া-প্রতিবেশীসহ সমগ্র মুসলিম উম্মাহর জন্য মহান আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করা ইত্যাদি।

ঈদুল ফিতরের উৎসব ও খুশি মুখ্যত রোজাদারদের জন্যই নিহিত। কেননা ধর্মীয় দৃষ্টিকোণ থেকে যে ব্যক্তি রমজানের সিয়াম সাধনা করল না তার চেয়ে হতভাগ্য আর কেউ হতে পারে না; এমন ব্যক্তি পার্থিব সম্ভোগের অংশ হিসেবে ঈদ উৎসবে শামিল হলেও প্রকৃতপক্ষে এতে তার জন্য কোনো কল্যাণ নেই। তাই আল্লাহর বান্দাদের উচিত, রমজানের রোজা পালনের মধ্য দিয়ে ঈদুল ফিতরের পুরোপুরি বরকত হাসিল করা আর এটি তো সংবিধিবদ্ধ যে, ইসলামে ঈদের রাত আর দিনের যত ফজিলত, রহমত, ক্ষমা আর বরকত প্রাপ্তির ঘোষণা ও নিশ্চয়তা রয়েছে তা কেবলমাত্র মহান প্রভুর প্রিয়ভাজন রোজাদারদের জন্যই সংরক্ষিত। আমাদের সম্বিত ফিরে আসুক, হেদায়াতের সরল, সহজ ও সঠিক পথে যেন আমরা বিচরণ করতে পারি- মহান আল্লাহ সে তাওফিক দান করুন। আসন্ন পবিত্র ঈদুল ফিতর সবার জীবনে বয়ে আনুক অনাবিল সুখ ও সমৃদ্ধি- এ প্রত্যাশাই রইল।

ড. মোহাম্মদ বাহাউদ্দিন : চেয়ারম্যান ও অধ্যাপক; ফারসি ভাষা ও সাহিত্য বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়।
[email protected]




খবরটি এখনই ছড়িয়ে দিন

এই বিভাগের আরো সংবাদ







Copyright © Bangla News 24 NY. 2020