কানাইঘাটের লোভাছড়া পাথর কোয়ারি পরিদর্শন করেছেন সরকারি উচ্চপদস্থ কর্মকর্তাবৃন্দ।কর্মকর্তারা বৃহস্পতিবার (৪ আগষ্ট) সকাল ১০টার দিকে উপজেলার সীমান্তবর্তী লোভাছড়া পাথর কোয়ারীর সার্বিক অবস্হা সরেজমিনে পরিদর্শন ও তদন্ত করেন। পরিদর্শন টিমে পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রনালয়, খনিজ উন্নয়ন ব্যুরো ও জ্বালানী সম্পদ বিভাগ ও পরিবেশ অধিদপ্তরের উর্ধ্বতন কর্মকতারা উপস্থিত ছিলেন।
পরিবেশ,বন ও জলবায়ূ পরিবর্তন মন্ত্রনালয়ের সহকারী সচিব (আইন-১) মোঃ শওকতুল আম্বিয়া এসময় লোভাছড়া পাথর কোয়ারি নদীপথে নৌকা নিয়ে ঘুরে ঘুরে প্রায় ২ ঘণ্টা কোয়ারির বর্তমান সার্বিক অবস্হা দেখার পাশাপাশি জব্দকৃত পাথর গুলোও দেখেন।
এ সময় সহকারি সচিব মোঃ শওকতুল আম্বিয়ার সাথে তার সফর সঙ্গী হিসাবে উপস্হিত ছিলেন পরিবেশ, বন ও জলবায়ূ পরিবর্তন মন্ত্রনালয়ের অতিরিক্ত সচিব সঞ্জয় কুমার ভৌমিক, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ বিভাগের পিএএ যুগ্ম সচিব বেগম শাহিনা খাতুন, পরিবেশ বন ও জলবায়ূ পরিবর্তন মন্ত্রনালয়ের উপ-সচিব মোহাম্মদ আব্দুল ওয়াদুদ চৌধুরী, পরিবেশ অধিদপ্তরের পরিচালক (আইন) খন্দকার মোঃ ফজলুল হক, খনিজ ও সম্পদ উন্নয়ন ব্যুরো, জ্বালানিও খনিজ সম্পদ বিভাগের উপ-পরিচালক মামুন রশিদ। কোয়ারি পরিদর্শনকালে উপস্হিত ছিলেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা, সুমন্ত ব্যানার্জি, কানাইঘাট থানার অফিসার ইনচার্জ তাজুল ইসলাম পিপিএম সহ ভূমি অফিসের কর্ম. কর্তারা ও পাথর ব্যবসায়ীরা।
জানা গেছে দেশের বন্ধ হয়ে যাওয়া বিশেষ করে সিলেট অঞ্চলের পাথর কোয়ারিগুলো খুলে দেওয়ার জন্য সরকারের পক্ষ থেকে যে, ইতিবাচক সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। তারই আলোকে পাথর কোয়ারিগুলোর বর্তমান পরিবেশ কেমন রয়েছে, খুলে দেওয়ার উপযুগী কি না তা যাচাই-বাছাই করার জন্য মূলত লোভাছড়া পাথর কোয়ারি পরিদর্শনে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রনালয় ও বিভাগের উচ্চ পদস্থ ‘ সরকারি কর্মকর্তারা সরেজমিনে দেখতে এসেছেন। পাশাপাশি লোভাছড়ার নদীর দু’পাড়ে পরিবেশঅধিদপ্তর কর্তৃক জব্দকৃত প্রায় ২ কোটি ঘনফুট পাথরের মালিকানা নিয়ে কোয়ারির সাবেক ইজারাদার মস্তাক আহমদ পলাশ ও বেশ কয়েকজন পাথর ব্যবসায়ীর দায়েরকৃত উচ্চ আদালতে বিচারাধীন বেশ কয়েকটি রিট পিটিশন মামলা কি অবস্থায় রয়েছে তা কোয়ারি পরিদর্শন ও তদন্তকালে জানতে চেয়েছেন স রেজমিনে আসা সহকারি সচিব মোঃ শওকতুল আম্বিয়া।
বন্ধ হওয়ার আগে বিগত কয়েক বছর থেকে কানাইঘাটের সীমান্তবর্তী লোভাছড়া পাথর কোয়ারি থেকে মারাত্মক পরিবেশ বিধ্বংসী যান্ত্রিক বাহন দিয়ে বিশাল বিশাল গর্ত ও লোভা নদীর গতিপথ পরিবর্তন করে পাথর উত্তোলনের ফলে প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের অপরুপ লীলা ভূমি লোভাছড়া নদীর দু’পাড়ে ব্যাপক ভাঙ্গনের ফলে এবংঅপরিকল্পিত ভাবে পাথর উত্তোলনের কারনে ক্ষতবিক্ষত হয়ে গেছে পাথর কোয়ারি এলাকা। যা পরিবেশের জন্য মারাত্মক বিপর্যয় ডেকে আনবে বলে বারবার পরিবেশবিদ ও সচেতন মহল জানিয়ে আসছেন। তবে এলাকার হাজার হাজার মানুষের কর্ম সংস্হানের একমাত্র মাধ্যম লোভাছড়া পাথর কোয়ারি খুলে দেওয়ার জন্য পাথর ব্যবসায়ী ও এলাকাবাসী সরকারের কাছে দাবী জানিয়ে আসছেন।
সচেতন মহল সরকারের পক্ষ থেকে কোয়ারি খুলে দেওয়া হলে পরিবেশ রক্ষা করে যান্ত্রিক বাহনের মাধ্যমে পাথর উত্তোলন না করে সনাতন পদ্ধতিতে পাথর উত্তোলন এবং সরকারি রাজস্ব বৃদ্ধির জন্য টেন্ডার প্রক্রিয়ার মাধ্যমে কোয়ারির লীজ দেওয়ার আহবান জানিয়েছেন।
প্রসঙ্গত যে, লোভাছড়ার পাথর কোয়ারির লীজের মেয়াদ ২০২০ সালের ১৩ এপ্রিলশেষ হলে কোয়ারি থেকে সব ধরনের পাথর উত্তোলন, বিপণন, পরিবহন বন্ধ করে দেয় সংশ্লিষ্ট মন্ত্রনালয় ও বিভাগ। লীজের মেয়াদ শেষ হওয়ার পর সে সময় কোয়ারির দু’পাড়ে মজুদকৃত প্রায় ২ কোটি ঘনফুট পাথর জব্দ করে সিলেট পরিবেশ অধিদপ্তর। এরপর থেকে সরকারি নির্দেশের কারনে লোভাছড়া পাথর কোয়ারি বন্ধ রয়েছে। জব্দকৃত ২ কোটি ঘনফুট পাথর পরিবেশ অধিদপ্তর সিলেট ৩ বার নীলামে তুললেও এ নিয়ে নীলামকারিরা পাল্টাপাল্টি উচ্চ আদালতে কয়েকটি রিট মামলা কারনে জব্দকৃত পাথর নীলাম নিয়ে জটিলতা দেখা দিয়েছে।