চারতলাবিশিষ্ট দৃষ্টিনন্দন সুউচ্চ ভবন। বাইরে শোভা পাচ্ছে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুর বিশালাকৃতির ছবি। স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের অধীনে নির্মিত সুনামগঞ্জের ধর্মপাশা উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা কমপ্লেক্স ভবনটি অসচ্ছল মুক্তিযোদ্ধাদের আর্থসামাজিক উন্নয়নে আয়বর্ধক প্রকল্প হিসেবে নির্মাণ করা হয়। অথচ উদ্বোধনের দুই বছর পরও এটি কাজে আসছে না। অসচ্ছল মুক্তিযোদ্ধারা পাচ্ছেন না সাধারণ সেবা। সাংগঠনিক কাজকর্মে খোলা হচ্ছে না অফিস ভবন। ভবনটি ব্যবহূত না হওয়ায় অযত্ন-অবহেলায় নষ্ট হচ্ছে কমপ্লেক্সের মূল্যবান আসবাবপত্র।
প্রতিটি উপজেলার মতো ধর্মপাশায় ২০১৮ সালে উপজেলার ধর্মপাশা থানা সংলগ্ন স্থানে এ ভবনটি নির্মিত হয়। ২ কোটি ১৭ লাখ ৫৫ হাজার ৭৭১ টাকা ব্যয়ে নির্মিত ৭ শতাংশ জমির ওপরে নির্মিত এ ভবনের প্রথম ও দ্বিতীয় তলায় রয়েছে ১৪টি দোকানঘর। তৃতীয় তলায় মুক্তিযোদ্ধা সংসদের কার্যালয় ও সম্মেলন কক্ষ। এ ছাড়া ভবনের প্রতিটি ফ্লোরে যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধা ও প্রতিবন্ধীদের চলাচলের জন্য রয়েছে বিশেষ সুবিধা। রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে অযত্ন-অবহেলায় ভবনটির অনেক মূল্যবান আসবাবপত্র দিন দিন নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। ভবনটির দুটি বাণিজ্যিক ফ্লোরে ১৪টি দোকানঘর ভাড়া না দেওয়ায় আয়ের উৎস থেকে বঞ্চিত হচ্ছে সংগঠনটি। ফলে সুবিধাবঞ্চিত হচ্ছেন অসহায় মুক্তিযোদ্ধারা।ধর্মপাশা উপজেলায় মোট মুক্তিযোদ্ধা ৩৮ জন। তারা সবাই ভাতাপ্রাপ্ত। বর্তমানে কমান্ডারের দায়িত্ব পালন করছেন ইউএনও।
বুধাবার দুপুরে মুক্তিযোদ্ধা কমপ্লেক্সে সরেজমিন পরিদর্শনে দেখা গেছে, ভবনের চারপাশে নোংরা আবর্জনায় ভরপুর। ভবনের মূল ফটকের সামনে বালুর স্তূপ। লোহার গেটে মরিচা ধরে গেছে। ভবন উচ্ছিষ্ট বালু কমপ্লেক্সের সীমানা প্রচীরের মধ্যে পড়ে আবর্জনা সৃষ্টি করেছে।
ধর্মপাশা উপজেলা প্রকৌশলীর কার্যালয়ে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ২০১৮ সালের সালের ১৪ ফেব্রুয়ারি কমপ্লেক্স ভবনটির নির্মাণের কার্যাদেশ পায় মেসার্স আনোয়ারা এন্টারপ্রাইজ নামের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে হস্তান্তর করেন। ২০১৯ সালের ১৩ ফেব্রুয়ারি ভবন নির্মাণকাজের শেষ সময়সীমা ছিল। তিনি যথাসময়ে ভবনটির নির্মাণকাজ সম্পন করেন। ভবনটি ধর্মপাশা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও ভারপ্রাপ্ত মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার কাছে হস্তান্তর করা হয়। এর সেই থেকে ধর্মপাশা উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ড কাউন্সিলের ধারাবাহিক কার্যক্রম ক্রমাগত হ্রাস পেতে থাকে। এই ভবনে নির্মিত ১৪টি দোকানঘরের আয় দিয়ে অসচ্ছল ও অসুস্থ মুক্তিযোদ্ধাদের সুযোগ-সুবিধা দেওয়ার কথা থাকলেও কর্তৃপক্ষের সে রকম কোনো কার্যক্রম চোখে পড়েনি। তবে ভবনটি উপজেলা পরিষদ থেকে একটু দূরে হওয়ার ভবনের মধ্যকার বাণিজ্যিক কক্ষগুলো কেউ ভাড়া নিতে চাচ্ছে না বলেও জানিয়েছে স্থানীয়রা।
এদিকে সাবেক উপজেলা ডেপুটি কমান্ডার সুলতান মজুমদার সঙ্গে কথা বললে তিনি মুক্তিযোদ্ধা কমপ্লেক্স বিষয়ে সব দায় ইউএনওর ওপর চাপিয়ে দেন। সর্বশেষ কমিটির মেয়াদ কবে শেষ হয়েছে তিনি বলতে পারেন না। তার সঙ্গে কথা বলে আরও জানা যায়, মুক্তিযোদ্ধাদের কেউ সেখানে যাতায়াত করেন না। তথ্যানুসন্ধানে জানা যায়, অসচ্ছল মুক্তিযোদ্ধারা এখান থেকে একেবারেই কোনো সুযোগ-সুবিধা পাচ্ছেন না। ফলে অযত্ন-অবহেলায় দিন দিন নষ্ট হচ্ছে দৃষ্টিনন্দন ভবনটি।
বীর মুক্তিযোদ্ধা মো. নূর উদ্দিন আহম্মেত বলেন, সংগঠনের কোনো কাজে কেউ আমাদের ডাকে না। নতুন ভবনে আমাদের আসা-যাওয়া নেই। কমিটি না থাকায় এমন অবস্থা বিরাজ করছে। সাংগঠনিক কার্যক্রম না থাকায় ভবনটি মুক্তিযোদ্ধাদের কোনো কাজে আসছে না।
উপজেলার সেলবরষ ইউনিয়নের মির্জাপুর গ্রামের বাসিন্দা বীর মুক্তিযোদ্ধা আবদুল কাদির তালুকদার বলেন, উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা কমপ্লেক্স ভবনটি উদ্বোধন হয়েছে কি না, সেটি আমাদের কাউকে জানানো হয়নি। নতুন এই ভবন আমাদের কোনো কাজেই আসছে না। এটি দেখভাল করার কেউ না থাকায় অযত্ন–অবহেলায় বিভিন্ন আসবাব নষ্ট হচ্ছে।
ঠিকাদার মাঈন উদ্দিন বলেন, ‘আমি ভবনটির নির্মাণকাজ যথাসময়ে শেষ করে এটি এলজিইডির কাছে হস্তান্তর করেছি। স্থানীয় সংসদ সদস্য ভবনটি উদ্বোধনও করেছেন। এখন এটিতে আমার আর দায়িত্ব নেই।’
উপজেলার সদর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান জুবায়ের পাশা বলেন, উপজেলার মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য তিনতলা বিশিষ্ট নতুন ভবনটি নির্মাণ করা হলেও এটি যে উদ্দেশে করা হয়েছে, সেটি এখনো বাস্তবায়িত হচ্ছে না।
ধর্মপাশা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) শীষেষ চন্দ্র সরকার বলেন, আমি এখানে নতুন এসেছি তবে শিগগিরই ভবনটি পরিদর্শন করে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।