দেশে ঋতু পরিবর্তনের ফলে প্রকোপ বেড়েছে জ্বর-সর্দি-কাশির; অনেকে ভুগছেন জ্বর-সর্দি-কাশির সমস্যায়। বেশিরভাগ মানুষ সাধারণ সর্দি-কাশির ভাইরাস ও করোনার মধ্যে পার্থক্য বুঝতে পারে না। এ জন্য সর্দি-কাশির সমস্যা হলে অনেকে চিন্তায় পড়ে যান। আবার চিন্তা বেড়েছে করোনা নিয়ে যা এখন মানুষের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছেজুড়ে জ্বরের প্রকোপ, অনেকের মাঝে করোনা আতঙ্ক!
সিলেট অঞ্চলে ভাইরাসজনিত জ্বর (ভাইরাল ফিভার)-এর প্রকোপ দেখা দিয়েছে। গত দু-তিন সপ্তাহ থেকে জেলার বিভিন্ন অঞ্চলে শিশু থেকে বৃদ্ধ- সকল বয়সের মানুষই পড়ছেন এ জ্বরের কবলে।
এদিকে, ভাইরাসজনিত এ জ্বর অনেকের ভেতরে ধরিয়ে দিয়েছে করোনা আতঙ্ক। তবে এতে আতঙ্কিত না হওয়ার পরামর্শ দিচ্ছেন স্বাস্থ্যবিশেষজ্ঞরা।
সিলেটের কয়েকটি হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে, প্রতিদিনই সিলেটের বিভিন্ন হাসপাতালে ভাইরাল ফিভারে আক্রান্ত রোগীরা ভর্তি হচ্ছেন। তাদের শরীরে সবসময়ই এক শ’র উপরে জ্বর থাকছে। এছাড়াও প্রচণ্ড মাথা ও শরীর ব্যথা রয়েছে। অনেকের সার্দি-কাশিও।
এবারের ভাইরাসজনিত জ্বর মানুষকে ভোগাচ্ছে বেশি। বিগত বছরগুলোতে দেখা গেছে- ভাইরাস জ্বর ৪-৫ দিনে সেরে গেলেও এবারে রোগীকে বিছানায় ফেলে রাখছে ১০-১২ দিন। জ্বরে আক্রান্ত কয়েকজনের সঙ্গে কথা বলে এমনটাই জানা গেছে।
চিকিৎসকরা বলছেন, তাপমাত্রার উঠা-নামা, হঠাৎ গরম ও হঠাৎ ঠান্ডা লাগা এবং সর্বোপরি সিজনাল (ঋতু পরিবর্তনজনিত) কারণে এ রোগের প্রাদুর্ভাব দেখা দিয়েছে। এই জ্বর হলে শীত শীত ভাব, মাথা ব্যথা, শরীরে ও গিরায় ব্যথা, খাওয়ায় অরুচি, ক্লান্তি, দুর্বলতা, নাক দিয়ে পানি পড়া, চোখ দিয়ে পানি পড়া, চোখ লাল হওয়া, চুলকানি, কাশি, অস্থিরতা ও ঘুম কম হতে পারে।
এছাড়াও শিশুদের টাইপ বি ইনফ্লুয়েঞ্জা ভাইরাসের সংক্রমনে পেট ব্যাথা হতে পারে।এ ধরণের রোগীদের প্রচুর পানি পান করা এবং বিশ্রামে থাকার পরামর্শ দিয়েছেন চিকিৎসকরা।
সিলেটের মেডিসিন বিশেষজ্ঞ ডাক্তার মাহমুদ হাসান জানান, তার চেম্বারে প্রতিদিন অনেক লোকই ভাইরাল ফিভারে আক্রান্ত হয়ে ব্যবস্থাপত্র নিচ্ছেন।
তিনি জানান, তাপমাত্রার উঠানামা এবং সিজনাল কারণে এটা হচ্ছে। সাধারণ রোগীদের প্যারাসিটামল, সর্দি থাকলে এন্টি হিস্টামিন খাওয়াতে হবে। তবে বেশি কাশি এবং শ্বাস কষ্টসহ অন্য কোনো ধরণের জটিলতা থাকলে ওই রোগীকে হাসপাতালে ভর্তি করা উচিত বলে উল্লেখ করেন তিনি।
সিলেটের প্রায় সকল অঞ্চলেই ব্যাপক হারে বাড়ছে ভাইরাস জ্বরের প্রকোপ। প্রতিটা ঘরের কেউ না কেউ এ জ্বরে আক্রান্ত হয়ে পড়েছেন। আবার অনেক ঘরের একাধিক ব্যক্তি আক্রান্ত। হাসপাতাল আর ডাক্তারের চেম্বার রোগিদের ভিড় লক্ষ্যণীয়।
এদিকে, অনেকে এই ভাইরাস জ্বর নিয়ে হাসপাতালমুখি হচ্ছেন না করোনা আতঙ্কে। তারা মনে করছেন- হাসপাতালে গেলেই নানা ধরণের টেস্টসহ অযথা হয়রানি করা হবে রোগীদের। তাই ঘরে বিশ্রাম নিয়ে চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী ওষুধ সেবন করছেন তারা।
ভাইরাস জ্বরের প্রকোপের বিষয়ে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর সিলেট বিভাগীয় কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক ডা. আনিসুর রহমান সিলেটভিউ-কে বলেন, বর্তমানে ভাইরাস জ্বর একটি সাধারণ স্বাস্থ্য সমস্যায় পরিণত হয়েছে। এতে উদ্বীগ্ন না হয়ে চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে ওষুধ সেবন করতে হবে।
তিনি বলেন, ভাইরাস আক্রমণের দুই থেকে সাত দিনের মাথায় জ্বর হয়। এই জ্বর হলে শীত শীত ভাব, মাথাব্যাথা, শরীরে ও গিরায় ব্যাথা, খাওয়ায় অরুচি, ক্লান্তি, দুর্বলতা, নাক দিয়ে পানি পড়া, চোখা দিয়ে পানি পড়া, চোখ লাল হওয়া, চুলকানি, কাশি, অস্থিরতা ও ঘুম কম হতে পারে। অনেকের ক্ষেত্রে পেটের সমস্যা, বমি ও ডায়রিয়া হয়। শিশুদের টাইপ বি ইনফ্লুয়েঞ্জা ভাইরাসের সংক্রমণে পেট ব্যাথা হতে পারে।
ডা. আনিসুর রহমান বলেন, এজন্য আতংকিত হওয়ার কিছু নেই। ডেঙ্গু, জন্ডিসসহ যে কোনো ভাইরাসজনিত জ্বরকেই ভাইরাস জ্বর বলা হয়। ভাইরাস জ্বর হলে দুশ্চিন্তার কোনো কারণ নেই। এ জ্বরের জন্য এন্টিবায়োটিকও জরুরি নয়। সাধারণত: প্যারাসিটামল খেলেই হয়। ভাইরাস জ্বর ৩/৫ দিন পর্যন্ত থাকে। তবে স্থায়িত্বকাল এর বেশি হলে অবশ্যই দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে, প্রয়োজনে হাসপাতালে ভর্তি হতে হবে।