1. sparkleit.bd@gmail.com : K. A. Rahim Sablu : K. A. Rahim Sablu
  2. diponnews76@gmail.com : Debabrata Dipon : Debabrata Dipon
  3. admin@banglanews24ny.com : Mahmudur : Mahmudur Rahman
  4. mahmudbx@gmail.com : Monwar Chaudhury : Monwar Chaudhury
এই রমজানেই ধূমপান ছেড়ে দিন
বৃহস্পতিবার, ০৮ জুন ২০২৩, ১০:১৪ পূর্বাহ্ন




এই রমজানেই ধূমপান ছেড়ে দিন

অধ্যাপক ড. অরূপরতন চৌধুরী
    আপডেট : ০১ এপ্রিল ২০২৩, ৬:২৭:০২ অপরাহ্ন

ধূমপান ও তামাকজাত দ্রব্যের স্বাস্থ্যগত ক্ষতি সম্পর্কে মানুষ সম্যক অবগত এবং আজকের দিনে মানুষের মধ্যে ধূমপানবিরোধী সচেতনতা অনেকাংশে বেড়েছে। কিন্তু ক্ষতিকর এই নেশাজাত দ্রব্যের ব্যবহার আকাক্সিক্ষত হারে কমছে না, কমছে না এর আগ্রাসন। বিশেষ করে দারিদ্র্যপীড়িত এবং বাংলাদেশের মতো উন্নয়নশীল দেশগুলোতে তামাকজনিত রোগ-বালাই, মৃত্যুহার ও অন্যান্য ক্ষয়-ক্ষতি তুলনামূলক বেশি।

‘তামাক’ খাদ্য তালিকার অন্তর্ভুক্ত নয়। এটি এক ধরনের ক্ষতিকর নেশা। বহুকাল থেকে মানুষ তামাক নানাভাবে গ্রহণ করে আসছে, একটি হচ্ছে ধোঁয়াহীন তামাক বা জর্দা, গুল, খৈনী। অন্যটি হচ্ছে ধোঁয়াযুক্ত তামাক বা সিগারেট, চুরুট, হুক্কা, পাইপ ইত্যাদি। বিজ্ঞানের গবেষণায় এই দুই ধরনের তামাকই দেহের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর হিসেবে প্রমাণিত হয়েছে। তামাক এবং বিড়ি-সিগারেটের ধোঁয়ায় ৭ হাজারের বেশি ক্ষতিকর রাসায়নিক পদার্থ রয়েছে। যার মধ্যে ৭০টি রাসায়নিক পদার্থ সরাসরি ক্যান্সার সৃষ্টি করে। এর মধ্যে নিকোটিন, কার্বন মনোক্সাইড, হাইড্রোজেন সায়ানাইড, বেনজোপাইরিন, ফরমালডিহাইড, এমোনিয়া, পোলোনিয়াম ২১০ উল্লেখযোগ্য।

তামাকজনিত রোগে আক্রান্ত হয়ে বিশ্বে বছরে ৮৭ লক্ষাধিক মানুষ প্রাণ হারায়। বাংলাদেশে তামাকের কারণে বছরে প্রাণহানি ঘটে ১ লাখ ৬১ হাজারের বেশি (টোব্যাকো অ্যাটলাস-২০১৮)। সুতরাং করোনা মহামারির চেয়ে বড় মহামারি ‘তামাক’। এক কথায় বলতে গেলে মাথার চুল থেকে পায়ের নখ ও আমাদের দেহের সব অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ তামাকের কারণে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। যেমন- মাথার চুল পড়া, চোখের দৃষ্টিশক্তি নষ্ট, মুখ ও গলার ক্যান্সার, ফুসফুসের ক্যান্সার, হৃদরোগ, পাকস্থলীর ক্যান্সার, স্তন ক্যান্সার, যৌনশক্তি নাশ, গর্ভপাত, মৃত শিশু জন্ম, পায়ের পচনশীল রোগ, গ্যাংগ্রিন, পা কেটে ফেলা ইত্যাদি। ধূমপান যে শুধু ধূমপায়ীকে মৃত্যুর দিকে নিয়ে যাচ্ছে তা নয়, বরং পাশে থাকা অধূমপায়ীকে সমানভাবে রোগাক্রান্ত ও মৃত্যুর দিকে ধাবিত করছে।

তামাক সেবন প্রতিরোধযোগ্য অনেক দীর্ঘস্থায়ী ও ব্যয়বহুল রোগের অন্যতম প্রধান কারণ। তামাক সেবনের ফলে বিভিন্ন অসংক্রামক রোগের প্রকোপ দিন দিন বেড়েই চলেছে। বর্তমানে অসংক্রামক রোগে মৃত্যু হার ৬৭ শতাংশ, যার অন্যতম কারণ তামাক সেবন। এর ফলে ফুসফুস, মুখ, খাদ্যনালি, গলা, মূত্রাশয়, কিডনি, লিভার, অগ্ন্যাশয়, কোলন, মলদ্বার এবং মহিলাদের জরায়ুর ক্যান্সারসহ মাইলয়েড লিউকেমিয়া এবং আরো বিভিন্ন ধরনের ক্যান্সার হতে পারে। সব মিলিয়ে ২৭ শতাংশ ক্যান্সারের ক্ষেত্রে তামাক সেবনকে দায়ী করা হয়। ৯০ শতাংশ ফুসফুস ক্যান্সারের ক্ষেত্রেই প্রধান কারণ তামাক, ধূমপান। অর্থাৎ তামাক সেবন বা ধূমপান বর্জন করলে ৯০ শতাংশ ফুসফুস ক্যান্সার এড়ানো সম্ভব।

বেশিরভাগ ধূমপায়ী, তামাকসেবী ক্ষতিকর এই নেশা বর্জনের ইচ্ছা পোষণ করেন তবে পারিপার্শ্বিক অবস্থা এবং বাংলাদেশে তামাক ছাড়তে সহায়তা কার্যক্রম না থাকায় তা আর হয়ে উঠে না। অনেকেই ছেড়ে দিয়ে আবার শুরু করেন। তবে ধূমপান ও তামাক ছাড়তে সবচেয়ে জরুরি হলো ইচ্ছাশক্তি আর এক্ষেত্রে আমাদের দেশে মোক্ষম এবং উপযুক্ত সময় হলো পবিত্র রমজান মাস। রমজানের সংযম, নিয়মানুবর্তিতা ও পবিত্রতা মানুষের মনোবল ও দৃঢ় সংকল্প বজায় রাখার পক্ষে সহায়ক। ধূমপায়ী, তামাক পাতা, জর্দাসেবীরা এই মোক্ষম সুযোগ কাজে লাগাতে পারেন। কারণ একটা মানুষ যখন সারাদিন কোনো কিছু না খেয়ে থাকতে পারে বিশেষত দিনের এই দীর্ঘ প্রায় ১৫ থেকে ১৬ ঘণ্টা সময় না খেয়ে থাকতে পারেন এবং এর সঙ্গে সিগারেট, জর্দা, পান কোনো কিছুই না খেয়ে থাকতে পারেন তারা কেন জীবনের বাকি সময়ের জন্য ধূমপান বা তামাক ছাড়তে পারবেন না? এটাতো সম্পূর্ণভাবে একজন মানুষের ইচ্ছার ওপর নির্ভর করে। তাছাড়া রমজান মাসটা হচ্ছে সংযমের মাস, এই সময়ে মানুষ অনেক সংযমী হয় এবং সারাদিন একটি নিয়ম-শৃঙ্খলার মধ্যে ধর্মীয় নিয়মনীতির সঙ্গে চলতে হয়।

একজন ধূমপায়ী ব্যক্তি নিজের ক্ষতির পাশাপাশি আশপাশের অন্যদেরও ক্ষতি করে থাকে (পরোক্ষ ধূমপান), যা সম্পূর্ণ অনৈতিক কাজ। বিভিন্ন ধর্মেও এগুলোকে নিরুৎসাহিত করা হয়েছে। ধূমপান করে অন্যের ক্ষতির কারণ হওয়া বিষয়টি নিয়ে ধূমপায়ীসহ সবাইকে ভাবতে হবে। কারণ আমাদের দেশে বিরাট সংখ্যক জনগণ তামাকের ভোক্তা। বাংলাদেশ পৃথিবীর শীর্ষ ১০টি তামাকসেবী জনগণের মধ্যে অন্যতম একটি দেশ।

গেøাব্যাল অ্যাডাল্ট টোব্যাকো সার্ভে (গ্যাটস্) ২০১৭-তে দেখা যায়, বাংলাদেশে ৩৫.৩ শতাংশ (৩ কোটি ৭৮ লাখ) প্রাপ্তবয়স্ক মানুষ বিভিন্নভাবে তামাক সেবন করে। এর মধ্যে ১৮ শতাংশ ধূমপান করেন, যার সংখ্যা ১ কোটি ৯২ লাখ। এদের কারণে আবার কর্মক্ষেত্রে ৪২.৭ শতাংশ, গণপরিবহনে প্রায় ৪৪ শতাংশ এবং ৪৯.৭ শতাংশ মানুষ রেস্তোরাঁয় পরোক্ষ ধূমপানের শিকার হন। বাড়ি, গণপরিবহন, কর্মক্ষেত্র ও জনসমাগমস্থল মিলিয়ে এই সংখ্যা প্রায় ৮ কোটি! বাংলাদেশে প্রতি বছর প্রায় ৬১ হাজার শিশু পরোক্ষ ধূমপানজনিত বিভিন্ন অসুখে ভোগে। পরোক্ষ ধূমপানের কারণে পৃথিবীতে বছরে ১২ লাখ মানুষ অকালে মৃত্যুবরণ করে (বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা)।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মতে, পরোক্ষ ধূমপান অধূমপায়ীদের হৃদরোগের ঝুঁকি ২৫ থেকে ৩০ শতাংশ বাড়িয়ে দেয়। ফুসফুস ক্যান্সারের ঝুঁকি বাড়ায় শতকরা ২০ থেকে ৩০ ভাগ। শিশুদের ‘সাডেন ইনফ্যান্ট ডেথ সিন্ড্রোম’ রোগেরও কারণ পরোক্ষ ধূমপান। মানুষ জেনে-বুঝে যেমন নিজের ক্ষতি করতে পারেন না, তেমনি অন্যের ক্ষতি করাও সম্পূর্ণ অনুচিত।
রমজান মাসে একজন মানুষ ধূমপান ও তামাক সেবন বাদ দিয়ে নিজের প্রতি যেমন যতœবান হচ্ছে তেমনি, অন্যের ক্ষতির কারণ হওয়া থেকেও বিরত থাকছেন। পাশাপাশি রাষ্ট্রীয় আইন প্রতিপালনেও ভূমিকা রাখছেন। কারণ দেশের আইন অনুসারে পাবলিক প্লেস, পরিবহনে ধূমপান করা দণ্ডনীয় অপরাধ। যত্রতত্র ধূমপান না করে সুন্দর পরিবেশ বজায় রাখা প্রকারান্তে দায়িত্ববান ও নৈতিক মূল্যবোধ সম্পন্ন একজন সুনাগরিক চরিত্রকে নির্দেশ করে।

সুতরাং এই পবিত্র মাসে যদি সিগারেট বা জর্দা না খেয়ে কাটাতে পারেন, তবে বছরের বাকিটা সময় তামাকবিহীন থাকতে পারবেন না কেন? রোজা রাখার সময় থেকেই একজন ধূমপায়ীকে প্রতিজ্ঞা করতে হবে যে, আমি এই পবিত্র রমজান মাসে যেহেতু রোজা রাখব, নামাজ আদায় করব, সংযমী হব সেহেতু আমি এখন থেকেই আমার এই বদঅভ্যাসটিকে বা নেশাকেও পরিত্যাগ করব। এক্ষেত্রে দৃঢ়প্রতিজ্ঞ মনোবল বজায় রাখতে হবে। একজন ধর্মপ্রাণ ব্যক্তি এই ধরনের বদঅভ্যাস বা নেশা থেকে মুক্ত হতে পারেন। সুতরাং পবিত্র এই রমজান মাস থেকেই শুরু হোক সব ধরনের তামাক বর্জন। এক্ষেত্রে সহায়তার জন্য একজন মনোরোগ বিশেষজ্ঞের পরামর্শও নেয়া যেতে পারে।
আপনি যদি ধূমপান ছাড়তে পারেন তবে আপনার পরিবার ও বন্ধু-বান্ধবরাও বিভিন্নভাবে উপকৃত হবেন। যেমন-
তারা মুক্ত বায়ু সেবনের আস্বাদ পাবেন।

আপনি তাদের সঙ্গে মিশে আরো আকর্ষণীয় ও মধুর ব্যক্তিত্বের অধিকারী হবেন। কারণ একটি বিদেশি প্রবাদ আছে- একজন অধূমপায়ীকে চুমু দাও এবং তার স্বাদ অনুভব কর, দেখবে কত সুখকর সেই মুহূর্তটি। আপনি যদি ধূমপান না করেন তবে আপনার সন্তানও ধূমপান করবে না, কারণ শিশুরা যা দেখে তা-ই শেখে।

যারা ধূমপান করেন, তাদেরই কেবল বিপদের সম্ভাবনা থাকে তা-ই নয়, তাদের আশপাশে যারা থাকেন তাদেরও বক্ষব্যাধি ইত্যাদিতে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। ধূমপান ছাড়তে প্রবল ইচ্ছাশক্তির প্রয়োজন। কাজটি কয়েকটি পর্যায়ে করা যায়। প্রথমে আপনি চিন্তা করে নিন কেন আপনি ধূমপান ছাড়বেন। মনে মনে আপনি শক্ত যুক্তি খুঁজে নিতে চেষ্টা করুন। আপনি নিজের মনকে ওই যুক্তিগুলোর আলোকে ধূমপান ছাড়ার জন্য প্রস্তুত করতে থাকুন। সিদ্ধান্ত অনুযায়ী আপনি এক বিশেষ দিনে কাজটি সম্পন্ন করুন। সেই দিন অবশ্যই ধূমপান ছেড়ে দিন। আপনার ধূমপানের নেশার তাগিদ উঠলে অন্য কোনো কাজে বা চিন্তায় নিজেকে ব্যস্ত রাখুন।

রমজানে ইফতারের পর ধূমপানের ইচ্ছা প্রবল হয়। এ সময়ে চিন্তাশীল ও অন্যান্য কাজে ব্যস্ত হয়ে পড়–ন। রমজানের সংযম অন্য দিনগুলোতেও কাজে লাগান। যেমন- রোজা রাখাকালীন সময়ে যেমন খাদ্য বা কোনো পানীয়ও গ্রহণ না করে সংযম বজায় রেখেছেন, নিজের ও প্রিয়জনদের স্বার্থে সিগারেট সেবনের ক্ষেত্রেও সংযম বা সংকল্প ধরে রাখুন। দেখবেন আপনি জয়ী হবেন। আর জয়ী হতে পারলেই রক্ষা পেতে পারবেন তামাকজনিত ২৫টি রোগের ঝুঁকি থেকে। তাই আর দেরি কেন?

অধ্যাপক ড. অরূপরতন চৌধুরী : কলাম লেখক, চিকিৎসক ও বীর মুক্তিযোদ্ধা; প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি, মানস।
[email protected]




খবরটি এখনই ছড়িয়ে দিন

এই বিভাগের আরো সংবাদ







Copyright © Bangla News 24 NY. 2020