আফগানিস্তানে নারী স্বাধীনতায় আরেক দফা হস্তক্ষেপ করেছে তালেবান। এবার তারা দেশটির সরকারি ও আন্তর্জাতিক সব এনজিওতে নারীদের নিষিদ্ধ করেছে।
এর কারণ ব্যাখ্যায় তালেবানের পক্ষ থেকে বলা হয়, এনজিওতে কাজ করা নারীরা ঠিকঠাকমতো হিজাব না পরে শরিয়া আইন লঙ্ঘন করছেন।
তালেবান সরকারের অর্থমন্ত্রণালয় থেকে শনিবার (২৪ ডিসেম্বর) এক চিঠিতে এ নির্দেশ জারি করা হয় বলে জানায় বিবিসি।
মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র আব্দেল রহমান হাবিব বিবিসিকে বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেন, এ নিষেধাজ্ঞা জারির বিষয়টি অবগত করতে এনজিওগুলোতে চিঠি পাঠানো হয়েছে এবং পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত নিষেধাজ্ঞা বলবৎ থাকবে।
যদি কোনো সংস্থা এই নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে তবে তার নিবন্ধন বাতিল করারও হুমকি দেওয়া হয়েছে।
তবে এই নিষেধাজ্ঞা জাতিসংঘের বিভিন্ন সংস্থাগুলোর উপরও কার্যকর হবে কিনা বিবিসি তাৎক্ষণিকভাবে তা নিশ্চিত হতে পারেনি। আফগানিস্তানে ত্রাণ ও উন্নয়ন কাছে জাতিসংঘের বেশ কয়েকটি সংস্থা বিস্তৃত পরিসরে সেখানে কাজ করছে।
গত মঙ্গলবার দেশটির সব সরকারি ও বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে নারীদের প্রবেশ নিষিদ্ধ করে তালেবান। পরদিন থেকেই কোনো বিশ্ববিদ্যালয়ে নারী শিক্ষার্থীদের আর প্রবেশ করতে দেওয়া হচ্ছে না। যার বিরুদ্ধে বিক্ষোভ করছেন আফগান নারীরা। এখন নারীদের কাজে যেতে বাধা দেওয়া হচ্ছে।
কয়েকজন নারী বিবিসির কাছে তাদের আতঙ্ক ও অসহায় অবস্থার কথা তুলে ধরেন। একজন জানান, তার আয়েই মূলত তাদের সংসার চলে। অসহায় চোখে তিনি প্রশ্ন তোলেন, যদি আমি কাজে যেতে না পারি তবে আমার পরিবারকে কে দেখবে?
আরেকজন বলেন, এই খবর আমার জন্য মারাত্মক হতাশার। আমি বুঝতে পারছি না আমার জীবনের কী হবে। আরেক নারী ক্ষোভের সঙ্গে বলেন, বিশ্ব এ সব কিছু তাকিয়ে তাকিয়ে দেখছে, কিছুই করছে না।
তালেবানের নিপীড়নের শিকার হতে পারেন ভয়ে এই নারীদের কেউই নিজেদের নাম প্রকাশের সাহস পাননি।
এনজিওগুলোতে এখন যদি শুধু পুরুষরা কাজ করেন তবে আফগান নারীরা সরাসরি ত্রাণ গ্রহণও করতে পারবেন না। কারণ, তালেবান অন্য একটি আইনে পুরুষদের ওপর নারীদের সঙ্গে কাজ করার উপরও নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে।
২০ বছরের বেশি সময় ধরে চলা যুদ্ধ আফগানিস্তানকে ধ্বংসস্তুপে পরিণত করেছে। বিদেশি সাহায্যের উপরই কোনোমতে টিকে ছিল দেশটির সাধারণ মানুষ। গত বছর অভ্যুত্থানের মাধ্যমে তালেবান পুনরায় দেশটির ক্ষমতা দখলের পর বিদেশি অনেক সাহায্য বন্ধ হয়ে গেছে। তার উপর তালেবানের একের পর এক বিধিনিষেধ। যেকোনো সময় সেখানে ভয়াবহ মানবিক বিপর্যয় দেখা দিতে পারে।