1. sparkleit.bd@gmail.com : K. A. Rahim Sablu : K. A. Rahim Sablu
  2. diponnews76@gmail.com : Debabrata Dipon : Debabrata Dipon
  3. admin@banglanews24ny.com : Mahmudur : Mahmudur Rahman
  4. mahmudbx@gmail.com : Monwar Chaudhury : Monwar Chaudhury
ঐতিহাসিক তেলিয়াপাড়া দিবস ৪ এপ্রিল
বৃহস্পতিবার, ০৮ জুন ২০২৩, ১২:০৫ অপরাহ্ন




ঐতিহাসিক তেলিয়াপাড়া দিবস ৪ এপ্রিল

আলাউদ্দিন আল রনি, মাধবপুর থেকে
    আপডেট : ০৩ এপ্রিল ২০২৩, ২:৪৫:৩৩ অপরাহ্ন

৪ এপ্রিল মঙ্গলবার ঐতিহাসিক তেলিয়াপাড়া দিবস। ১৯৭১ সালের এই দিনে হবিগঞ্জের মাধবপুর উপজেলার তেলিয়াপাড়া চা বাগানের ম্যানেজার বাংলোয় স্বাধীনতা যুদ্ধের প্রথম বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়েছিল। ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টের উর্ধ্বতন ২৭ সেনা কর্মকর্তাদের উপস্থিতিতে এ বৈঠকেই দেশকে স্বাধীন করার শপথ এবং যুদ্ধের রণকৌশল গ্রহন করা হয়। মুক্তিযুদ্ধের রণাঙ্গণকে ভাগ করা হয় ১১টি সেক্টর ও ৩টি বিগ্রেডে। মুক্তিযুদ্ধের সর্বাধিনায়ক এমএজি ওসমানী পিস্তলের গুলি ছুড়ে আনুষ্টানিক ভাবে মুক্তিযুদ্ধে শুভ সূচনা করেন। এখান থেকেই মুক্তিবাহিনী গঠন, মুক্তিযুদ্ধের আনুষ্টানিক সূচনা ও রাজনৈতিক সরকার গঠনের প্রস্তাব তথা মুক্তিযুদ্ধের প্রাথমিক প্রতিটি গুরুত্বর্পূন বিষয়ের প্রথম পাঠের অনুশীলন হয় এখানেই। ২৮ মার্চ থেকে ১৯ মে পর্যন্ত মুক্তিযুদ্ধ ভিত্তিক ইতিহাসের অমূল্য উপাদান সেখানে বিদ্যমান। সমরক্ষেত্র হিসাবেও এ স্থানের রয়েছে অতুলনীয় গৌরব-গাথা। ২৫ মার্চ মধ্য রাতে পাক বাহিনী কর্তক গণহত্যার প্রতিবাদে বিভিন্ন বাহিনীর বাঙ্গালী অফিসার ও সদস্যরা যার যার অবস্থান থেকে বিদ্রোহ করে শক্রুর মোকাবেলা করতে থাকে। সুসজ্জিত বিশাল পাকিস্থানী বাহিনীর বিরুদ্ধে যুদ্ধ পরিচালনা করা সহজসাধ্য ব্যাপার ছিল না। এর জন্য প্রয়োজন ছিল একটি সরকার ও কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের অধীন সম্মেলিত সামরিক প্রয়াস।

এরই আলোকে ১৯৭১ সালের ৪ঠা এপ্রিল ঐতিহাসিক তেলিয়াপাড়া চা বাগানের ম্যানেজার বাংলো ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টের উর্ধ্বতন ২৭ সেনা কর্মকর্তাদের উপস্থিতিতে এক বৈঠকেই দেশকে স্বাধীন করার শপথ এবং যুদ্ধের রণকৌশল গ্রহন করা হয়। মুক্তিযুদ্ধের রণাঙ্গণকে ভাগ করা হয় ১১টি সেক্টর ও ৩টি বিগ্রেডে।

মুক্তিযুদ্ধের সর্বাধিনায়ক এমএজি ওসমানী পিস্তলের গুলি ছুড়ে আনুষ্টানিক ভাবে মুক্তিযুদ্ধের শুভ সূচনা করেন। তেলিয়াপাড়াকে প্রথম অস্থায়ী সেনা সদর গন্য করে মুক্তিযোদ্ধ কালে মুক্তিবাহিনীর শীর্ষ পর্যায়ের নীতি-নির্ধারণী সর্বমোট ৩টি সভার মধ্যে প্রথম দুটি সভা এখানেই অনুষ্টিত হয়। ওই বৈঠকে তৎকালীন কর্ণেল অব(ঃ) এম.এ.জি উসমানী, লেঃ কর্ণেল এম.এ রব, লেঃ কর্ণেল সালাউদ্দিন মোহাম্মদ রেজা, মেজর কে.এম শফিউল্লাহ্, মেজর জিয়াউর রহমান, মেজর খালেদ মোশাররফ, মেজর নূরুজ্জামান, মেজর শাফায়াত জামিল, মেজর মঈনুল হোসেন চৌধুরী, মেজর নূরূল ইসলাম, মেজর আবু উসমান, মেজর সি.আর দত্ত, ব্রাহ্মনবাড়ীয়ার বিদ্রোহী মহকুমা প্রশাসক কাজী রকিবউদ্দিন, ভারত সরকারের প্রতিনিধি হিসাবে বিএসএফ এর পূর্বাঞ্চলীয় মহাপরিচালক ব্রিগেডিয়ার ভি,সি পান্ডে এবং আগরতলার জেলা ম্যাজিস্ট্রেট ওমেস সায়গল প্রমূখ উপস্থিত ছিলেন।

এক নম্বর সেক্টরের দায়িত্ব পেয়েছিলেন মেজর জিয়াউর রহমান পরে মেজর রফিকুল ইসলাম, দুই নম্বর সেক্টর প্রথমে খালেদ মোশাররফ পরে মেজর হায়দার, তিন নম্বর সেক্টর প্রথমে মেজর শফিউল্লাহ পরে মেজর নূরুজ্জামান, চার নম্বর সেক্টর মেজর সি আর দত্ত, পাঁচ নম্বর সেক্টর মেজর মীর শওকত আলী, ছয় নম্বর সেক্টর উইং কমান্ডার বাশার, সাত নম্বর সেক্টর মেজর কাজী নূরুজ্জামান, আট নম্বর সেক্টর প্রথমে মেজর ওসমান চৌধুরী মেজর এমএ মনছুর, নয় নম্বর সেক্টর প্রথমে মেজর আ্দুল জলিল এবং অতিরিক্ত দায়িত্ব পালন করেন এমএ মঞ্জুর, দশ নম্বর সেক্টর নৌ-বাহিনীর সৈনিকদের নিয়ে গঠন করা হয়, ১১ নম্বর সেক্টরে কমান্ডারের দায়িত্ব দেয়া হয় মেজর আবু তাহের ও পরে ফ্লাইট লেঃ এম হামিদুল্লাহকে।

এছাড়া জিয়াউর রহমানের নামানুসারে ‘জেড ফোর্স’ জিয়াউর রহমানের দায়িত্বে, মেজর কে.এম শফিউল্লাহর নাম অনুসারে ‘এস ফোর্স’ মেজর কে.এম শফিউল্লাহর দায়িত্বে এবং খালেদ মোশাররফের নাম অনুসারে অপর ব্রিগেড ‘কে ফোর্সে’র দায়িত্ব দেয়া হয় মেজর খালেদ মোশাররফের উপর। ৩নং সেক্টর কমান্ডার মেজর কে.এম শফিউল্লাহ তাঁর হেড কোয়ার্টার স্থাপন করেন তেলিয়াপাড়া চা বাগানের বাংলোতে। সড়ক ও রেলপথে বৃহত্তর সিলেটে প্রবেশের ক্ষেত্রে মাধবপুর উপজেলার তেলিয়াপাড়ার গুরুত্ব ছিল অপরিসীম। এখান থেকে মুক্তি বাহিনী বিভিন্ন অভিযান পরিচালনা করা ছাড়াও তেলিয়াপাড়া চা বাগানে মুক্তিযোদ্ধাদের একটি বড় প্রশিক্ষণ ক্যাম্প গড়ে উঠে। মুক্তিযুদ্ধের সর্বাধিনায়ক জেনারেল এমএজি ওসমানীসহ কয়েকটি সেক্টরের কমান্ডারগণ বিভিন্ন সময়ে তেলিয়াপাড়া সফর করেন। ম্যানেজার বাংলোসহ পার্শ্ববর্তী এলাকা ছিল মুক্তিযুদ্ধের সংগঠক ও সেনানায়কদের পদচারণায় মূখরিত। ১৯৭১ সালের ২১ জুনের পরে পাকিস্থান সেনাবাহিনীর প্রচন্ড আক্রমণের কারণে তেলিয়াপাড়া চা বাগানে স্থাপিত সেক্টর হেড কোয়ার্টার তুলে নেয়া হয়।

মহান স্বাধীনতা যুদ্ধের স্মৃতি বিজড়িত তেলিয়াপাড়া চা বাগান স্মৃতিসৌধ এলাকা এখন আকর্ষণীয় পিকনিক স্পটে পরিণত হয়েছে। অত্যন্ত সুন্দর ও দৃষ্টিনন্দন বুলেট আকৃতির স্মৃতিসৌধ, ম্যানেজার বাংলো ও চা বাগানের অপূর্ব নৈসর্গিক দৃশ্যকে কেন্দ্র করে এখানে গড়ে উঠেছে পিকনিক স্পট। প্রতিবছর শীত মৌসুম আসার সাথে সাথে প্রকৃতির অপরূপ সৌন্দর্য্য পিপাসুরা পিকনিক করতে ছুটে আসেন তেলিয়াপাড়া চা বাগানে। ঢাকা-সিলেট মহাসড়ক কিংবা তেলিয়াপাড়া রেলস্টেশন হতে প্রায় দুই কিলোমিটার অভ্যন্তরে ভারতীয় সীমান্ত ঘেঁষা স্থানে অবস্থিত তেলিয়াপাড়া চা বাগানের ম্যানেজার বাংলো। বাংলোর পাশে মহান স্বাধীনতা যুদ্ধের স্মৃতি ধারণ করে সগৌরবে দাঁড়িয়ে আছে বুলেট আকৃতির স্মৃতিসৌধ। মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে ম্যানেজার বাংলোর যে ভবনটিতে সেনানায়ক ও মুক্তিযুদ্ধের সংগঠকদের বৈঠক হতো সেই বাংলোটি আজও স্মৃতি ধারণ করে আছে। পিকনিকে আসা দর্শনার্থীরা স্মৃতিসৌধ এবং সেই বাংলোটির কক্ষগুলো ঘুরে ঘুরে দেখে তৃপ্ত বোধ করেন। পিকনিকে আসা লোকজন স্মৃতিসৌধের পাশে বসে, বাংলোর সামনে দাঁড়িয়ে কিংবা ফুল বাগিচায় ছবি তুলতে কখনো ভুল করেন না। মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতি বিজড়িত এই স্থানটিকে দর্শনার্থীদের জন্য আরো আকর্ষণীয় করে তুলতে রেস্ট হাউজ নির্মাণসহ সার্বিক পরিকল্পনা গ্রহণ করতে অনেক দর্শনার্থী দাবি জানিয়েছেন।

সরকারি ভাবে এ দিবসটি পালিত না হলেও প্রতি বৎসর ৪ এপ্রিল হবিগঞ্জ জেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদের আয়োজনে নানা অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়ে থাকে। সেখানে জীবিত সকল সেক্টর কমান্ডারসহ বিপুল সংখ্যক মুক্তিযোদ্ধার সমাবেশ ঘটে।

উপজেলা নিবার্হী কর্মকর্তা ও মুক্তিযোদ্ধা সংসদের দায়িত্বপ্রাপ্ত কমান্ডার মন্জুর আহ্সান জানান-মুক্তিযোদ্ধের সঙ্গে তেলিয়াপাড়ার একটি বর্ণাঢ্য ইতিহাস রয়েছে। প্রতিবৎসর ব্যাপক অনুষ্টানের আয়োজন করা হলেও পবিত্র মাহে রমজানের কারনে কিছু কাটচাট করা হয়েছে। এ বৎসর প্রশাসনের পক্ষ থেকে স্মৃতিসৌধে পুস্পস্তবক অর্পণ, আলোচনা সভা ও মুক্তিযোদ্ধাদের মিলন মেলার আয়োজন করা হয়েছে।




খবরটি এখনই ছড়িয়ে দিন

এই বিভাগের আরো সংবাদ







Copyright © Bangla News 24 NY. 2020