এমএজি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের এক নারী ইন্টার্ন চিকিৎসককে লাঞ্ছিত ও দুই শিক্ষার্থীর উপর হামলার ঘটনায় মঙ্গলবার দুটি মামলা হয়েছে। হাসপাতালের দুই শিক্ষার্থীর ওপর হামলা ও নারী ইন্টার্ন চিকিৎসকের শ্লীলতাহনির অভিযোগে ৮ জনকে আসামি করে দুটি মামলা দায়ের করা হয়েছে। মঙ্গলবার (২ আগস্ট) সিলেট কোতোয়ালি থানায় এ দুই মামলা দায়ের করা হয়।
সিলেট এমএজি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ভারপ্রাপ্ত প্রশাসনিক কর্মকর্তা মোহাম্মদ হানিফ ও সিলেট এমএজি ওসমানী মেডিকেল কলেজের পিএ-টু প্রিন্সিপাল ও সচিব (অতিরিক্ত দায়িত্ব) মাহমুদুল রশিদ বাদী হয়ে পৃথক দুটি মামলা দায়ের করেন। দুই মামলার আসামিরা হলেন- দিব্য, আব্দুল্লাহ, এহসান, মামুন, সাজন, সুজন, সামি ও সাঈদ হাসান রাব্বি।
তাদের মধ্যে নগরীর মুন্সিপাড়ার মৃত রানা আহমদের ছেলে সাঈদ হাসান রাব্বি (২৭) ও কাজলশাহ এলাকার আব্দুল হান্নানের ছেলে এহসান আহমদ (২২)-কে সোমবার দিবাগত রাতে পুলিশ গ্রেফতার করেছে। রাব্বি সিলেট মহানগরীর ৩ নং ওয়ার্ড ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক।
গ্রেফতারকৃতরা ছাড়া অন্য ৬ আসামি পূর্ণাঙ্গ ঠিকানা পুলিশের প্রাথমিক তথ্যবিবরণীতে উল্লেখ নেই। ছাড়া শিক্ষার্থীদের উপর হামলার ঘটনায় মামলার বাদি হয়েছেন কলেজ অধ্যক্ষের সচিব মো. মাহমুদুর রশিদ। এই মামলায়ও প্রধান আসামি মো. আব্দুল্লাহ। অপর আসামিরা হলেন- ৩ নম্বর ওয়ার্ড ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক মোহিদ হাসান রাব্বি, এহসান আহম্মদ, মামুন, সাজন, সুজন ও সামি। কলেজ শিক্ষার্থীদের অভিযোগ, আব্দুল্লাহর নেতৃত্বেই ইন্টার্ন চিকিৎসককে লাঞ্ছিত ও মঙ্গলবার দুই শিক্ষার্থীর উপর হামলা করা হয়। এ ব্যাপারে মো. আব্দুল্লাহ বা তার চাচা আওয়ামী লীগ নেতা আব্দুল খালিকের বক্তব্য জানা যায়নি। আব্দুল খালিক ফোন ধরেননি।
দুই মামলা দায়েরের বিষয়টি নিশ্চিত করে সিলেট কোতোয়ালি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ আলী মাহমুদ বলেন, কলেজ প্রশাসনের দায়ের করা মোহিদ হাসান রাব্বি ও এহসান আহম্মদকে গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে। বাকীদের গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে। এছাড়া হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের দায়ের করা মামলার আসামি মো. আব্দুল্লাকেও গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে।
এদিকে, এসব ঘটনার প্রতিবাদে ধর্মঘট পালন করছেন ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ইন্টার্ন চিকিৎসকরা। একই ঘটনায় ক্লাস পরীক্ষা বর্জন করেছেন মেডিকেল কলেজটির শিক্ষার্থীরা। সোমবার রাতে কলেজের দুই শিক্ষার্থীর উপর হামলার ঘটনা ঘটে। আর দায়িত্বরত অবস্থায় এক নারী ইন্টার্ন চিকিৎসক লাঞ্ছিত হন আগেরদিন। হামলার প্রতিবাদে সোমবার রাত থেকে হাসপাতালের সামনের সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ শুরু করে শিক্ষার্থীরা। পরে ধর্মঘটের ডাক দিয়ে তাদের সাথে যোগ দেন ইন্টার্ন চিকিৎসকরা।
তবে হামলার ঘটনায় রাতেই দুজনকে আটক করা ও প্রশাসনের আশ্বাসের প্রেক্ষিতে সোমবার রাত ২টার দিকে পরদিন দুপুর ২টা পর্যন্ত আন্দোলন স্থগিত করেন শিক্ষার্থী ও ইন্টার্ন চিকিৎনকরা। তবে মঙ্গলবার দুপুরে প্রশাসনের সাথে বৈঠকে সমঝোতা না হওয়ায় ধর্মঘট চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দেন ইন্টার্ন চিকিৎসকরা।
প্রশাসনের সাথে বৈঠক শেষে মঙ্গলবার বিবেল ৫টায় এ ঘোষণা দেন ইন্টার্নরা। এসময় ক্যাম্পাসে বিক্ষোভও শুরু করেন তারা। এদিকে, দাবি আদায়ে ক্লাস পরীক্ষা বর্জন করেছে মেডিক্যাল কলেজের শিক্ষার্থীরা। তবে ইন্টার্নরা ধর্মঘট ডাকলেও সেবা কার্যক্রম অব্যাহত আছে বলে জানিয়েছে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। কর্তৃপক্ষ বাদি হয়ে মঙ্গলবার সিলেট কতোয়ালি থানায় দুটি মামলা দায়ের করা হয়েছে। সোমবার রাতেই আটক করা দুজনকে মেডিক্যাল কলেজ কর্তৃপক্ষের দায়েরকৃত মামলায় গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে।
প্রশাসনের সাথে বৈঠক সমঝোতা না হওয়ার কথা জানিয়ে ওসমানী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের ইন্টার্ন চিকিৎসক পরিষদের সাধারণ সম্পাদক ডা. মতিউর রহমান বলেন, হামলাকারী সকল আসামি গ্রেপ্তার এবং শিক্ষার্থী ও ইন্টার্ন চিকিৎসকদের নিরাপত্তায় দৃশ্যমান উদ্যোগ নেয়ার পূর্ব পর্যন্ত আমরা ধর্মঘট চালিয়ে যাবো। সেবা দিতে এসে আমরা হামলা ও হয়রানির শিকার হতে রাজী নই।
দাবি পুরণ না হওয়া পর্যন্ত ক্লাস পরীক্ষা বর্জন করে আন্দোলন চালিয়ে যাওয়া হবে বলে জানিয়েছেন মেডিকেল কলেজের পঞ্চম বর্ষের শিক্ষার্থী অমিত হাসান সানিও। দুই শিক্ষার্থীর উপর হামলার প্রতিবাদে সোমবার রাত থেকে সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ শুরু করেন ওসমানী মেডিকেল কলেজের শিক্ষার্থীরা।
ঘটনার সূত্রপাত সম্পর্কে আন্দোলনকারী শিক্ষার্থী শাহ অসিম ক্যানেডি বলেন, রোববার হাসপাতালে দায়িত্বরত এক নারী ইন্টার্ন চিকিৎসকের সঙ্গে রোগীর দুই স্বজন খারাপ ব্যবহার করে। তারা ওই চিকিৎসককে লাঞ্ছিতও করে। এরপর আমরা লাঞ্চণাকারী একজনকে পুলিশের হাতে তুলে দেই। তিনি বলেন, এ ঘটনার জেরে সোমবার রাত ৮টার দিকে কলেজ ক্যাম্পাসের ভেতরে ঢুকে বহিরাগতরা আমাদের কয়েকজন শিক্ষার্থীকে মারধর করে। এতে দুজন গুরুতর আহত হন। গুরুতর আহত শিক্ষার্থী রুদ্র নাথ ও নাইমুর রহমান ইমন বর্তমানে হাসপাতালে ভর্তি আছেন। এর আগেও অনেকবার এমন ঘটনা ঘটেছে জানিয়ে ক্যানেডি বলেন, আগের ঘটনাগুলোর কোন সুরাহা হয়নি। সব ধামাচাপা দেয়া হয়েছে। তাই এই ঘটনার সুরাহা না হলে আমরা আন্দোলন চালিয়ে যাবো।
তবে প্রশাসনের আশ্বাসের প্রেক্ষিতে সোমবার মদ্যরাতে পরদিন দুপুর ২টা পর্যন্ত আন্দোলন স্থগিতের ঘোষণা দেন শিক্ষার্থীরা। নির্ধারিত সময় সীমা শেষে মঙ্গলবার বেলা আড়াইটায় কলেেেজার মিলনায়তনে কলেজ ও হাসপাতাল প্রশাসন, পুলিশ ও রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দের সাথে বৈঠকে বসেন শিক্ষার্থীরা।
বৈঠকে প্রশাসনের পক্ষ থেকে জানানো হয়, শিক্ষার্থীদের উপর হামলার ঘটনায় ইতোমধ্যে দুজনকে আটক করা হয়েছে। বাকীদের আটকের চেষ্টা চলছে। কলেজ ও হাসপাতহাল প্রশাসনের পক্ষ থেকে দুটি মামলা করা হয়েছে। এছাড়া শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তায় বিভিন্ন উদ্যোগ নেওয়ার কথা জানিয়ে প্রশাসনের কর্তারা শিক্ষার্থীদের আন্দোলন থেকে সরে আসার আহ্বান জানান। তবে ইন্টার্ন চিকিৎসক ও শিক্ষার্থীরা হামলাকারী সকলকে গ্রেপ্তারের পূর্ব পর্যন্ত আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার কথা জানিয়ে বৈঠক থেকে চলে আসেন।