করোনার নমুনা পরীক্ষা নিয়ে বিভ্রান্তি স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের ওইদিনের বুলেটিনে দেখা যায় ২৪ ঘণ্টায় শনাক্তের হার এক হাজারের বেশ নিচে। নতুন করে ৮৮৬ জনের দেহে করোনাভাইরাস শনাক্ত হয়েছে, যা আগের দিন ছিল দুই হাজার ১৯৯ জন।
আপাতদৃষ্টিতে মনে হতে পারে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ার সংখ্যা কি কমে গেল? কিন্তু আসলে নমুনা পরীক্ষার হার ঈদের ছুটির এই সময়ে ব্যাপকভাবে কমে গেছে। ২৪ ঘণ্টায় মোটে সাড়ে তিন হাজারের মতো নমুনা পরীক্ষা করা হয়েছে। যা তার ঠিক আগের দিনও ছিল আট হাজার ৮০২টি।পরীক্ষা এত কম হওয়ার কারণ কি?
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক (প্রশাসন) ডা. নাসিমা সুলতানা বলেন, অন্যতম একটি কারণ হলো ব্র্যাক আমাদের যে নমুনা সংগ্রহ করে দেয় তারা তিন দিন তাদের বুথগুলো বন্ধ রাখবে সেটি স্বাস্থ্য অধিদপ্তরকে জানিয়েছিল। ব্র্যাক ঢাকা ও চট্টগ্রামে তাদের বুথ থেকে আমাদের নমুনা সংগ্রহ করে দেয়।ডা. নাসিমা বলেন, ঢাকাতেই তো আসলে সর্বাধিক কেস। ঢাকা বিভাগেও সবচেয়ে বেশি। যেহেতু ব্র্যাক ঢাকাতে নমুনা সংগ্রহ করে দেয়, তারা যেহেতু তাদের কার্যক্রম বন্ধ রেখেছে নমুনা কম সংগ্রহ ও পরীক্ষা হয়েছে।
ব্র্যাকের করোনাভাইরাস সংক্রান্ত পরীক্ষার ওয়েবসাইটে গিয়ে দেখা যায় সেখানে লেখা রয়েছে ৩ অগাস্ট, ২০২০ সোমবার এর করোনা শনাক্তকরণ টেস্টের রেজিস্ট্রেশন বন্ধ আছে’। বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা ব্র্যাকের ওয়েবসাইটে যে ম্যাপ দেওয়া রয়েছে তাতে দেখা যাচ্ছে ঢাকায় তাদের ৩০টি বুথ রয়েছে এবং আরও চারটিতে কাজ শুরুর প্রক্রিয়া চলছে।
ডা. নাসিমা আরো বলেন, ঈদের সময় পরীক্ষা করাতে এমনিতেও মানুষজন কম এসেছেন। তিনি বলেন, বেসরকারি হাসপাতালগুলোতে সরকার নির্ধারিত সাড়ে তিন হাজার টাকা ফি দিয়ে অনেকেই পরীক্ষা করাতে অনিচ্ছা প্রকাশ করছেন। এমনিতেই সরকার ফি নির্ধারণের পর থেকে মানুষজনের মধ্যে করোনাভাইরাসের নমুনা পরীক্ষা করানোর আগ্রহ কমে গেছে।
পরীক্ষা কম হওয়ার সম্ভাব্য প্রভাব অথচ বাংলাদেশে ২৪ ঘণ্টায় ১৮ হাজারের বেশি নমুনা পরীক্ষাও হয়েছে। বাংলাদেশে ঈদের সময় সাধারণত স্বাস্থ্যসেবা সীমিত পরিসরে চলে। ঈদের সময় আন্তঃজেলা যাতায়াত বেশি হওয়ায় সংক্রমণের সম্ভাবনা বৃদ্ধি পাওয়ার আশঙ্কা প্রকাশ করেছিলেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী নিজেই। ঈদের আগে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর থেকে জানানো হয়েছিল করোনাভাইরাস সংক্রান্ত সকল কার্যক্রম একইভাবে চালু থাকবে। কিন্তু সেটি বাস্তবে ঘটেনি।
জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ ডা. লেলিন চৌধুরী বলেন, ঈদের সময় বরং আরো বেশি নমুনা পরীক্ষা হওয়া উচিত।তিনি বলেন, যখন ঝুঁকিটা বেড়ে যায়, তখন আমাদের দায়িত্ব পরীক্ষার সংখ্যা বাড়িয়ে দেওয়া। কয়েকদিন নমুনা পরীক্ষা কম হলে যারা আক্রান্ত হয়েছেন তারা রোগ ছড়াবে কারণ তারা স্বাভাবিক মেলামেশা বজায় রাখবে। একইসঙ্গে কত লোকের মধ্যে রোগ ছড়াচ্ছে, কয়েকদিন পর কত লোক সংক্রমিত হতে পারে তার বিজ্ঞানভিত্তিক ধারণাটি আমরা করতে পারব না।
ডা. লেলিন চৌধুরী আরো বলেন, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার গাইডলাইন হল যত বেশি পরীক্ষা করা যায় তত বেশি রোগী শনাক্ত করা যায়, তার চিকিৎসা এবং সে কাদের সংস্পর্শে এসেছিল সেটি জানা সহজ হয়। এতে করোনাভাইরাসের বিস্তৃতি ঠেকানোর জন্য পরিকল্পনাও করা যায়।তিনি বলেন, বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের বুথ বন্ধ থাকবে এমন তথ্য সরকারের যদি আগে থেকে জানা থাকে তাহলে উচিত ছিল বাড়তি ব্যবস্থার জন্য প্রস্তুতি নেওয়া।