ও ভাই, কতো সময় পরে পরে মাইনষে আইয়া খালি ছবি তোলে। আপনারা ছবি তুলিয়া আমরার ফায়দা কিতা ভাই ? ছবি তুলিয়া লাভ নাই, পাড়লে খানি দেউক্কা’। কথাগুলো বলছিলেন বেবী আক্তার। বাসা নগরীর ১৪ নং ওয়ার্ডের কামালগড় এলাকায়। স্বামীসহ তিন সন্তান নিয়ে ১৭ জুন থেকে আছেন নগরীর চালিবন্দরস্থ বিশিকা স্কুলের আশ্রয় কেন্দ্রে। বৃহস্পতিবার (২৩ জুন) আশ্রয়কেন্দ্র সরেজমিন পরিদর্শনে গিয়ে ছবি তোলতে গেলে এভাবেই প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেন প্রতিবেদকের কাছে।
বেবী আক্তারের সাথে সুর মিলিয়ে একই কথা নূর মিয়ার। নুর মিয়া জানান, ‘প্রায় এক সপ্তাহ হলো, বিশিকা স্কুলের আশ্রয় কেন্দ্রে আছি। এর মধ্যে একদিন দু/তিনটি সংগঠন থেকে খাবার বিতরণ করা হলেও অন্য দিন আর কেউ আসে না। আবার যারা আসেন, তারা খাবার দিচ্ছেন পরিবার প্রতি। কিন্তু আমাদের এখানে প্রায় ৭০/৮০ টি পরিবারের লোক রয়েছেন প্রায় চারশো’র উপরে। কিন্তু পরিবার প্রতি যে খাবার দেওয়া হয়, তা দিয়ে তো সবাই ভাগ করে খেতে পারছি না।’ যারা খাবার দিচ্ছেন তবুও তাদের প্রতি কৃতজ্ঞতা নুর মিয়ার।
নগরীর চালিবন্দর এলাকায় আশ্রয়কেন্দ্র রয়েছে দুটি। একটি হচ্ছে রামকৃষ্ণ উচ্চ বিদ্যালয় এবং অপরটি বসন্ত মেমোরিয়াল স্কুল (বিশিকা)। দুটি আশ্রয় কেন্দ্রে যারা আশ্রয় নিয়েছেন, তাদের সকলেই ১৪ ও ১৫ নং ওয়ার্ডের বাসিন্দা। আশ্রয় কেন্দ্রের সামনে এখনও শুকিয়ে যায়নি বন্যার চাপ। অল্প পানি থাকায় শুকিয়ে বের হচ্ছে দুর্গন্ধ। তার উপর স্কুল ঘর থাকায় চুলো জ্বালানোর সুযোগ নেই অনেকেরই। ফলে আশ্রয়কেন্দ্রে থাকা লোকজনের দৃষ্টি কেবল মানুষের সহযোগীতার দিকে।
রামকৃষ্ণ উচ্চ বালিকা বিদ্যালয়ের আশ্রয়কেন্দ্রে থাকা ফারুক মিয়া বলেন, কেউ কেউ সহযোগীতা হিসেবে রান্না করা খাবার নিয়ে আসেন। আর যারা শুকনা খাবার আনেন, তা দিয়ে কোনো রকমে একটি চুলোয় রান্না করে নিতে সকলের হুড়োহুড়ি পড়ে যায়। বাধ্য হয়ে অনেককেই হোটেলে খাবার খেতে হচ্ছে।
সরকারি সহযোগীতা কি পেয়েছেন-এমন প্রশ্নের জবাবে রামকৃষ্ণ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় আশ্রয় কেন্দ্রে সালমা বেগম জানান.‘কোনডা সরকারের, আর কোনডা বেসরকারের-হেইগুলি আমরা কইতে পারুম না। কেউ নিয়ে আইলে হেইডা দ্যাহি’।
তবে খাবার না পাওয়ার অভিযোগ মানছেন না ১৪ নং ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট বিজয় কুমার দেব বুলু। তিনি বলেন, সরকারি সহযোগীতার পাশাপাশি প্রতিদিনই স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের লোকজন বিভিন্ন সহযোগীতা নিয়ে আসছেন। বারিষ্টার সুমনও এসেছেন এই তিনটি আশ্রয় কেন্দ্রে। তাছাড়া সিলেট মহানগর আওয়ামী লীগের উদ্যোগেও আশ্রয়কেন্দ্র তিনটিকে খাবার বিতরণ করা হয়েছে। তিনি বলেন, আমি প্রতিদিনই আশ্রয়কেন্দ্র তিনটির খোঁজ রাখছি। তাদের সাথে কথা বলারও চেষ্টা করি প্রতিদিন।