ছাতকে সবুজের মাঠে বেগুনি রঙের ধান চাষ করে সাড়া জাগিয়েছেন এক কৃষক। মাঠে সবুজের সাথে পাল্লা দিয়ে তার নতুন এ জাতের ধান বেড়ে উঠছে। আকর্ষণীয় বেগুনি রঙের ধান গাছ সবার দৃষ্টি কাড়ছে। এ ধানের জাত হচ্ছে ‘দুলালী সুন্দরী’ ধান।
মাঠের মধ্যে মাত্র এক বিঘা জমিতে এ বেগুনি রঙের ধান চাষ করে কৃষকদের নজর কাড়তে সক্ষম হয়েছেন আজির উদ্দিন। নতুন জাতের ধান দেখতে প্রতিদিন ভিড় করছেন এলাকার কৃষকসহ বিভিন্ন পেশার লোকজন। দুলালী সুন্দরী জাতের ধান সুনামগঞ্জের ছাতক উপজেলার খুরমা দক্ষিণ ইউনিয়নের চৌকা গ্রামের মাঠে চাষাবাদ করা হয়েছে। এ ধান চাষ করেছেন চৌকা গ্রামের বাসিন্দা অবসরপ্রাপ্ত চাকরিজীবী আজির উদ্দিন। গত বোরো মৌসুমে তিনি ১০ শতক জমিতে এ জাতের ধান চাষাবাদ করেছিলেন। এতে তিনি আশানুরূপ ফলনও পেয়েছেন।
উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা যায়, গাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জ উপজেলার ভবানীপুর গ্রামের মৃত কৃষক সুরুজ্জামানের স্ত্রী দুলালী বেগম। তিনি রামজীবন ইউনিয়নের আইপিএম কৃষক ক্লাবের নারী সদস্য। দুলালীর স্বামী মারা যাওয়ার পর নিজের সংসারের হাল ধরতে দুমুঠো ভাতের জন্য নিজের জমিতে চাষাবাদ শুরু করেন তিনি। ২০১৭ সালে ব্রি-২৮ জাতের ধান চাষ করেন। এ জাতের মধ্যে জমিতে ১৫/২০টি গোছায় বেগুনি পাতার ধান গাছ দেখতে পান। ধানের ভিন্নতা দেখে কৌতুহলবশত ধান পাকার পর এ বেগুনি গাছের ধান আলাদাভাবে সংগ্রহ করে বীজ সংরক্ষণ করেন। সংগ্রহ করে রাখা ধান বীজ থেকে পরের বছর ১৮ শতাংশ জমিতে তিনি ওই ধানের চাষাবাদ করেন।
দুলালীর ব্যতিক্রমী এ ধান চাষ দেশে চমক সৃষ্টি হয়। সাধারণ জাতের ধানের চেয়ে বেগুনি পাতার ধানের একটি ছড়ায় কুশির সংখ্যাও বেশি। ধানের ফলনও ভাল হয়। এ ধান আমন ও বোরো মৌসুমে রোপণ করা যায়। তবে বোরো মৌসুমে ফলন সবচেয়ে ভালো হয়। এ জাতের ধানের গোছা প্রতি ২৫-৩০ টি কুশি হয়। প্রতিটি কুশির শীষে ১৬০ হতে ৩১৩টি পর্যন্ত ধান পাওয়া যায়। বোরো মৌসুমে ১৪০ দিনে ধান কর্তন করা যায়। প্রতি বিঘা জমিতে ২৫ মন ধান উৎপাদন সম্ভব। ধান গবেষণাগারে পরীক্ষা-নিরীক্ষা চলছে। কৃষাণীর নাম দুলালী বেগম ও উপজেলার নাম সুন্দরগঞ্জ হওয়ায় এ ধানের নাম দেয়া হয়েছে ‘দুলালী সুন্দরী’।
চাষি আজির উদ্দিন জানান, নিজ উদ্যোগেই গাইবান্ধা থেকে বীজ সংগ্রহ করেছেন তিনি। প্রতিদিন তার ক্ষেত দেখতে কৃষকরা আসেন। তারা তার কাছ থেকে পরামর্শও নেন। কেউ কেউ ধানের গোছা তুলে নিয়ে যায়। ক্ষেত রক্ষা করা কঠিন হয়ে পড়েছে।
উপজেলা উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা নাসির উদ্দিন জানান, দুলালী সুন্দরী জাতের ধান প্রথমবারের মতো গত মৌসুমে ১০ শতক জমিতে চাষ করেছিলেন কৃষক আজির উদ্দিন। তার জমিতে ভাল ফলন ও হয়েছিল। এ বছর তিনি ১ বিঘা জমিতে চাষ করেছেন। বর্তমানে তিনি বীজ ও সংগ্রহ করবেন। এ ধান দেখতে বেগুনি হওয়ায় কৃষকরা ও ধান ক্ষেত করতে আগ্রহ দেখাচ্ছেন। এ ধান চাষে কৃষকদের বিভিন্ন সময়ে পরামর্শ ও দেয়া হচ্ছে।
ছাতক উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা তৌফিক হোসেন খান জানান, ধানের জীবনকাল অন্যান্য উপশি ধানের মতোই। আবহাওয়া ভাল থাকলে এ জাতের ধানের ফলন ও ভালো হবে।