মৌলভীবাজার জেলা পরিষদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের সম্ভাব্য প্রার্থীরা দলীয় মনোনয়ন পেতে চালাচ্ছেন জোর তৎপরতা। কেন্দ্রের সঙ্গে লবিং করছেন নানাভাবে। দলীয় মনোনয়ন পাওয়া না পাওয়াকে অনেকাংশে নির্বাচনে জয়-পরাজয় নির্ধারক মনে করছেন ক্ষমতাসীন দলের সম্ভাব্য প্রার্থীরা। অপরদিকে বিএনপি থেকে দু-একজন প্রার্থীর আগ্রহ থাকলেও প্রকাশ্যে তৎপরতা নেই। তারা অপেক্ষায় আছেন কেন্দ্রীয় সিদ্ধান্তের। বাকি দলগুলোর প্রার্থীর কোনো খবর নেই।
এদিকে এ নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে আওয়ামী লীগ থেকে কয়েকজন প্রার্থীর নাম শোনা গেলেও তফসিল ঘোষণার আগে থেকেই প্রচারণা চালিয়ে আলোচনায় এসেছে একাধিক প্রার্থীর নাম।
অপরদিকে গত ১৮ আগস্ট করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন মৌলভীবাজার জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান বীর মুক্তিযোদ্ধা আজিজুর রহমান। তার মৃত্যুতে শূন্য হয়ে পড়েছে মৌলভীবাজার জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান পদ। আগামী ২০ অক্টোবর এই পদে উপনির্বাচনের তারিখ নির্ধারণ করে তফসিল ঘোষণা করেছে নির্বাচন কমিশন।
এদিকে তফসিল ঘোষণার আগে থেকেই স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতারা চেয়ারম্যান পদে উপনির্বাচনে লড়তে জোর লবিং শুরু করেছেন। নির্বাচনের তারিখ ঘোষণার সঙ্গে সঙ্গে প্রকাশ্যে আসতে শুরু করেছেন অনেকেই। জেলার শীর্ষ পর্যায় থেকে কেন্দ্র পর্যন্ত লবিং করে যাচ্ছেন মনোনয়ন প্রত্যাশীরা।
বিভিন্ন সূত্রে জানা গেছে, ইতোমধ্যে সম্ভাব্য প্রার্থীদের আমলনামা বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থাসহ দলের নিজস্ব উইংয়ের মাধ্যমে আওয়ামী লীগ সভানেত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার হাতে পৌঁছেছে। দুর্নীতিবাজ ও বিতর্কিতরা মনোনয়ন পাবেন না- এটা দলের নীতিগত সিদ্ধান্ত। অন্যদিকে তৃণমূলের দাবিও ক্লিন ইমেজের প্রার্থী।
জেলার প্রবীণ আওয়ামী লীগ নেতা মো. আপ্পান আলী বলেন, আজিজুর রহমানের বিকল্প আমরা পাব না, তবে আজিজুর রহমানকে আদর্শ মেনে কেউ এই পদের জন্য যদি নির্বাচন করে আমরা তাকে সাহায্য করব।
দলীয় সূত্রে জানা যায়, উপনির্বাচনে প্রার্থী হতে ইতোমধ্যে লবিং শুরু করেছেন প্রায় হাফ ডজন আওয়ামী লীগ নেতা। প্রকাশ্যে এ নিয়ে অনেকে কথা না বললেও তারা ঢাকা কেন্দ্রিক জোর লবিং চালাচ্ছেন। তবে মনোনয়ন পাওয়ার ক্ষেত্রে মূল প্রতিদ্বন্দ্বিতা হবে জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মিছবাহুর রহমান , সাবেক মন্ত্রী সৈয়দ মহসিন আলীর স্ত্রী সাবেক এমপি সৈয়দা সায়রা মহসিন এবং প্রয়াত আজিজুর রহমানের ভাতিজা জেলা যুবলীগের সভাপতি নাহিদ আহমদের মধ্যে। স্থানীয় রাজনীতিতে এই তিনজনের দীর্ঘদিনের একটি অবস্থান আছে। মিছবাহুর রহমান দলীয় সাধারণ সম্পাদক হওয়ায় এগিয়ে আছেন। অন্যদিকে জেলা আওয়ামী লীগের নিবেদিত প্রাণ ছিলেন সৈয়দ মহসিন আলী। তার অনুসারীদের দাবি- সায়রা মহসিনকে মনোনয়ন দেয়া হোক।
তবে নেত্রীর সিদ্ধান্তকে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হিসেবে মেনে নেবেন জানিয়ে সৈয়দা সায়রা মহসিন বলেন, সৈয়দ মহসিন আলী সারাজীবন মানুষের জন্য কাজ করেছেন। আমিও সেই আদর্শ লালন করি। নেত্রী আমাকে সুযোগ দিলে মানুষের জন্য কাজ করে যাব।
অন্যদিকে আজিজুর রহমানের ভাতিজা জেলা যুবলীগের সভাপতি নাহিদ আহমদ পরিবারের মনোনীত প্রার্থী হিসেবে এগিয়ে আছেন। সদ্য প্রয়াত আজিজুর রহমানের প্রতি যে আবেগ তৃণমূল থেকে কেন্দ্রে রয়েছে তা নাহিদকে প্রার্থী হতে বড় ভূমিকা রাখতে পারে।
মৌলভীবাজারে আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে বটবৃক্ষ ছিলেন আজিজুর রহমান। দলীয় সভানেত্রীর কাছেও একজন সৎ ও অভিজ্ঞ নেতা হিসেবে গ্রহণযোগ্যতা ছিল তার। তিনি চিরকুমার থাকায় তার নিজের কোনো ছেলে-মেয়ে নেই। তার আপন ভাতিজা জেলা যুবলীগের সভাপতি ক্লিন ইমেজের নেতা হিসেবে পরিচিত নাহিদ আহমদ। আজিজুর রহমানের উত্তরসূরি হিসেবে তার পরিবার থেকে মনোনয়ন চাইবেন নাহিদ আহমদ।
এ বিষয়ে নাহিদ আহমদ বলেন, চাচার হাত ধরেই রাজনীতিতে আসা। চাচা যে আদর্শের ছিলেন সেটাই আমাদের শিখিয়েছেন। আমি চাচার অসম্পূর্ণ কাজ শেষ করতে চাই।
মনোনয়ন দৌড়ে অংশ নিয়েছেন কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের ধর্মবিষয়ক উপকমিটির সদস্য সুয়েল আহমেদ। তিনিও লবিং করে যাচ্ছেন। করোনা সঙ্কটে তিনি সাধারণ মানুষের জন্য কাজ করেছেন এটি তার জন্য পজিটিভ মনে করছেন।
সুয়েল আহমদ বলেন, বঙ্গবন্ধুর আদর্শ বুকে রেখে আমি নীরবে দলের জন্য কাজ করে যাচ্ছি। এতে চাওয়া-পাওয়ার কিছু নেই। যদি নেত্রী মনে করেন আমি যোগ্য তাহলে সাধারণ মানুষের জন্য কাজ করে যাব।
মনোয়ন পাওয়ার ব্যাপারে আশাবাদী জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মিছবাহুর রহমান। তিনি বলেন, আমি মনোনয়ন চাইবো। বাকিটা নেত্রীর সিদ্ধান্ত। আমাদের নেত্রী যাকে প্রার্থী করবেন তার পক্ষেই কাজ করে যাব। দলীয় সিদ্ধান্তের বাইরে যাওয়ার কোনো সুযোগ নেই।
এদিকে আওয়ামী লীগে যখন প্রার্থীদের জট তখন উল্টো চিত্র বিরোধী শিবিরে। ঐক্যফ্রন্ট অনেকটা অস্তিত্ব সঙ্কটে। বিএনপি এখনও দলীয়ভাবে এই নির্বাচনে অংশ নেবে কি-না তা নিশ্চিত নয়। পূর্বের নির্বাচনের অভিজ্ঞতা থেকে বর্তমান পরিস্থিতিতে প্রার্থী হওয়া অনেকটা রিস্কি মনে করছেন নেতারা। কেউ প্রকাশ্যে এ নিয়ে কথাও বলছেন না। সবাই তাকিয়ে আছেন দলীয় সিদ্ধান্তের দিকে। নেই প্রার্থী হওয়ার তোড়জোড়।
এ বিষয়ে জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক মিজানুর রহমান মিজান বলেন, আমরা দলীয়ভাবে আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নেব। এর আগে কিছু বলা যাচ্ছে না।
এদিকে বিএনপির বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাকর্মীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, দলের বড় একটি অংশ নির্বাচনে অংশ নেয়ার পক্ষে। খালি মাঠে আওয়ামী লীগকে ছেড়ে দিতে রাজি নয় তারা। এই ক্ষেত্রে প্রার্থী হতে পারেন ক্লিন ইমেজের নেতা জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক মিজানুর রহমান মিজান। সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান হওয়ায় এবং দলীয় গন্ডির বাইরেও সাধারণ মানুষের কাছে ক্লিন ইমেজের কারণে মিজান শক্ত প্রার্থী হতে পারেন বলে তাদের দাবি।
তবে উপনির্বাচনে প্রার্থী হওয়ার বিষয়টি নাকচ করে দিয়ে মিজানুর রহমান মিজান বলেন, আমাকে অনেকেই বলেছেন প্রার্থী হতে। তবে এই পদে নির্বাচনের জন্য আমি ভাবছি না। এটা তাদেরকে জানিয়ে দিয়েছি