সুনামগঞ্জের ধর্মপাশা ও মধ্যনগর হাওররক্ষা বাঁধের কাজে এখনও গঠন করা হয়নি প্রকল্প বাস্তবায়ন কমিটি (পিআইসি)। বাঁধের কাজ শুরুর নির্ধারিত সময় সীমা পেরিয়ে গেলেও শুরু হয়নি কাজ। অচিরেই শুরু হবে এমন কোন আলামতও চোখে পড়ছে না। এ নিয়ে ঘোর অনিশ্চয়তার মধ্যে আছেন কৃষকরা। হাওররক্ষা বাঁধের কাজ নিয়ে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের টালবাহানা হাওরপাড়ের কৃষকসহ সচেতন মানুষের মাঝে চরম অসন্তোষ ও শঙ্কার জন্ম দিয়েছে।
হাওররক্ষা বাঁধের কাজের প্রকল্প বাস্তবায়ন কমিটি গঠন নীতিমালা অনুযায়ী ৩০ নভেম্বরের মধ্যে পিআইসি গঠন করে ১৫ ডিসেম্বরের মধ্যে কাজ শুরু ও ২৮ ফেব্রুয়ারির মধ্যে তা সমাপ্তির কথা। নির্ধারিত সময়ের প্রায় দেড় মাস অতিবাহিত হলেও এখন পর্যন্ত গঠন করা হয়নি প্রকল্প বাস্তবায়ন কমিটি (পিআইসি)। এজন্য দুশ্চিন্তায় আছেন হাওরপাড়ের মানুষ।
কৃষক ও হাওর বাঁচাও আন্দোলনের নেতারা জানিয়েছেন, গেল বর্ষার উপর্যুপরি বন্যায় ক্ষেত লাগানো এমনিতেই পিছিয়ে পড়েছে। সময়মতো বীজতলা প্রস্তুত না হওয়ায় অঙ্কুরিত ধান বাইন করা সম্ভব হয়নি। ফলে ধানের চারা উপড়ানোর উপযোগী না হওয়ায় রোপণ করতে দেরি হচ্ছে। এতে করে ফসল উত্তোলনও অনেকটা পিছিয়ে পড়বে। একদিকে ফসল উৎপাদন পিছিয়ে পড়ার ভয়, আর আরেকদিকে আগাম বন্যার প্রবল সম্ভাবনা তো আছেই।
তারা আরও জানিয়েছেন, ২০১৭ সালের প্রলয়ঙ্করী হাওর বিপর্যয়ের পর টানা তিন বছর প্রকৃতি অনুকূলে ছিল। দুই/তিন বছর পর পর হাওরে চরম বিপর্যয় নেমে আসে। হাওরপাড়ের মানুষ বার বার এমনটাই দেখে আসছেন। সেদিক থেকে এ বছর প্রকৃতি প্রতিকূলে থাকার সম্ভাবনাই বেশি। সব মিলিয়ে কৃষকের চিন্তার শেষ নেই। এর মাঝে সময়মতো বাঁধের কাজ শুরু না হওয়াটা আরও বেশি ঝুঁকির জানিয়ে ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছেন হাওরপাড়ের অগণিত মানুষ।
সুখাইড় রাজাপুর ইউনিয়নের রাজাপুর গ্রামের কৃষক আব্দুল হাই বলেন, ‘হাওরে এখনও বাঁধের কাজের খবর নাই। তাড়াতাড়ি কাজ শুরু না হইলে চৈত্র মাসে গোলা (পানি) আইসা হাওর তলাইয়া যাইব। এর লাগি আমরা খুব চিন্তিত। ফসল ফলাইয়া তা পানিত ডুইব্বা গেলে এই কষ্ট কে দেখব?’
চামরদানী ইউনিয়নের চামরদানী গ্রামের কৃষক মো. রফিকুল মিয়া বলেন, ‘সময়মতো কাজ না হইলে কৃষকের কষ্ট সব বিফলে যাইব। এখনই কাজ করার সময়। কিন্তু পিআইসিই গঠন হইছে না, তা হইলে কাজ শুরু হইব কোনদিন? কোনদিন কাজ হইব, আর কোনদিন শেষ হইব- এইডা হেরাই কইতে পারব। কৃষকের কপালে দুর্দশা নাইম্যা আইলে কাজ কইরা কিতা হইব?’
গুরাডুবা হাওরপাড়ের কৃষক সিরাজ মিয়া বলেন, ‘হাওররক্ষা বাঁধের কাজ সময়মতো শুরু না হওয়াটা আসলেই উদ্বেগজনক। এমনিতেই কৃষকের ভাগ্য সারাক্ষণ অনিশ্চয়তার মধ্যে থাকে। এর মাঝে যদি সময়মতো কাজ শুরু না হয়, তাহলে অনিশ্চয়তা আরও বেড়ে যায়। পানি এসে হাওর যদি ডুবেই যায়, তাহলে কাজ করে লাভ কী?’
উপজেলা হাওর বাঁচাও আন্দোলনের আহবায়ক বীর মুক্তিযোদ্ধা সুলতান তালুকদার বলেন, ‘হাওররক্ষা বাঁধ দ্রুত সম্পন্ন করার জন্য আমরা মানববন্ধন করেছি। নির্ধারিত সময় পেরিয়ে গেলেও , কিন্তু কাজ শুরুর খবর নেই। বন্যার কারণে এমনিতেই ক্ষেত লাগানো পিছিয়ে পড়েছে। এর মধ্যে অকাল বন্যা দেখা দিতে পারে। যদি ২০১৭ সালের মতো পাহাড়ি ঢল নেমে আসে তখন হাওর রক্ষা করবে কে?’
সুনামগঞ্জ জেলার পাউবোর সহকারী প্রকৌশলী ও উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কমিটির সদস্য সচিব জাহাঙ্গীর আলম বলেন, হাওর থেকে দেরিতে পানি না নামায় জরিপ ও পর্যবেক্ষক তৈরি কাজসহ অন্যান্য কাজ সময়মতো শেষ না হওয়ায় পিআইসি কমিটি গঠন করা সম্ভব হচ্ছে না।তবে আগামী ১০ ডিসেম্বরের মধ্যে যাবতীয় কাজ শেষ করে পিআইসি কমিটি গঠন কার্যক্রম শেষ করা সম্ভব হবে বলে আশা করছি।
এ বিষয়ে ধর্মপাশা উপজেলার ভারপ্রাপ্ত নির্বাহী কর্মকর্তা ও প্রকল্প বাস্তবায়ন কমিটির সভাপতি মো. অলিদুজ্জামান, মধ্যনগর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. নাহিদ হাসান খান বলেন, হাওর থেকে পানি দেরিতে নামার কারনে পিআইসি কমিটি গঠন করা যায়নি। তবে দ্রুতই পিআইসি গঠন করা হবে । আমাদের সব প্রস্তুতি সম্পন্ন হয়ে গেছে।’