1. sparkleit.bd@gmail.com : K. A. Rahim Sablu : K. A. Rahim Sablu
  2. diponnews76@gmail.com : Debabrata Dipon : Debabrata Dipon
  3. admin@banglanews24ny.com : Mahmudur : Mahmudur Rahman
  4. mahmudbx@gmail.com : Monwar Chaudhury : Monwar Chaudhury
“নদী বাচঁলে, মানুষ বাচঁবে”
শুক্রবার, ৩১ মার্চ ২০২৩, ০৫:৪৮ পূর্বাহ্ন




“নদী বাচঁলে, মানুষ বাচঁবে”

গিয়াস আহমদ
    আপডেট : ২৫ অক্টোবর ২০২২, ১০:৪৩:৩৬ অপরাহ্ন

বাংলাদেশের উত্তর পূর্বাঞ্চলের একেবারে উত্তর পূর্ব কর্ণারে অবস্থিত বৃহত্তর জৈন্তিয়ার কোম্পানীগঞ্জ গোয়াইনঘাট জৈন্তাপুর ও কানাইঘাট উপজেলা, ভারতের মেঘালয় রাজ্যে পৃথিবীর সবচেয়ে বৃষ্টি বহুল পাহাড়ি স্থান, বৃহত্তর জৈন্তিয়া চেরাপুঞ্জি পাদদেশে হওয়ায় বর্ষাকালে চেরাপুঞ্জিতে অধিক বৃষ্টিপাত হলেই উজান থেকে নেমে আসা তীব্র পাহাড়ি ঢলে সমগ্র জনপদকে মুহুর্তের মধ্যেই প্লাবিত করে ফেলে। এতে করে ফসল হানি, ঘরবাড়ি বিনষ্ট, গবাদিপশুর প্রাণহানিসহ মৎস্য খামার গুলি ভাসিয়ে নিয়ে যাওয়া এখন নিত্য নৈমিত্তিক বিষয়।

চলতি বছরে জুনে দেশ বিদেশের সকল মানুষই অবলােকন করেছেন, সর্বনাসা প্রলয়ংকারী বন্যার তান্ডব লীলা। বন্যা সমস্যার এতো তীব্রতার কারণ কি? বিভিন্ন গবেষণায় দেখা যায়-দেশের স্বাধীনতা উত্তর ৭২/৭৫ সাল পর্যন্ত বর্ণিত নদীগুলি স্রোতোশীনি ছিলো বিধায় সেখানে প্রধান ফসল ধানের বাম্পার উৎপাদন হতো, প্রাকৃতিক জলাশয়ে মিঠা পানির প্রচুর মাছ পাওয়া যেত, প্রাকৃতিক বনাঞ্চল হওয়ার কারণে প্রাকৃতিক বনাঞ্চল সমৃদ্ধ হওয়ায় বর্ষা শুকনো মৌসুমে প্রচুর প্রাকৃতিক ঘাস থাকায় সেখানে প্রচুর পরিমাণে গবাদি পশু লালন পালন হতো। যার ফলে জৈন্তিয়ার ঘি, দুধ,মাটার সুখ্যাতি এখনও লোকমুখে শোনা যায়। কিন্তু অত্যন্ত পরিতাপের বিষয় হলো বছরের পর বছর স্রোতোশীনি নদীগুলোসহ খাল বিল হাওর জলাশয়ে পলি/বালি পড়ে ক্রমশ নদীগুলো ও অন্যান্য তলদেশ ভরাট হয়ে যাওয়ায় পিয়াইন নদী মৃতপ্রায় এবং সারি সুরমা গোয়াইন নদী আধামরা হয়ে বয়ে চলেছে। এখানেই সমস্যার সৃষ্টি।

একবিংশ শতাব্দীতে এসে দেখা যায় যে, সমস্যাটি ৫০ বছর পূর্ব থেকে অল্প পরিমাণে শুরু হলে ও আজ তা মহাকার ধারন করেছে এবং বিবৃত সময়ে সমৃদ্ধ জৈন্তিয়া প্রতি বছর পাহাড়ি ঢলে সৃষ্ট বন্যায় বারংবার আক্রান্ত হয়ে ফসল, ঘরবাড়ি, মৎস্য সম্পদ, গবাদি পশু হারাতে হারাতে আজ শশ্বানে পরিনত হয়েছে। এবারের কয়েক দফা প্রলয়ংকারী বন্যায় মানুষ দিশেহারা হয়ে পড়ে, কৃতজ্ঞতার সাথে ধন্যবাদ জানাই সরকার, সামাজিক সংগঠন, সমাজের বিত্তশালী মানুষ, জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল জাসদ সিলেট জেলা ও মহানগর শাখা সহ অন্যান্য রাজনৈতিক দল সমূহ বানভাসি মানুষের পাশে দাড়িয়েছিল। রাতারগুল জলাধর বনটিতো সেই গোয়াইন নদীর তীরেই অবস্থিত। এ রকম কতই জলাধার বন ছিল সমগ্র জৈন্তিয়া । জুড়ে সেখানে বাস করত বানর সহ বহু প্রজাতির প্রাণী ও পাখি। রাতারগুল ছাড়া বর্তমানে আরও ২টি জলাধার বন দেখা যায় গোয়াইনঘাট উপজেলার নন্দিরগাঁও ইউনিয়নের সালুটিকর বাজার সংলগ্ন দামারি ও বৌলা বিলের পাড়ে এবং অপরটি একই উপজেলার তোয়াকুল ইউনিয়নের বালিধার নদী থেকে শুরু হয়ে ফুলতৈলছগাম, কামারগ্রাম, লাকিগ্রামের পশ্চিম দিকে বিশাল জলাধার বন রয়েছে। যাহা অনেকটাই লোক চক্ষুর আড়ালে অবস্থিত হওয়ায় মিডিয়াতে আসছে না। এ রকম অনেক জলাধার বন, নলখাগড়া, ছন, শীতল পাটির কাঁচামাল মুড়তা, জালিবেত, দুবড়ীবন সহ কত প্রজাতির উদ্ভিদ আজ বিপন্ন প্রায় শুকনো মৌসুমে নদী, হাওড়-বাওড়, খাল বিল এবং ঝিলে পানি থাকায় শিকড় দিয়ে পানি সংগ্রহ করতে না পেরে ফাল্গুন-চৈত্র মাসে উদ্ভিদগুলো মরে যায়।

ফলশ্রুতিতে রাখাল বালকরা মনের আনন্দ করতে গিয়ে সিগারেটের আগুন দিয়ে মৃত বনে আগুন ধরিয়ে দিলে বন মহাল পুড়ে ছারখার হয়ে যায়। তা যেন দেখার কেউ নেই ? কারও কোন দায় নেই ? এভাবেই বন জঙ্গল পশুখাদ্য বিলুপ্ত হওয়ায় এককালের সমৃদ্ধ জৈন্তিয়ায় প্রচুর পরিমাণ গবাদি পশু থাকলেও আজ তা গল্প মাত্র। বর্তমানে কৃষি কাজে গরু দিয়ে হালচাষ হাস্যকর। কৃত্রিম লাঙ্গল দিয়ে চলছে চাষাবাদ। একই পদ্ধতিতে প্রাকৃতিক জলাশয়ে মাছ আজ বিলুপ্ত প্রায়। মৎস্য খরার জন্য নদীতে পানিপ্রবাহ কমে যাওয়ার সাথে যুক্ত হয়েছে অসাধু মৎস্যজীবিদের জলাশয়ে ভয়াবহ বিষ প্রয়োগের মাধ্যমে মাছ ধরা, পোনা মাছে জাল দিয়ে মৎস্য প্রজনন কাল থেকে প্রায় সারা বছরই পোনা মাছ নিধন। ফেসবুর্মা এভাবেই পানির উপর নির্ভরশীল প্রানী, উদ্ভিদ, পশুপাখির বিলুপ্তি ঘটেছে।

বৃহত্তর জৈন্তিয়া বছরের পর বছর যেমন বর্ষাকালে ভয়াবহ পাহাড়ি ঢলের শিকার হয় তেমনি শীতকালে পানির অভাবে মরুভূমিতে পরিনত হওয়ায় তা আজ সত্যিই শশানে পরিনত হয়েছে যা কেবলমাত্র ভুক্তভােগী ছাড়া অন্য কেউই উপলব্দি করতে পারবে না। জৈন্তিয়াকে বাঁচাতে হলে ত্রান নয়, সকলের জানা ঐ কঠিন সমস্যার সমাধানে প্রকৃত উদ্যোগ গ্রহণ, নদীগুলাের ক্যাপিটাল ড্রেজিং, দ্রুত পানি নিষ্কাষনের লক্ষ্যে বঙ্গবন্ধু মহাসড়কে বিদ্যমান সেতুগুলি সংস্কার এবং আগামী দিনে হাওড়ের জনপদে যোগাযোগের ক্ষেত্রে ইকো সিস্টেম রক্ষা করে উন্নয়ন প্রকল্প গ্রহণ জরুরী।

অপরদিকে নদীগুলো মরে গিয়ে যখন জৈন্তিয়াকে বুজাচ্ছে তখন তার গর্ভে থাকা মহামূল্যমান সম্পদ সিলেট সেন্ট ও সাদা পাথর দিয়ে দেশের গর্বিত মেঘা প্রকল্পের অন্যতম ভৈরবের মেঘনা নদীতে সৈয়দ নজরুল ইসলাম মেঘনা সেতু, বঙ্গবন্ধু যমুনা বহুমুখী সেতু, স্বাধীনতা উত্তর দেশের সর্বশ্রেষ্ট অর্জন পদ্মা বহুমুখী সেতুতে একমাত্র দেশীয় উপকরণ হিসাবে ব্যবহৃত হয়ে বৃহত্তর জৈন্তিয়াকে ধন্য করলেও নদীগুলোকে বাচানোর জন্য রাষ্ট্রীয় উদ্যোগের কোন বিকল্প ছিল না। বিভিন্ন ছড়া সহ নদীগুলোকে বাচিয়ে রাখলে সারাজীবনই সিলেট সেন্ট পাওয়ার সুবর্ণ সুযোগ থাকবে, অন্যথায় সেই সুযোগটুকুও স্তব্ধ হয়ে যাবে। আজ উন্নয়নের রোল মডেল, মানবতার জননী, দেশরত্ন মাননীয় প্রধানমন্ত্রী দেশের উত্তর পূর্বাঞ্চলের হাওড় পাড়ের ৬টি জেলার কোটি মানুষের জীবন মানকে উন্নত সমৃদ্ধ করার লক্ষ্যে (মেঘনা থেকে বরাক পর্যন্ত) নদ-নদীগুলোকে বিআইডব্লিউটিএ’ দ্বারা ক্যাপিটাল ড্রেজিং এর মাধ্যমে বাঁচিয়ে রাখার সেই নির্দেশ দিলেও দূর্ভাগ্যজনকভাবে পিয়াইন (শাখা সহ) এবং সারি গোয়াইন নদী তালিকায় স্থান না পাওয়ায় বৃহত্তর জৈন্তিয়া দুঃখজনকভাবে রাষ্ট্রীয় বিমাতা সুলভ আচরণের শিকার হতে চলেছে লাল ফিতার দৌরাত্নে। যা কোনাভাবেই মেনে নেওয়া যায় না। বিষয়টি জানার পর ইতিমধ্যে অনেক সভা সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়েছে। পরিশেষে বৃহত্তর জৈন্তিয়া তথা বৃহত্তর সিলেটের মানুষগুলোকে বন্যার কবল থেকে বাঁচাতে হলে ছোট বড় সকল নদীগুলোকে জরুরী ভিত্তিতে খনন করতে হবে।

লেখক : গিয়াস আহমদ
যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক
জৈন্তিয়া কেন্দ্রীয় পরিষদ
মোবাইল: ০১৭৮৬-০৬৭৯৬৭




খবরটি এখনই ছড়িয়ে দিন

এই বিভাগের আরো সংবাদ







Copyright © Bangla News 24 NY. 2020