নবীগঞ্জ উপজেলার সাকুয়া মুড়ারপাঠলী গ্রামে শনিবার (১১ ফেব্রুয়ারি) বউকে বকাঝকা করার ঘটনাকে কেন্দ্র করে বউয়ের পিতার বাড়ির লোকজন কর্তৃক দফায় দফায় মেয়ের জামাতার বাড়িঘরে হামলা, পাল্টা হামলায় প্রায় ২ ঘন্টা ব্যাপী রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষে কমপক্ষে ১৫ জন আহত হয়েছে।
আহতদের মধ্যে ১০ জনকেই গুরুতর অবস্থায় সিলেট ওসমানী মেডিকেল হাসপাতালে প্রেরন করা হয়েছে। খবর পেয়ে ওসি ডালিম আহমদের নেতৃত্বে একদল পুলিশ ঘটনাস্থল গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রনে আনেন।
স্থানীয়,সুত্রে জানায়, উপজেলার করগাও ইউপির আলোচিত সাকুয়া গ্রামের এক সময়ের ত্রাস আকলুছ মিয়ার মেয়ে বিবাহ দেন একই গ্রামের ফুল মিয়ার ছেলে এবং তাজুল ইসলামের ভাতিজা স্বপন মিয়ার কাছে। তাজুল ইসলাম আকলুছ মিয়ার কথামতো না চলায় বিরোধ দেখা দেয়।
এক পর্যায়ে আকলুছ মিয়ার ভয়ে দীর্ঘদিন যাবৎ তাজুল ইসলাম নবীগঞ্জ ভাড়া বাসায় থাকেন। এ সব বিষয় নিয়ে আকলুছ ও তাজুল ইসলাম গোষ্ঠীর মধ্যে বিরোধ চলে আসছে।
শনিবার সকালে তাজুল ইসলামের ভাতিজা স্বপন মিয়া তার বিবাহিত স্ত্রী (আকলুছ মিয়ার মেয়ে) কে বকাঝকা করেন। বকাঝকা শুনে বউ চলে যায় পাশ্ববর্তী বাবা’র বাড়ি। মেয়ে’র কথা শুনেই বাবা’র বাড়ির লোকজন মেয়ের জামাতার বাড়ির সামনে গিয়ে হাকডাক দিয়ে গালমন্দ করে। এতে উভয়ের মধ্যে উত্তেজনা দেখা দিলে স্থানীয় মুরুব্বীয়ান শালিসের উদ্যোগ নিলে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়। ওই দিন বিকালে মেয়ের বাবা আকলুছ মিয়া বাড়ীতে এসেই কে শুনে কার কথা, আকলুছ মিয়ার মেয়ে বলে কথা। সাথে সাথে আকলুছ মিয়ার নেতৃত্বে কনের বাড়ির লোকজন দেশীয় অস্ত্র পিকল, টেটা সহ লাটিসুটা নিয়ে মেয়ের জামাতার বাড়িতে হামলা করে। জবাবে আত্মরক্ষার্থে পাল্টা হামলায় জড়িয়ে পড়েন ছেলে পক্ষ। ফলে উভয় পক্ষের মধ্যে প্রায় ২ ঘন্টা ব্যাপী রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষ চলে। এতে কমপক্ষে ১৫ জন আহত হয়।
এ সময় আকলুছ মিয়ার লোকজন প্রতিপক্ষের গরু, ছাগল, স্বর্ণালংকারসহ নগদ টাকা লুটপাট করে নিয়ে যায় এবং বাড়ির আসবাবপত্র ভাংচুর করা হয়েছে।
খবর পেয়ে নবীগঞ্জ থানার ওসি ডালিম আহমদের নেতৃত্বে একদল পুলিশ ঘটনাস্থল গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রনে আনেন। পরে স্থানীয়,লোকজনের সহযোগীতায় আহতদের নবীগঞ্জ হাসপাতালে নিয়ে আসলে গুরুতর আহত ফুল মিয়ার ছেলে ইসরাইল মিয়া (৩৫), তার সহোদর সুমন মিয়া (৩২), দেলোয়ার মিয়া (২৪), মতিন মিয়া (১৯), নাজিম উদ্দীনের ছেলে এখলাছ মিয়া (৩১), আছদ্দর মিয়ার ছেলে আতিক (১৮), আমীর মিয়ার ছেলে রুবেল মিয়া (৩৩), আব্দুল আলীর ছেলে কমরু মিয়া (১৭), আকলুছ মিয়ার ছেলে মুজিবুর রহমান রাব্বী (১৮)কে সিলেট ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে প্রেরণ করা হয়েছে। বাকী আহতদের প্রাথমিক চিকিৎসা দেয়া হয়েছে।
উল্লেখ্য, সাকুয়া এলাকায় ইতিপুর্বে দুটি গ্রুপে দাঙ্গা হাঙ্গামা চলে আসছিল। প্রায় ১১ টি হত্যাকান্ড সংঘটিত হয়েছে। প্রতিপক্ষ কে ফাসাতে নিজের লোককে হত্যা করতে হাত কাপেনি তাদের। উভয় পক্ষে ডজন খানেক মামলাও রয়েছে। ঘটে যাওয়া ঘটনা গুলো সমঝোতার উদ্যোগ নেন তরুন সমাজ।
এতে প্রায় ৩/৪ বছর ধরে শান্তি ফিরে আসে এলাকায়। এই শান্ত পরিবেশকে আবার অশান্ত করে তোলছে আকলুছ ও তার লোকজন। এলাকায় জুয়ার আড্ডা, চাঁদাবাজি, মারামারি সবই এখন তার ইশারার খেলা। এলাকার আইনশৃংখলা রক্ষার স্বার্থে আকলুছ মিয়া’কে দ্রুত গ্রেফতারের দাবী জানিয়েছেন স্থানীয়রা।