অবসরপ্রাপ্ত সেনা কর্মকর্তা মেজর সিনহা হত্যা মামলার সুষ্ঠু তদন্তের জন্য এসপি মাসুদ, বারখাস্ত ওসি প্রদীপ ও পরিদর্শক লিয়াকতের ফাঁস হওয়া ফোনালাপের বিষয়টি যাচাই-বাছাই করা হচ্ছে বলে জানিয়েছেন র্যাবের গণমাধ্যম শাখার পরিচালক লেফটেন্যান্ট কর্ণেল আশিক বিল্লাহ। যাচাই করার পর তদন্ত কর্মকর্তার মাধ্যমে আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া হবে বলেও জানান তিনি।
শনিবার (০৮ আগস্ট) র্যাব সদর দপ্তরে এক সংবাদ সম্মেলনে লেফটেন্যান্ট কর্ণেল আশিক বিল্লাহ আরও বলেন, মামলার তদন্তের স্বার্থে প্রয়োজনে কক্সবাজারের এসপি মাসুদ হোসেনকেও জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে। এই মামলায় মোট ৯ জন আসামির নাম রয়েছে। এরমধ্যে ৭ জন আদালতে আত্মসমর্পন করেছে। বাকি দুজনের বিষয়ে খোঁজ খবর নেয়া হচ্ছে। প্রাথমিকভাবে জানা গেছে এই দুজনের নামে কোনো সদস্যের কথা উল্লেখ নেই। তদন্ত করে তাদের বিষয়ে পরবর্তী ব্যবস্থা নেয়া হবে বলে জানান তিনি।
র্যাবের গণমাধ্যম শাখার পরিচালক বলেন, সিনহা হত্যা মামলায় ওসি প্রদীপ ও পরিদর্শক লিয়াকতসহ ৭ আসামিকে আগামিকাল রোববার থেকে জিঙ্গাসাবাদ শুরু করবে র্যাব। জিজ্ঞাসাবাদে গ্রেপ্তার পুলিশ সদস্যের কার সম্পৃক্ততা কতটুক তা খুঁজে বের করা হবে। র্যাবের তদন্তের ফোকাস থাকবে সিনহাকে গুলি করার মোটিভ। এই ঘটনায় দুটি মামলা হয়েছে। যেখানে নিহত মেজরের সঙ্গে থাকা সাহেদুল ইসলাম সিফাত এবং শিপ্রা দেবনাথের মামলায় দুজন আইনজীবী নিয়োগ করা হয়েছে। আইনজীবীরা তাদের জামিনের আবেদন করবেন এবং মামলার প্রয়োজনে দুজনকে র্যাব জিজ্ঞাসাবাদ করবে। কারণ মেজর সিনহার বোনের করা মামলায় সিফাত একজন গুরুত্বপূর্ণ সাক্ষী। এছাড়া খোয়া যাওয়া জিনিস উদ্ধারের বিষয়টি তদন্ত কর্মকর্তা দেখবেন বলে জানান তিনি।
সম্পূর্ণ প্রভাবমুক্ত থেকে দ্রুতই এই মামলার চার্জশিট দেয়া হবে-জানিয়ে লেফটেন্যান্ট কর্ণেল আশিক বিল্লাহ বলেন, এই মামলার তদন্ত নিরপেক্ষভাবে শেষ করে প্রকৃত অপরাধীদের শনাক্ত এবং তাদের আইনের আওতায় সোপর্দ করাই র্যাবের মুখ্য উদ্দেশ্য।
এদিকে, কক্সবাজার জেলা কারাগারের জেল সুপার মোকাম্মেল হোসেন জানিয়েছেন, শনিবার দুপুর দেড়টার দিকে কক্সবাজার সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিষ্ট্রেট আদালত থেকে মেজর সিনহা হত্যা মামলার রিমাণ্ডের আদেশ প্রাপ্ত ৭ আসামির ব্যাপারে প্রয়োজনীয় নথিপত্র জেলা কারাগারে পৌঁছেছে। ফলে কারাফটকে র্যাব সদস্যরা ৪জন জনকে জিজ্ঞাসাবাদ শুরু করেছে। রোববার ৭দিনের রিমাণ্ডের আদেশপ্রাপ্ত আসামিদের র্যাব হেফাজতে নিয়ে যাওয়ার কথা রয়েছে বলে জানান তিনি।
গত ৩১ জুলাই রাতে টেকনাফ বাহারছড়া চেকপোস্টে পুলিশের গুলিতে নিহত হন সেনাবাহিনীর অবসরপ্রাপ্ত মেজর সিনহা মোহাম্মদ রাশেদ খান। এরপর বুধবার নিহত সিনহার বোন শারমিন শাহরিয়া ফেরদৌস বাদী হয়ে কক্সবাজার সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিষ্ট্রেট আদালতে ইন্সপেক্টর লিয়াকত, ওসি প্রদীপ কুমার দাসসহ ৯জনের বিরুদ্ধে হত্যা মামলা দায়ের করেন।বৃহস্পতিবার কক্সবাজার জুডিসিয়াল আদালতে আত্মসমর্পন করেন বরখাস্ত ওসি প্রদীপসহ ৭ আসামি। শুনানি শেষে তাদেরকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন বিচারক। পরে র্যাবের পক্ষে প্রত্যেক আসামির ১০ দিন করে রিমাণ্ডের আবেদন করলে ইন্সপেক্টর লিয়াকত, ওসি প্রদীপ এবং এসআই নন্দ দুলাল রক্ষিতকে ৭দিন করে রিমাণ্ডে নেয়ার আদেশ দেন সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের বিচারক। বাকী ৪ জনকে কারাফটকে ২ দিন কারাফটকে জিজ্ঞাসাবাদের আদেশ দেয়া হয়। পরবর্তীতে ৭ আসামির ৭ দিন করে রিমাণ্ড মঞ্জুর করা হয়। বাকী ২ আসামির বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করে আদালত।