ফাল্গুন আর বসন্তের কথা এলেই মনে ভাসে আগুনরাঙা শিমুল আর পলাশের ডালে কোকিলের কুহুতান। সত্যিই বাংলার বসন্তকে লাল তুলির আঁচড়ে যেন রঙিন করে সবার মনকেও রাঙিয়ে তোলে শিমুল ফুল। না, বসন্ত এখনো আসেনি। শীতের পর উষ্ণ পরশ দিতে প্রকৃতিতে ডানা মেলার পথে ঋতুরাজ বসন্ত। তবে প্রকৃতিপ্রেমিদের চোখের তৃষ্ণা মেটাতে বসন্তের আগাম বার্তা জানিয়ে টুকটুকে লাল ফুল ফুটতে শুরু করেছে সুনামগঞ্জের তাহিরপুর উপজেলার দৃষ্টিনন্দন শিমুল বনে। বাগানটি এখন যেন গাইছে ফাগুনের গান। দূর থেকে দেখলে মনে হবে যেন, লালগালিচা বিছিয়ে প্রকৃতিপ্রেমি, পর্যটক ও সৌন্দর্য পিপাষুদের ডাকছে দেশের সবচেয়ে বড় এ শিমুল বাগান।
তাহিরপুরের উত্তর বড়দল ইউনিয়নের উত্তরে বারেকটিলা মেঘালয় পাহাড়ের পাদদেশ ও যাদুকাটা নদীঘেঁষে গড়ে উঠেছে এ শিমুল বাগানটি।
স্থানীয় এলাকাবাসী জানান, ২০০২ সালে বাদাঘাট ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান প্রয়াত জয়নাল আবেদীন মানিগাঁও গ্রামে বালু আবরিত ৯৮ বিঘা অনাবাদি (পতিত) জমিতে সারিবদ্ধভাবে ৩ হাজারের বেশি শিমুল গাছের চারা রোপণ করেন। সময়ের পরিক্রমায় সেটি এখন আকর্ষণীয় পর্যটন স্পট। বাগানটির নাম রাখা হয়েছে জয়নাল আবেদীন শিমুল বাগান।
বছরজুড়েই দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে হাজার হাজার প্রকৃতিপ্রেমির আগমন ঘটে এখানে। তবে রক্তরাঙা ফুটন্ত শিমুল দেখতে বসন্তকালে পর্যটক বেড়ে যায় কয়েক গুণ। এবারও ভ্রমণপিপাসুরা আসতে শুরু করেছেন বলে জানান স্থানীয় বাসিন্দা ও বড়দল উত্তর ইউনিয়ন ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক আশরাফুল ইসলাম আকাশ।
জানা যায়, বসন্তের আগমনী বার্তা জানিয়ে সারি সারি শিমুল গাছে ফুল ফুটতে শুরু করেছে। তবে সব গাছে পরিপূর্ণভাবে ফুল ফুটতে আরও কিছুদিন সময় লাগবে।
রাজধানী ঢাকা থেকে আসা সুনতানা রাজিয়াসহ আরও কয়েকজন পর্যটক ও দর্শনার্থী জানান, বাগানের সৌন্দর্য অসাধারণ। বাগানে প্রবেশ ফি ২০ টাকা জনপ্রতি নেওয়া হয়। এটা কোনো বিষয় না। তবে ভালো সড়ক যোগাযোগ ব্যবস্থা না থাকায় দুর্ভোগের শিকার হতে হয়। এছাড়াও বাগানে পর্যাপ্ত স্যানিটেশন ব্যবস্থা ও খাবার দোকান না থাকায় দর্শনার্থীরা সমস্যায় পড়েন। পর্যটকদের সুবিধার্থে এসব সমস্যা সমাধানে সময় উপযোগী পদক্ষেপ নেওয়ার দাবি জানাই।
বাগান মালিকের ছেলে সুনামগঞ্জ জেলা পরিষদের সদস্য সেলিনা আবেদিন বলেন, আমরা চেষ্টা করছি বাগানের সৌন্দর্য বৃদ্ধি ও পর্যটকদের সর্বোচ্চ সহায়তা করার। এজন্য আরও কিছু প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। বাগানে ফুল ফুটুক আর না ফুটুক, প্রকৃতিপ্রেমিরা ছুটির দিনসহ বিশেষ দিনগুলোতে বেড়াতে আসেন। তারা শিমুল বাগান, বারেকটিলা ও যাদুকাটা নদীর অপার সৌন্দর্য উপভোগ করেন।
যেভাবে যাবেন : ঢাকা থেকে সরাসারি বিভিন্ন ধরনের বাস যায় নেত্রকোনা মহনগঞ্জ হয়ে ধর্মপাশা । ধর্মপাশা উপজেলা সদর থেকে মধ্যনগর সিএনজিচালিত অটোরিকশা বা ভাড়ায়চালিত মোটরসাইকেলে জনপ্রতি ২০০- ১০০ টাকায় তাহিরপুর লাউড়েরগড় বাজার। বাজারের পাশের যাদুকাটা নদী পার হলেই দেখা মিলবে শিমুল বাগানের। এছাড়া আব্দুর জহুর সেতু পার হলে বিভিন্ন ধরনের গাড়ি নিয়ে তাহিরপুর উপজেলা, এরপর বাদাঘাট বাজার হয়েও যাওয়া যায় শিমুল বাগানে।