সিলেটের ফেঞ্চুগঞ্জে বিভিন্ন ইউনিয়নের প্রায় বিশ হাজার মানুষ গত তিন দিন থেকে ভয়াবহ বন্যার পানিতে ভাসছে। ভারতের উজানের বরাক নদী হয়ে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে সৃষ্ট বন্যা পরিস্থিতিতে বানভাসি লোকজন চরম দুর্ভোগে পড়েছেন। পাহাড়ি ঢলে প্লাবিত হচ্ছে নতুন নতুন এলাকা।
হাজারও মানুষ পানিবন্দি অবস্থায় মানবেতর জীবনযাপন করছেন। চারপাশে অথৈ পানি থাকায় বাড়িঘর থেকে বের হতে পারছেন না বন্যাকবলিতরা। পানির স্রোতে ভেসে গেছে অনেকের ঘরের মজুত খাদ্য। হাতে কাজ নেই, ঘরে নেই খাবার।
যোগাযোগ ব্যবস্থা ভেঙে পড়ায় চরম খাদ্য সংকট দেখা দিয়েছে বানভাসিদের মধ্যে। ত্রাণের অপেক্ষায় থাকা বানভাসিরা কোনো নৌকা দেখলেই আশায় বুক বাঁধেন- এই বুঝি এলো ত্রাণের নৌকা। সাংবাদিক দেখে ছুটে যান নিজের নাম লেখানোর জন্য। ভেবেছেন ত্রাণের তালিকা তৈরি করা হচ্ছে।
জানা গেছে, বন্যাদুর্গত ফেঞ্চুগঞ্জের বিভিন্ন এলাকায় সরকারি ত্রাণ এখনো কেউ পাননি। সরেজমিন বেসরকারি ত্রাণ তৎপরতা খুব একটা চোখে পড়েনি। ত্রাণ তৎপরতা বাড়ানোর দাবি জানিয়েছেন বিভিন্ন এলাকার বানভাসি মানুষ।
ফেঞ্চুগঞ্জ সদর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান কাজী মোহাম্মদ বদরুদ্দোজা জানান, তাঁর ইউনিয়নের প্রায় এক হাজার পরিবার পানিবন্দী। গত তিনদিন তিনি নিজে সদর ইউনিয়নের বন্যা কবলিত পিঠাইটিকর, ছত্তিশ বাঘমারা, ফেঞ্চুগঞ্জ বাজারের নাথ কলোনী, সর্দার কলোনী, পশ্চিম বাজার এলাকা পরিদর্শন করেছেন।
তিনি বলেন, সদর ইউনিয়নের ৯০ শতাংশ নিম্নাঞ্চল বন্যার পানিতে প্লাবিত। প্রায় এক হাজার পরিবার পানিবন্দী অবস্থায় মানবেতর জীবনযাপন করছেন। আজ (রোববার) দুপুরে উপজেলা দুর্যোগ ব্যবস্থাপনার সভা হবে। আমি আমাট ইউনিয়নের বন্যার্ত মানুষের জন্য পর্যাপ্ত ত্রাণ সহায়তার জন্য আবেদন করব।
একই সঙ্গে বন্যাকবলিত এলাকায় বিশুদ্ধ পানি, শুকনো খাবার, শিশু খাদ্য ও গো-খাদ্যের মরাত্মক সংকট দেখা দিয়েছে। প্লাবিত এলাকায় ছড়িয়ে পড়েছে জ্বর, আমাশয়, ডায়রিয়াসহ পানিবাহিত রোগ।
বানভাসিরা রোগে-শোকে ভুগলেও দুর্গত এলাকায় এখনো মেডিকেল টিম পৌঁছেনি। শ্রমজীবী মানুষরা খাবার সংগ্রহ করতে না পারায় অর্ধাহারে অনাহারে দিন কাটাচ্ছেন। বন্যাকবলিত এলাকায় গো-খাদ্যের চরম সংকট দেখা দেওয়ায় গৃহপালিত পশু-পাখি নিয়ে চরম বিপাকে পড়েছেন কৃষকরা।
স্থানীয়রা বলছেন, বন্যাকবলিত প্রায় বিশ হাজার মানুষের মাঝে এখনো পর্যন্ত কোনো ত্রাণসামগ্রী পৌঁছায় নি। ত্রাণের জন্য হাহাকার করছেন লোকজন। কিন্তু কেউই ত্রাণ নিয়ে আসছে না। বসতঘরে পানি থাকায় চুলায় আগুন জ্বালানোর মতো পরিস্থিতি নেই। শিশু খাদ্যেরও তীব্র সংকট রয়েছে।
নাথ কলোনীর বাসিন্দা সঞ্জিত চন্দ্র সীল বলেন, তিনদিন ধরে পানিবন্দী। ঘরের মধ্যে কোমর সমান পানি। জিনিসপত্র সরানো যাচ্ছে না। ত্রাণ তো দূরের কথা, কেউ এক ফুটা পানি এনে দিচ্ছেন না।
গয়াসী গ্রামের বাসিন্দা রাহুল বিশ্বাস বলেন, আমরা পুরো গ্রামবাসী পানিবন্দী। কারো ঘরে কোমর পানি, কারো ঘরে হাঁটু সমান পানি। ত্রাণ তো দূরের কথা, কেউ খোঁজ নিতে আসছেন না।
ফেঞ্চুগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সীমা শারমিনকে মুঠোফোনে একাধিকবার কল দিলে তিনি কল রিসিভ করেননি।