কানাডার ভূখণ্ডে বিদেশীদের গৃহসম্পত্তি কেনার ওপর দেশটির সরকার আরোপিত দুই বছরের নিষেধাজ্ঞা বলবৎ হয়েছে। মহামারীর পর দেশটির আবাসন খাতে সম্পত্তির বিক্রয়মূল্য ব্যাপক আকারে বেড়ে যাওয়ার পরিপ্রেক্ষিতে রীতিমতো আইন প্রণয়নের মাধ্যমে রোববার এ নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে জাস্টিন ট্রুডোর সরকার।
করোনা মহামারীর প্রাদুর্ভাব দেখা দেয়ার পর থেকেই কানাডায় ভূসম্পত্তি ও বাড়ির দাম বাড়ছে। সিএনএন বিজনেস জানিয়েছে, আবাসন খাতে ব্যাপক মাত্রায় ব্যয়বৃদ্ধির জন্য ক্রেতাদের দায়ী করে আসছিলেন দেশটির রাজনীতিবিদরা। তাদের বিশ্বাস, লাভজনক বিবেচনায় বিদেশী বিনিয়োগকারীরা কানাডার আবাসন খাতে বিনিয়োগের জন্য হুমড়ি খেয়ে পড়ার কারণেই দেশটিতে এ খাতের ব্যয় আকস্মিকভাবে বাড়তে শুরু করে।
কানাডায় বাংলাদেশসহ বিশ্বের কয়েকটি দেশ থেকে গত কয়েক বছরে বিপুল পরিমাণ অবৈধ ও অপ্রদর্শিত অর্থ পাচার হয়েছে বলে বিভিন্ন সময়ে নানা মাধ্যমে প্রকাশিত খবরে উঠে এসেছে। আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমগুলোর ভাষ্য অনুযায়ী, মহামারী ছড়িয়ে পড়ার পর থেকে কানাডায় অর্থ পাচারকারীদের বিনিয়োগের জন্য সবচেয়ে আকর্ষণীয় ক্ষেত্র হয়ে উঠেছিল আবাসন খাত। আকস্মিকভাবে খাতটিতে বিনিয়োগপ্রবাহ বেড়ে যাওয়ার পরিপ্রেক্ষিতে কানাডায় ২০২০ ও ২১ সালের প্রায় পুরো সময়ে গৃহসম্পত্তির মূল্য বাড়তে থাকে।
এর পরিপ্রেক্ষিতে গত বছর আবাসন খাতে বিদেশীদের বিনিয়োগে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে আইনটি প্রণয়নের উদ্যোগ নেয় প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডোর সরকার। এ বিষয়ে জাস্টিন ট্রুডোর রাজনৈতিক দলের প্রচারণামূলক ওয়েবসাইটেও বলা হয়, কানাডার আবাসন খাত এখন মুনাফা শিকারি, ধনী করপোরেশন ও বিদেশী বিনিয়োগকারীদের আকর্ষণ করছে। এতে ঘরবাড়ি ব্যবহার হচ্ছে প্রয়োজনের তুলনায় কম। ফটকাবাজি বাড়ছে। একই সঙ্গে দামও হয়ে উঠছে আকাশচুম্বী। ঘরবাড়ি মানুষের জন্য, বিনিয়োগকারীদের জন্য নয়।
কানাডায় স্থায়ী হওয়া বাংলাদেশীদের অভিযোগ, অর্থ পাচারকারীদের অনেকেই কানাডায় সরিয়ে নেয়া অর্থ দেশটির কানাডার আবাসন খাতে বিনিয়োগ করেছেন। দেশটির আবাসন খাতে গৃহমূল্য আকাশচুম্বী হয়ে ওঠার পেছনে এ অর্থ পাচারকারীদেরও ভূমিকা রয়েছে। নিষেধাজ্ঞা নিয়ে আলোচনা শুরুর পর তাদের অনেকেই বিপাকে পড়েন।
কানাডায় বসবাসের জন্য স্থানান্তর হওয়া ব্যক্তিদের আওতার বাইরে রাখা হলেও চলতি বছরের প্রথম দিনে বলবৎ হওয়া আইনটি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে সিআরইএ। এ নিয়ে এক বিবৃতিতে সংস্থাটির পক্ষ থেকে বলা হয়, কানাডা এরই মধ্যে বহু সংস্কৃতির দেশ হিসেবে বিশ্বব্যাপী সুনাম অর্জন করেছে। অকানাডীয়দের গৃহসম্পত্তি কেনার ওপর নিষেধাজ্ঞার মাধ্যমে বিদেশীদের স্বাগত জানানো দেশ হিসেবে কানাডার সুনাম বিপন্ন হতে পারে। এ নিষেধাজ্ঞার সম্ভাব্য সুফলও হতে পারে খুবই সীমিত।
সংস্থাটির আশঙ্কা, এ নিষেধাজ্ঞার জবাবে যুক্তরাষ্ট্র ও মেক্সিকো ওই দুই দেশে কানাডীয়দের সম্পত্তি কেনার ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করতে পারে। বিশেষ করে যেসব কানাডীয় শীতকালে হিম আবহাওয়া এড়াতে দূরে শীতকালীন আবাস গড়ে তুলছে, তাদের ওপর এ নিষেধাজ্ঞার প্রভাব পড়তে পারে। যুক্তরাষ্ট্রে বিদেশী ভূসম্পত্তি ক্রেতাদের মধ্যে কানাডীয়রা শীর্ষে। কানাডীয়দের যুক্তরাষ্ট্রে ক্রয়কৃত গৃহসম্পত্তির অর্ধেকেরও বেশি ফ্লোরিডা ও অ্যারিজোনায় অবস্থিত।