ঢাবি প্রতিনিধি
অনলাইনে দেয়া স্ট্যাটাসকে কেন্দ্র করে গত বছরের ৭ অক্টোবর রাতে বুয়েটের তড়িৎ ও ইলেক্ট্রনিক প্রকৌশল বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র আবরার ফাহাদকে নৃশংসভাবে পিটিয়ে হত্যা করে বুয়েট শাখা ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা।ওই ঘটনাকে কেন্দ্র করে শিক্ষার্থীদের টানা আন্দোলনের মুখে একই বছরের ১১ অক্টোবর ক্যাম্পাসে সবধরনের রাজনৈতিক কার্যক্রম নিষিদ্ধ করেছিল বুয়েট প্রশাসন।কিন্তু প্রশাসনের এ নিষেধাজ্ঞা তোয়াক্কা না করেই বুয়েটে আংশিক আহ্বায়ক কমিটি ঘোষণা করেছে বিএনপির ছাত্র সংগঠন জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল।বুয়েটের পাশাপাশি ইডেন মহিলা কলেজ, ঢাকা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (ডুয়েট) এবং স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজেও আংশিক আহ্বায়ক কমিটি ঘোষণা করেছে ছাত্রদল।
শুক্রবার রাতে ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় সভাপতি ফজলুর রহমান খোকন ও সাধারণ সম্পাদক ইকবাল হোসেন শ্যামল অনুমোদিত এবং ভারপ্রাপ্ত দফতর সম্পাদক আবদুস সাত্তার পাটোয়ারী স্বাক্ষরিত এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, বুয়েটে ৫ সদস্যের আহ্বায়ক কমিটি গঠন করা হয়েছে। যেখানে আসিফ হোসেন রচিকে আহ্বায়ক, ফয়সাল নূরকে যুগ্ম আহ্বায়ক এবং আলী আহমদকে সদস্য সচিবের দায়িত্ব দেয়া হয়েছে। এছাড়া, নওরোজ রহমান ইমন ও মুসাওয়ার আহমেদ শফিককে সদস্য করা হয়েছে। আহ্বায়ক কমিটিকে এক মাসের মধ্যে পূর্ণাঙ্গ কমিটিসহ ওইসব কমিটির অধীনস্ত ইউনিট কমিটির তালিকা কেন্দ্রীয় সংসদে জমা দিতে বলা হয়েছে।বুয়েটে রাজনীতি নিষিদ্ধ থাকার পরও ছাত্রদল কেন কমিটি দিয়েছে- এ নিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে আলোচনা-সমালোচনা চলছে।
অনেকে বলছেন, দীর্ঘদিন ধরে ক্যাম্পাস রাজনীতির বাইরে থেকেছে ছাত্রদল। দলের হাইকমান্ড থেকে বার বার তাগাদা থাকা সত্ত্বেও বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসগুলো সক্রিয় হতে পারেনি সংগঠনটি। গতবছর ডাকসু নির্বাচনের কারণে তাদেরকে কিছুটা সক্রিয় হতে দেখা যায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে। অন্য ক্যাম্পাসগুলোতে তারা পর্দার আড়ালেই থেকে যায়।বুয়েটে রাজনীতি নিষিদ্ধের মধ্যে কেন কমিটি দেয়া হয়েছে জানতে চাইলে ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় সভাপতি ফজলুর রহমান খোকন বলেন, আবরার ফাহাদ হত্যাকাণ্ডের পর বুয়েটে ছাত্ররাজনীতি নিষিদ্ধ করে প্রশাসন। আবরার হত্যাকাণ্ডের জন্য বুয়েটে ছাত্রলীগের রাজনীতি নিষিদ্ধ না করে সব ছাত্র সংগঠনের রাজনীতি নিষিদ্ধ করা হয়েছে। এটা ঠিক হয়নি।তিনি বলেন, ছাত্রলীগ নামমাত্র কমিটি বিলুপ্ত করলেও তাদের সব কার্যক্রম চলছে।
কিন্তু প্রশাসন তাদের কিছুই বলছে না। কারণ, দেশে একদলীয় শাসন ব্যবস্থা কায়েম রয়েছে। বুয়েটে স্থিতিশীল পরিস্থিতি তৈরির জন্য ছাত্র সংসদ নির্বাচন দেয়া জরুরি হয়ে পড়েছে বলেও মন্তব্য করেন খোকন।বুয়েটে ছাত্ররাজনীতি নিষিদ্ধের সিদ্ধান্ত শুরু থেকেই মানতেন না বলে জানিয়েছেন সংগঠনটির ভারপ্রাপ্ত দফতর সম্পাদক আবদুস সাত্তার পাটোয়ারী। তিনি বলেন, বুয়েটে ছাত্র রাজনীতির দরকার আছে। আমরা মনে করি, শিক্ষার্থীদের পক্ষে কথা বলার জন্য সেখানে ছাত্র রাজনীতি প্রয়োজন। তাই আমরা সেখানে কমিটি দিয়েছি।বুয়েটে ছাত্র রাজনীতি নয় ছাত্রলীগকে নিষিদ্ধের প্রয়োজন উল্লেখ করে সাত্তার বলেন, বুয়েটের ঘটনায় যে সংগঠন দায়ী, সেই সংগঠনকে নিষিদ্ধ না করে নিষিদ্ধ করা হয়েছে ছাত্র রাজনীতি। ছাত্রদল এই সিদ্ধান্তকে কখনোই মানেনি। ছাত্রদল মনে করে, দেশের এই পরিস্থিতিতে সেখানে কমিটি প্রয়োজন, তাই সেখানে কমিটি গঠন করা হয়েছে।
কমিটিতে থাকা শিক্ষার্থীদের ছাত্রত্ব বাতিল হবে আবরার ফাহাদ হত্যাকাণ্ডকে ঘিরে বুয়েট ক্যাম্পাসে সব ধরনের রাজনৈতিক কার্যক্রম নিষিদ্ধ হলেও ছাত্রদল কমিটি গঠন করায় তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেবে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। ইতোমধ্যেই কমিটিতে থাকা শিক্ষার্থীদের চিহ্নিত করা হয়েছে উল্লেখ করে তাদের ছাত্রত্ব বাতিল করা হবে বলে জানিয়েছেন বুয়েটের উপাচার্য সত্য প্রসাদ মজুমদার। তিনি বলেন, যে পাঁচজন শিক্ষার্থী ছাত্রদলের কমিটিতে আছে, তাদের তথ্য সংগ্রহ করা হয়েছে। আমরা তাদের বিরুদ্ধে অ্যাকশনে যাব। তাদের ছাত্রত্ব বাতিল হবে।ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় নির্বাহী সংসদই কমিটি দিয়েছে উল্লেখ করে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে কিনা বা কারণ দর্শানোর নোটিশ দেয়া হবে কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, তাদের বিষয়ে নয়, আমরা আমাদের ছাত্রদের বিষয়ে বলতে পারি। আমার ছাত্ররা তো জানতো, ক্যাম্পাসে ছাত্ররাজনীতি নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হয়েছে।
এদিকে শনিবার সন্ধ্যায় বুয়েটের ছাত্রকল্যাণ পরিদফতরের পরিচালক অধ্যাপক ড. মো. মিজানুর রহমান স্বাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের নিয়ম অনুযায়ী ছাত্রকল্যাণ পরিদফতরের অনুমোদিত ক্লাব ব্যতিত ছাত্রদের অন্য যে কোন সংগঠনের কার্যক্রম বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসে নিষিদ্ধ। এমতাবস্থায় শুক্রবার রাতে বুয়েট ছাত্রদলের আহ্বায়ক কমিটি ঘোষণা করা হয়। বিষয়টি বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের নজরে এসেছে। বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ে বিদ্যমান আইন অনুসারে রাজনৈতিক দলের ছাত্র সংগঠনের কর্মকাণ্ডে অংশগ্রহণ করা শাস্তিযোগ্য অপরাধ। যথাযথ নিয়ম অনুসরণ করে নিয়ম শৃঙ্খলা পরিপন্থী কার্যকলাপে অংশগ্রহণকারী শিক্ষার্থীদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
এ বিষয়ে ড. মিজানুর রহমান বলেন, ক্যাম্পাসে রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড পরিচালনা করার কোনো সুযোগ নেই। এরপরও যদি কেউ বিশ্ববিদ্যালয়ে রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড চালায় তবে তা আইনবিরোধী কাজ বলে বিবেচিত হবে। তাদের বিরুদ্ধে বিশ্ববিদ্যালয়ের নিয়ম অনুযায়ী ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।ছাত্রদলের কমিটির বিষয়ে ড. মিজান বলেন, আমরা জানতে পেরেছি, নতুন কমিটির কারও কারও ছাত্রত্ব শেষ হয়েছে। তবে যারা এখনো নিয়মিত ছাত্র-ছাত্রী রয়েছে, তাদের চিহ্নিত করে আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া হবে।
প্রসঙ্গত, আবরার হত্যাকান্ডে ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা জড়িত থাকায় বুয়েট কমিটি ভেঙে দিয়েছিল কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগ। এরপর কোন কমিটি দেয়নি সংগঠনটি। আবরার হত্যাকাণ্ডকে কেন্দ্র করে গত বছরের ১১ অক্টোবর তখনকার উপাচার্য অধ্যাপক সাইফুল ইসলাম বুয়েটে ছাত্ররাজনীতি নিষিদ্ধ ঘোষণা করেন।