বুলবুল হত্যাকাণ্ডে শাবিপ্রবিতে ১০ দিন ক্লাস-পরীক্ষা স্থগিত ঘোষণা করা হয়েছে। লোকপ্রশাসন বিভাগের শিক্ষার্থীদের আবেদনের প্রেক্ষিতে গত ২৬ জুলাই থেকে ৪ আগস্ট পর্যন্ত ক্লাস ও পরীক্ষা স্থগিত রাখা হয়।
শুক্রবার (২৯ জুলাই) সকাল ১০টায় লোকপ্রশাসন বিভাগের ভারপ্রাপ্ত বিভাগীয় প্রধান অধ্যাপক শামীমা তাসনিম বলেন, ‘বুলবুলের এই অকাল মৃত্যুতে আমরা সবাই শোকাহত। বুলবুলের এভাবে মৃত্যু ঘটবে আমরা সেটা ভাবতেও পারিনি। বুলবুলের মৃত্যুতে তার সহপাঠীরা মানসিকভাবে ভেঙে পরেছে। শিক্ষার্থীরা মানসিকভাবে প্রস্তুত হতে তাদের কিছুদিন সময় লাগবে। তারপর ১০দিনের জন্য ক্লাস ও পরীক্ষা বন্ধ রাখার জন্য তারা আবেদন করে। আবেদনের ভিত্তিতে গত ২৬ জুলাই থেকে ৪ আগস্ট পর্যন্ত ক্লাস ও পরীক্ষা স্থগিত রাখা হয়েছে’।
বুলবুলের সহপাঠী অমিত ভৌমিক বলেন, বুলবুলের মৃত্যুতে আমাদের সবাই শূন্যতা অনুভব করছি। আমাদের সেমিস্টার ফাইনাল পরীক্ষা চলছিল। যেদিন বুলবুল মারা গেছে এর আগের দিন আমাদের পরীক্ষার ‘একটি সেমিনার’ ছিল। বুলবুল এতে অংশ নেয়। আর যেদিন মারা গেছে এর পরের দিন আমাদের ভাইবা ছিল। এরপর তৃতীয় বর্ষের দ্বিতীয় সেমিস্টারের ক্লাস রুটিন পেয়ে যেতাম। কিন্তু বুলবুলের আর ভাইবা দেওয়া হলো না। ছিনতাইকারীরা তাকে বাঁচতে দেয়নি। আমরা সবাই শোকাহত। সে খুব মেধাবী ছাত্র ছিল। ও থাকলে আমরা আরও অনেক দূর আগাইতে পারতাম। অনেক ভালো পড়াশোনা করতাম।
এদিকে নিহত বুলবুলের আত্মার শান্তি কামনায় শুক্রবার (২৯ জুলাই) জুমার নামাযের পর বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় মসজিদে দোয়া ও মিলাদ মাহফিল অনুষ্ঠিত হয়েছে। এতে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ফরিদ উদ্দিন আহমেদ, শিক্ষক-শিক্ষার্থী, কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা উপস্থিত ছিলেন। আগামী রোববার বুলবুলের বিভাগে দোয়া ও মিলাদ মাহফিলের আয়োজন করা হয়েছে।
উল্লেখ্য গত ২৫ জুলাই সন্ধ্যায় ক্যাম্পাস সংলগ্ন গাজি-কালুর টিলার পাশে আড্ডারত অবস্থায় ছুরিকাঘাতে প্রাণ হারান বিশ্ববিদ্যালয়ের লোকপ্রশাসন বিভাগের তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী বুলবুল আহমেদ। সঙ্গে থাকা এক ছাত্রীর ভাষ্য, তিনজন মাস্ক পরা লোক এসে বুলবুলকে ছুরিকাঘাত করে। তাকে হাসপাতালে নিয়ে গেলে চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন। খুনের ঘটনায় তদন্তে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ কমিটি গঠন করে। এর আগেই বুলবুলের সহপাঠীরা আন্দোলনে নেমে খুনিদের ২৪ ঘণ্টার মধ্যে গ্রেপ্তারের আল্টিমেটাম দেয়।
হত্যার ঘটনায় বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার মুহাম্মদ ইশফাকুল হোসেন বাদী হয়ে জালালাবাদ থানায় সোমবার রাতে অজ্ঞাতদের বিরুদ্ধে মামলা করেন।
মামলা পরবর্তী এখন পর্যন্ত তিনজনকে গ্রেপ্তার ও দুজনকে আটক দেখিয়েছে পুলিশ। এরমধ্যে রয়েছে বিশ্ববিদ্যালয়ের পাশের টিলারগাঁও এলাকার বাসিন্দা আনিছ আলীর ছেলে আবুল হোসেন (১৯)। বাকি দুজন হলেন- একই এলাকার মো. গোলাব আহমেদের ছেলে কামরুল ইসলাম (২৯) এবং তছির আলীর ছেলে মোহাম্মদ হাসান (১৯)। পেশায় তারা রাজমিস্ত্রি। আদালতে ১৬৪ ধরায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছে তারা সবাই। এরপর আদালত তাদেরকে কারাগারে প্রেরণ করে। ছুরিকাঘাতে নিহত বুলবুল নরসিংদী সদরের চিনিসপুর ইউনিয়নের মো. ওহাব মিয়ার ছেলে। সে শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে লোকপ্রশাসন বিভাগের ২০১৮-১৯ শিক্ষাবর্ষের ছাত্র ছিল।