মৌলভীবাজার প্রতিনিধিঃ
করোনা ভাইরাস থেকে বাঁচতে মাস্ক পরা উচিত এটি জানা আছে তার তবুও মাস্ক না পরেই দায়িত্ব পালন করছেন জয়নাল। শহরের ট্রাফিক সেচ্ছা সেবকের দায়িত্বে থাকা জয়নাল মাস্ক ছাড়াই তাকে রাস্তার নিরাপত্তার দায়িত্ব পালন করতে দেখা গেছে।
মৌলভীবাজার জেলার বাসিন্দা জয়নাল পেশায় ট্রাফিক সেচ্ছা সেবক। কেন মাস্ক পরেন নাই জানতে চাইলে জয়নাল বলেন, ‘সব সময় মাস্ক পরার চেষ্টা করি। কিন্তু মাস্ক পড়লে অস্বস্তিতে ভুগি। তাই মাঝে মাঝে মাস্ক খুলে রাখি।’ তবে সবার মাস্ক পরা উচিত বলে তিনি মন্তব্য করেন।
শহরে রিকশাচালক,সিএনজি চালিত অটোরিকশা চালক,মোটরসাইকেল চালকদের মুখে মাস্ক দেখা যায় কম। যাদের আছে তারা পরে থাকেন থুতনিতে।
কেবল জয়নালই নন, তার মতো অসংখ্য মানুষ এই শহরে মাস্ক না পরেই রাস্তায় বের হচ্ছেন।
বুধবার ১২ই আগস্ট সকাল ১১টায় শহরের একাধিক মোড়ে সরেজমিনে গিয়ে এমন দৃশ্যই চোখে পড়েছে। তরুণ বয়সী থেকে শুরু করে বৃদ্ধ বয়সের লোকজনও মাস্ক ছাড়াই রাস্তায় ঘুরে বেড়াচ্ছেন সাথে থাকা মহিলা,ছোট শিশুও। আবার অনেকে মাস্ক পরলেও নাক-মুখ না ঢেকে থুতনিতে ঝুলিয়ে রেখেছেন।
শহরের সিএনজি চালক মনসুর মিয়া মন্তব্য করেন, করোনার প্রকোপ কিছুটা কমে আসায় মানুষের মনে আগের মতো ভয় নেই। তাই তারা মাস্ক পরছেন না বলে মনে হচ্ছে।
তিনি আরও বলেন, ‘মানুষের মধ্যে এখন আগের মতো ভয় নেই। তাই এখন মানুষ মাস্ক ছাড়াই রাস্তায় বের হচ্ছে। দিন দিন মাস্ক না পরা লোকের সংখ্যা বাড়ছে। বিশেষ করে যারা যুবক তারা তো মাস্ক পরেই না। যুবকদের মতো নিম্ন আয়ের মানুষও মাস্ক পরা নিয়ে উদাসীন। তারা মাস্ক ছাড়াই রাস্তায় বের হচ্ছেন।
পথচারীদের মধ্যেও মাস্ক ছাড়া বের হওয়ার প্রবণতা বাড়ছে। তখন বেলা সাড়ে ১১.৪৫মিনিট পশ্চিমের শহরতলীর কুসুমবাগ এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, মধ্য বয়সী কয়েকজন সাজ্জাদুর রহমান পেট্রোল পাম্প এর সামনে দাঁড়িয়ে কথা বলছেন। তাদের মধ্যে কাহারো মুখে মাস্ক নাই। অন্য দুইজন মাস্ক পরলেও তারা মাস্ক থুতনিতে এনে রেখেছেন। তার পাশেই সিএনজি ষ্ট্যান্ড এ আরও ৪/৫ জন যুবক দাঁড়িয়ে আড্ডা দিচ্ছিলেন। তাদের কারও মুখেই মাস্ক নেই। এরপর সেখানে প্রায় আধা ঘণ্টা দাঁড়িয়ে দেখা গেছে, যারা ওই মোড় হয়ে আসা যাওয়া করছেন তাদের এক তৃতীয়াংশের মুখেই মাস্ক নেই। মোড়ে অবস্থান করা রিকশাচালকদের অনেকের মুখেই মাস্ক দেখা যায়নি। সিএনজি চালকদেরও একই অবস্থা।
যাত্রীর অপেক্ষায় রিকশার ওপর বসে ছিলেন রিকশাচালক হবিগঞ্জের বানিয়াচং এর বাসিন্দা মাখন মিয়া। কেন মাস্ক পরেন নাই জানতে চাইলে তিনি বলেন, মাস্ক পরে রিকশা চালানো অনেক কঠিন। তাই তিনি মাস্ক পরেননি। মাস্ক পরে রিকশা চালালে প্রচুর ঘাম বের হয়, এমনকি ঘাম নাক বেয়ে মুখের ভেতরেও ঢুকে যায়।
সকাল সাড়ে ১১টায় শহরের কোর্ট মসজিদ মার্কেটে রহমান এন্টারপ্রাইজ এ গিয়ে দেখা গেছে একই চিত্র। সদ্য কলেজে ভর্তির ফরম কিনতে ও ফটো তুলতে দোকানের সামনে ভীর করছেন ১০/১৫জন ছাত্রী তাদের কাহারো মুখে মাস্ক নেই। জিজ্ঞেস করলে সুমি বেগম,পলি রানী দাস বলেন,সময় সল্পতায় বাড়ী থেকে বের হয়ে সোজা ফরম ফিলআপের জন্য শহরে আসতে হয়েছে।আমি তো সব সময় মাস্ক পরি কিন্তু আজ সাথে আনতে ভূলেগেছি।তবে তিনি ফটো তুলতে নিষেধ করে বলে সাংবাদিক ভাই এমনটি আর হবেনা।
শহরের চৌমুহনার মোড়ে গিয়েও দেখা গেছে একই অবস্থা। দুপুর ১২টায় ওই মোড়ে গিয়ে দেখা যায়, অনেকের মুখে মাস্ক নেই। বিশেষ করে যারা ফুটপাতে ফল, শাক-সবজি বিক্রি করছেন তাদের কারও মুখে মাস্ক দেখা যায়নি। ফুটপাত ধরে হেঁটে যাওয়া অনেকের মুখেও মাস্ক দেখা যায়নি।
করোনা যে মহামারি সেটা ভুলেই গেছে লোকজন
ফুটপাতে কলা বিক্রি করছেন আব্দুর রহমান। কেন মাস্ক পরেননি জিজ্ঞেস করলে তিনি বলেন, ‘মাস্ক পরলে অস্বস্তি লাগে, তাই মাস্ক পরিনি। আমরাতো সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত ফুটপাতে থাকি, সারাদিন মাস্ক পরে থাকবো কিভাবে বলেন? মাস্ক পরলে তো নিঃশ্বাস নিতে কষ্ট হয়।’
শহরের কাশিনাথ আলাউদ্দিন স্কুল এন্ড কলেজ সংলগ্ন প্রাইভেট কার ষ্ট্যান্ডে গিয়ে একই অবস্থা দেখাযায়,অধিকাংশ চালকদের মুখে মাস্ক নেই।সামাজিক দূরত্ব বজায় না রেখেই ঘেঁষা ঘেষি করে বসে আড্ডা দিচ্ছেন।
সরকারী কলেজ পড়ুয়া শাহিন আহমদ সাজু বন্ধুদের সঙ্গে আড্ডা দিচ্ছেন শহরের পৌরসভা চত্বরে তার মুখেও মাস্ক নেই। মাস্ক কেন পরেননি জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘মাস্ক পরি। সাথে মাস্ক আছে। এমনিতে পরিনি।’ এই কথা বলতে বলতেই পকেট থেকে মাস্ক বের করে মুখে পরেন সাজু।
অনেক্ক্ষণ সেখানে অবস্থান করে দেখা যায়, সড়কে চলাচলকারী অনেকের মুখে মাস্ক নেই। রিকশাচালক, সিএনজিচালক থেকে শুরু করে নিম্ন আয়ের মানুষরা মাস্ক ছাড়াই সড়কে চলাফেরা করছেন। তাদের পাশাপাশি যুবক বয়সী ছেলেদের ও মাস্ক ছাড়াই সড়কে চলাচল করতে দেখা গেছে। কুসুমবাগ পয়েন্ট, চৌমুহনী পয়েন্টে আধা ঘণ্টা অপেক্ষা করে ১০০ মানুষের মধ্যে ৩০ থেকে ৪০ জনকে মাস্ক ছাড়া চলাফেরা করতে দেখা যায়। তাদের মধ্যে ১৫ থেকে ২০জনই যুবক ও মহিলা ছিলেন।