উত্তপ্ত সিলেট ওসমানী মেডিকেল কলেজ। দুই শিক্ষার্থীর উপর হামলার ঘটনার পর থেকে বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীদের মধ্যে চলছে মুহুর্মুহু মিছিল আর স্লোগান। সোমবার (১ আগষ্ট) রাত থেকে চলছে ইন্টার্ন চিকিৎসক ও সকল বর্ষের শিক্ষার্থীদের আন্দোলন। এদিকে শিক্ষার্থীদের এই আন্দোলনে অনেকটা ব্যাহত হচ্ছে ওসমানী হাসাপাতালের রোগীদের চিকিৎসাসেবা।
হামলার ঘটনায় মঙ্গলবার (২ আগস্ট) বিকাল সাড়ে ৪টায় প্রশাসন ও আওয়ামী লীগ নেতাদের সঙ্গে বৈঠক শেষে এ সিদ্ধান্ত জানিয়েছেন আন্দোলনরতরা। পরে তারা হাসপাতাল প্রাঙ্গণে বিক্ষোভ মিছিল বের করেন।
জানা যায়, ওসমানী মেডিকেল কলেজের শেষ বর্ষের শিক্ষার্থী (ইন্টার্ন চিকিৎসক) ইমন আহমদের সঙ্গে গত (৩১ জুলাই) রোববার দুপুরে এক রোগীর দুই স্বজনের বাগবিতÐা হয়। ইন্টার্ন চিকিৎসকরা এসময় ওই দুজনকে পুলিশে সোপর্দ করেন। পরে প্রশাসনের হস্তক্ষেপে বিষয়টির মীমাংসা হয়। ওই ঘটনার জের ধরে সোমবার (১ আগস্ট) রাত ৮টার দিকে ওসমানী মেডিকেল কলেজের শেষ বর্ষের ছাত্র ইমন আহমদ (২৪) ও তৃতীয় বর্ষের ছাত্র রুদ্র নাথ (২২)-এর ওপর কলেজের পেছনে হামলার ঘটনা ঘটে। পরে সহপাঠীরা তাদেরকে উদ্ধার করে হাসপাতালে ভর্তি করেন।
এ ঘটনায় ক্ষুব্ধ হয়ে রাত সাড়ে ১০টার দিকে ধর্মঘটের ডাক দেন ইন্টার্ন চিকিৎসকরা। তারা হাসপাতালের সব বিভাগে চিকিৎসাসেবা বন্ধ করে দেন। এছাড়া কলেজের সামনের সড়কে অবস্থান নিয়ে অবরোধ এবং রাত ১টার দিকে হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মাহবুবুর রহমান ভুঁইয়াকে নিজ কক্ষে অবরুদ্ধ করেন ইন্টার্ন চিকিৎসকরা। প্রায় ঘন্টাখানেক অবরুদ্ধ ছিলেন তিনি।
ধর্মঘট ও অবরোধের খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে ছুটে যান সিলেটে মেট্রোপলিটন পুলিশের (এসএমপি) দায়িত্বশীল কর্মকর্তারা। এ ছাড়া হাসপাতালে যান সিলেট মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা মাসুক উদ্দিন আহমদ ও সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক জাকির হোসেন।
হাসপাতালের পরিচালকের কক্ষে বসে বৈঠক। রাজনীতিবিদ, প্রশাসনের কর্মকর্তা, হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ, মেডিকেল কলেজের শিক্ষক ও আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের প্রতিনিধি উপস্থিত ছিলেন বৈঠকে।
এসময় শিক্ষার্থীরা মেডিকেল কলেজে স্থায়ী পুলিশ ক্যাম্প স্থাপন, নিরাপত্তা নিশ্চিত করা, হামলাকারীদের শনাক্ত করে আইনের আওতায় আনা, হামলাকারীদের বিরুদ্ধে মেডিকেল প্রশাসনের মামলা করাসহ পাঁচ দাবি জানান। কলেজ কর্তৃপক্ষ তাদের দাবিগুলো বাস্তবায়নের আশ্বাস দিলে রাত ৩টার দিকে ধর্মঘট ও অবরোধ প্রত্যাহার করেন আন্দোলনরতরা। তবে এসময় তারা হামলাকারীদের গ্রেপ্তারের জন্য আজ (মঙ্গলবার) বেলা ২টা পর্যন্ত সময় বেঁধে দেন।
উদ্ভূত পরিস্থিতিতে আজ মঙ্গলবার বেলা দুইটায় আন্দোলনরতদের সঙ্গে কলেজ, হাসপাতাল, পুলিশ প্রশাসন ও আওয়ামী লীগ নেতৃবৃন্দ বৈঠকে বসেন। বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন সিলেট মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা মাসুক উদ্দিন আহমদ, সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক জাকির হোসেন, সিলেট জেলা আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি শফিকুর রহমান চৌধুরী ও সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট নাসির উদ্দিন খান।
বৈঠকে ইন্টার্ন চিকিৎসকের ৫ দাবি মেনে নিয়ে দ্রুততম সময়ের মধ্যে হাসপাতালে পুলিশ ক্যাম্প স্থাপন করলেও হামলাকারী কেউ গ্রেপ্তার না হওয়ায় আন্দোলন থেকে সরে আসেননি তারা। চিহ্নিত হামলকারী অন্তত ৩ জন গ্রেপ্তার না হওয়া পর্যন্ত তারা কর্মবিরতি পালন করবেন বলে ঘোষণা দিয়েছেন। তবে শুধু ইমার্জেন্সি ও হৃদরোগ বিভাগে সেবা অব্যাহত রাখবেন বলে জানিয়েছেন আন্দোলনকারীরা।
এদিকে, গত রাত ১টার দিকে হামলায় জড়িত থাকার অভিযোগে দুজনকে আটক করে পুলিশ। আটককৃতরা হলেন- নগরীর মুন্সিপাড়ার মৃত রানা আহমদের ছেলে সাঈদ হাসান রাব্বি (২৭) ও কাজলশাহ এলাকার আব্দুল হান্নানের ছেলে এহসান আহমদ (২২)। এ দুজনই ছাত্রলীগের রাজনীতিতে জড়িত বলে জানা গেছে। এ দুজনের মধ্যে সাঈদ হাসান রাব্বি সিলেট মহানগরীর ৩ নং ওয়ার্ড ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক।
তবে আন্দোলনকারীরা বলছেন- এ দুজন হামলার সময় উপস্থিত ছিলেন না। ‘আই ওয়াশের’ জন্য পুলিশ এ দুজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এজাহারনামীয় কোনো আসামি এখনও গ্রেপ্তার করতে পারেনি পুলিশ। তাই তাদের আন্দোলন অব্যাহত রয়েছে। তারা নিরাপত্তাহীনতায় ভোগছেন। চিকিৎসাসেবা না দেওয়া ছাড়াও আজ ক্লাস-পরীক্ষা বর্জন করেছেন ওসমানী মেডিকেল কলেজের আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা।
অপরদিকে, ওসমানী মেডিকেল কলেজের দুই শিক্ষার্থীর ওপর হামলা ও নারী ইন্টার্ন চিকিৎসকের শ্লীলতাহনির অভিযোগে ৮ জনকে আসামি করে দুটি মামলা দায়ের করা হয়েছে। মঙ্গলবার (২ আগস্ট) এ মামলা দুটি দায়ের করা হয়।
জানা গেছে, মেডিকেল কলেজ কর্তৃপক্ষ দুই শিক্ষার্থীর ওপর হামলার ঘটনায় ৭ জনকে আসামি করে একটি মামলা দায়ের করেছে। আর হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ নারী ইন্টার্ন চিকিৎসকের শ্লীলতাহানির ঘটনায় ১ জনের নাম উল্লেখপূর্বক অজ্ঞাত আরও ২/৩ জনকে আসামি করে আরেকটি মামলা দায়ের করে।
মামলা দায়েরের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন সিলেট কোতোয়ালি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ আলী মাহমুদ।