1. sparkleit.bd@gmail.com : K. A. Rahim Sablu : K. A. Rahim Sablu
  2. diponnews76@gmail.com : Debabrata Dipon : Debabrata Dipon
  3. admin@banglanews24ny.com : Mahmudur : Mahmudur Rahman
  4. mahmudbx@gmail.com : Monwar Chaudhury : Monwar Chaudhury
মৌলভীবাজারে হাওরে কারেন্টজালে মাছ নিধন
বৃহস্পতিবার, ০১ জুন ২০২৩, ০৭:০৫ অপরাহ্ন




মৌলভীবাজারে হাওরে কারেন্টজালে মাছ নিধন

মৌলভীবাজার প্রতিনিধি
    আপডেট : ১২ সেপ্টেম্বর ২০২২, ৮:৩১:৪৩ অপরাহ্ন

মৌলভীবাজারে কারেন্টজাল দিয়ে নদীসহ খাল-বিল ও হাওর থেকে নির্বিচারে দেশীয় প্রজাতির মাছ নিধন চলছে। হাটবাজারে অনেকটা প্রকাশ্যে বিক্রি হচ্ছে নিষিদ্ধ ঘোষিত কারেন্টজাল। এতে ডিমওয়ালা মা মাছ ও পোনা মাছসহ অন্যান্য জলজ প্রাণী অকালে মারা যাওয়ায় জীববৈচিত্র্য হুমকিতে পড়েছে। ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে অর্থনীতি। দীর্ঘদিন থেকে প্রকাশ্যে অবৈধ কারেন্টজাল দিয়ে মাছ শিকার করা হলেও আইনের যথাযথ প্রয়োগ হচ্ছে না বলে অভিযোগ উঠেছে।

দেশি মাছের আহরণ ও অফুরন্ত ভাণ্ডার হিসেবে খ্যাত মৌলভীবাজারের হাইল হাওর, কাউয়াদীঘি হাওর, হাকালুকি হাওরসহ অন্য জলাশয়গুলো। দেশি প্রজাতির মাছ- বিশেষ করে কই, পুঁটি, টেংরা, মাগুর, শিং, টাকি, শৈল, চিংড়ি, রানী মাছ ব্যাপকভাবে ধরা পড়ছে। বংশ বিস্তারের সময় থেকে শুরু করে প্রায় সারা বছরই বিস্তীর্ণ এলাকাজুড়ে প্রকাশ্যে নিষিদ্ধ ঘোষিত কারেন্টজালসহ নানা ধরনের অবৈধ জাল দিয়ে নির্বিচারে নিধন করা হচ্ছে বিভিন্ন প্রজাতির পোনা মাছ। প্রশাসনের নাকের ডগায় পোনা নিধনযজ্ঞ অনেকটা ওপেনসিক্রেট হলেও সংশ্লিষ্টরা নির্বিকার। তবে স্থানীয় মৎস্যজীবীরা বলছেন, সরকারি বিধি-নিষেধ বিষয়ে তারা জানেন না। সম্প্রতি কাউয়াদীঘির রুকুয়া, ফাটাসিংগা, হালকাটুয়া, মাঝেরবান, মাছুখালি বিলে সরজমিন দেখা যায়, বিলের মাঝখানে প্রায় ডজনখানেক মৎস্য শিকারি নৌকা দিয়ে কারেন্টজাল তুলছে। এসব ছোট আকারের মাছ না ধরলে মাত্র কয়েক দিনের ব্যবধানে মাছগুলো বড় আকার ধারণ করত। এবার বর্ষা মৌসুমে প্রচুর বৃষ্টিপাত হওয়ার প্রচুর দেশি মাছ পাওয়া যাচ্ছে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক কারেন্টজাল ব্যবহারকারী বলেন, এ জাল পানিতে দেয়ার সঙ্গে সঙ্গে মাছ জালে পড়তে থাকে। ছোট-বড় সকল প্রকার মাছ কারেন্টজালে আটকা পড়ে। কাউয়াদীঘির ফাটাসিংগা বিলে পশ্চিমপাড়ের আরেক মৎস্যজীবী নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, উপজেলার বিভিন্ন হাট-বাজারে সহজে কারেন্টজাল কিনতে পাওয়া যায়। দোকানদার বস্তার ভেতর কারেন্টজাল রেখে গোপনে বিক্রি করছে। এসব জাল ৭-৮ টাকা হাত দরে বিক্রি করছে। বিশেষ করে বাজারে এ কারেন্টজাল বেশি বিক্রি হচ্ছে।

তিনি আরো বলেন, কারেন্টজালের চেয়ে বেশি মাছ ধরা যায় মশারিজাল দিয়ে। এসব জালের পাশাপাশি ডরি, মখারজাল, ছাই দিয়ে মাছ ধরা হয়। ছোট মাছ না বড় মাছ আমাদের দেখার বিষয় না। কারণ মাছ না পাইলে আমাদের পেটে ভাত দিতে পারব না। অন্তেহরি এলাকার আরেক মৎস্যজীবী বলেন, অন্তেহরি এলাকায় কারেন্টজাল কম পাতা হয়। রক্তা, আমিরপুর, কালাকুড়া, খোজারগাঁও, শাহপুর এলাকায় বেশি পাতা হয়।

এছাড়া নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক জেলে বলেন, বেশি মাছ প্রাপ্তির আশায় আমরা সুতার জালের পরিবর্তে কারেন্টজাল দিয়ে মাছ ধরি। সুতার জালে বেশি পুঁজি লাগে, মাছ ধরা পড়ে কম এমন অভিজ্ঞতা ও ধারণা থেকেই কারেন্টজালে তাদের আগ্রহ। যে কারণে বছরের সব মৌসুমে কারেন্টজাল দিয়ে মাছ শিকার করি। কারণ আমরা খেটে খাওয়া মানুষ। জীবিকার তাগিদে হাওরে যাই। কিন্তু কারেন্টজালের উৎপাদন ও বাজারে বিক্রি বন্ধ না করে হাওরে এসে আমাদের হয়রানি করা হচ্ছে।

বড়কাপন গ্রামের জুবেদ আহমদ চৌধুরী বলেন, কাউয়াদীঘি হাওরের পোনা মাছ, মা মাছ কারেন্টজাল দিয়ে নির্বিচারে নিধন করা হচ্ছে। এসব মাছ রক্ষার জন্য প্রশাসনের কাছে বারবার অনুরোধ করার পরও রহস্যজনক কারণে নিষিদ্ধ ঘোষিত কারেন্টজালের ব্যাপারে কোনো উদ্যোগ নেয়া হচ্ছে না।

একই গ্রামের আব্দুল মিয়া বলেন, বর্তমানে কাউয়াদীঘি হাওরে কারেন্টজালের কারণে স্বাভাবিকভাবে নৌকা চলাচল করতে পারে না। জলের গ্রাম দেখতে আসেন দেশের বিভিন্ন এলাকার পর্যটক। কিন্তু স্থানীয় মৎস্যজীবীদের কারেন্টজালসহ বিভিন্ন জাল থাকার কারণে নৌকা দিয়ে হাওরে চলাচল করতে পারেন না।

এ ব্যাপারে হাওর রক্ষা সংগ্রাম কমিটির সাধারণ সম্পাদক, মৌলভীবাজার সদর উপজেলার রাজন আহমদ বলেন, কারেন্টজাল ব্যবহারকারী ও বিক্রয়কারীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার কথা থাকলেও অদৃশ্য কারণে কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ করেনি, এতে অনেক প্রজাতির মাছ বিলুপ্তসহ উৎপাদন কমে যাচ্ছে।

বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন (বাপা) মৌলভীবাজার জেলা সমন্বয়কারী আ স ম সালেহ সুহেল বলেন, বেশি লাভের আশায় নিষিদ্ধ জালের মাধ্যমে ডিমওয়ালা মা মাছসহ পোনা মাছ শিকারে দেশীয় প্রজাতির মাছের অস্তিত্ব প্রায় বিলীন হয়ে যাওয়ার পাশাপাশি জলজ প্রাণী মারা যাওয়ায় জীববৈচিত্র্য হুমকি মুখে পড়েছে। এ ব্যাপারে প্রশাসনের নীরব ভূমিকার সমালোচনা করে তিনি আরো বলেন, কারেন্টজাল উৎপাদন ও বিক্রি বন্ধ না করে জলাশয়ে অভিযান চালালে দরিদ্র মৎস্যজীবীরা ক্ষতিগ্রস্ত হন। উৎপাদনকারী ও বিক্রেতারা সবসময় ধরাছোঁয়ার বাইরে থাকেন। বাজারে বিক্রি বন্ধ হলে তারাও কারেন্টজাল কেনা থেকে বিরত থাকবেন। এ বিষয়ে কারেন্টজালের উৎপাদন ও বিক্রি বন্ধের বিষয়ে কঠোর হওয়ার জন্য সরকারের কাছে দাবি জানান তিনি। মৎস্য বিভাগ যথাযথভাবে তদারকি ও অভিযান না চালানোর কারণে জেলেরা ওই নিষিদ্ধ জাল ব্যবহার বন্ধ করেনি।

তবে এসব অভিযোগ অস্বীকার করেন মৌলভীবাজার জেলা মৎস্য কর্মকর্তা মোহাম্মদ মিজানুর রহমান। তিনি বলেন, কিছু অসাধু ব্যবসায়ী অবৈধ কারেন্টজাল গোপনে বিক্রি করছে, তাদের বিরুদ্ধে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করা হয়। পাশাপাশি কারেন্টজাল ব্যবহারকারীদের বিরুদ্ধে আমরা অভিযান পরিচালনা করি। তবে মৌলভীবাজার সদর ও রাজনগর উপজেলায় অভিযান পরিচালনা করা হবে, তাতে কারেন্টজাল ব্যবহার কমে যাবে।

মৎস্য দপ্তর সূত্রে জানা গেছে, ২০২২-২৩ অর্থবছরে জেলায় মৎস্য উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ৫৩ হাজার ১০৯ টন। এ উৎপাদনের ৪০ শতাংশ প্রাকৃতিক জলাশয় থেকে আর ৬০ শতাংশ বেসরকারি উদ্যোগে ফিশারি থেকে আহরণ করা হয়।




খবরটি এখনই ছড়িয়ে দিন

এই বিভাগের আরো সংবাদ







Copyright © Bangla News 24 NY. 2020