ডোনাল্ড ট্রাম্পকে আর প্রেসিডেন্ট হিসেবে চান না তার রিপাবলিকান দলের অনেক নেতাই।এবার তার সঙ্গে যোগ দিয়েছেন রক্ষণশীল ধনী রিপাবলিকানরা। আসন্ন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে ট্রাম্পকে আর সমর্থন দেবেন না বলে জানিয়েছেন তারা। এমনকি নিজেদের দলের প্রেসিডেন্টকে উৎখাতে দু’হাতে টাকাও ছিটাচ্ছেন।টেনেসি রাজ্যের অন্যতম ধনী জিমি টোস (৭০)। শূকর আর খাদ্যশস্যের কয়েক মিলিয়ন ডলারের খামারের মালিক তিনি। সারাজীবনই রিপাবলিকান পার্টি করেছেন। ধনীদের ওপর কর কমানো ও অস্ত্রের অধিকার আইনের মতো ট্রাম্পের ৮০ ভাগ মতেরই সমর্থক তিনি। গতবার ট্রাম্পকে জেতাতে বহু অর্থও দিয়েছেন। কিন্তু এবার ট্রাম্পের দিক থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছেন। আগামী নভেম্বরের নির্বাচনে ট্রাম্পকে হটাতে নিজের পকেটের টাকাও খরচ করছেন তিনি।এ ব্যাপারে রয়টার্সকে এক সাক্ষাৎকারে জিমি টোস বলেন, আমি তার (ট্রাম্পের) ৮০ ভাগ কাজের সঙ্গেই একমত। কিন্তু একজন আগাগোড়া মিথ্যুককে আমি সমর্থন করতে পারি না।
ট্রাম্পের ব্যাপারে এমন মনোভাব শুধু জিমির একার নয়। এই সংখ্যা এখন প্রতিদিনই বাড়ছে। ধনী ও রক্ষণশীল এই মার্কিনীরা বলছেন, ট্রাম্প যুক্তরাষ্ট্রের গণতন্ত্র এবং রিপাবলিকানের মতো সুপ্রাচীন রাজনৈতিক দলের জন্যও বড় ধরনের হুমকি। রিপাবলিকান সমর্থকদের এই অংশ এখন বিরোধী ডেমোক্রেটিক পার্টি মনোনীত প্রার্থী সাবেক ভাইস প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনকে সমর্থন করছেন এবং ৩ নভেম্বরের নির্বাচনে তাকেই ভোট দেবেন বলে মনস্থির করেছেন। খ্যাতনামা রিপাবলিকান সমর্থিত গোষ্ঠী লিংকন প্রজেক্টের শীর্ষ রিপাবলিকান ধনীরাও ট্রাম্পের পুনর্নির্বাচনের বিরুদ্ধে রাস্তায় নেমেছেন। এমনকি নির্বাচিত রিপাবলিকানদের মধ্যে যারা ট্রাম্পকে সমর্থন দিচ্ছে, শাস্তি হিসেবে তাদেরও পরিত্যাগ করা উচিত বলে মনে করে এই গোষ্ঠী। এদের কেউ কেউ আবার দুর্বল রিপাবলিকান সিনেটর উৎখাত করে সিনেটকে ডেমোক্র্যাটদের হাতে তুলে দিতে চান।
রয়টার্স জানিয়েছে,ট্রাম্পের উৎখাতে এসব ধনী রিপাবলিকানদের অর্থে ব্যাপক প্রচারণা শুরু হয়েছে। বিষয়টি ট্রাম্পও ভালোভাবেই টের পেয়েছেন। এজন্য সম্প্রতি বেশ কয়েকজন রিপাবলিকানকে সরিয়ে দিয়েছেন তিনি।বিশ্লেষকরা বলছেন, রক্ষণশীল রিপাবলিকানদের এই কর্মকাণ্ডের চূড়ান্ত ফল কী হয়, তা-ই এখন দেখার বিষয়। কারণ ২০১৬ সালের নির্বাচনে ট্রাম্পকে থামাতে কট্টর বিরোধীদের সব চেষ্টাই ব্যর্থ হয়েছে। নির্বাচিত হওয়ার পর ৪ বছর ধরে দলের ওপর ছড়ি ঘোরাচ্ছেন ট্রাম্প।তবে এবার পরিস্থিতি একেবারেই ভিন্ন এবং এর ফলাফলও ভিন্ন হওয়ার জোর সম্ভাবনা দেখা যাচ্ছে। আর এ কথা উভয় দলের কৌশল ও নীতিনির্ধারকরাই বলছেন। ২০১৬ সালে ডেমোক্রেটিক পার্টির কৌশল প্রণেতা ও ডেমোক্র্যাট প্রার্থী হিলারি ক্লিনটনের মুখপাত্র হিসেবে কাজ করেছেন ক্যারেন ফিনে। এক সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, ২০১৬ আর ২০২০ সালের যে পার্থক্যটা আমরা দেখছি, তা মূলত অর্থের পরিমাণের। ট্রাম্পকে হটাতে অর্থ ব্যয় করতে আগ্রহী এমন ধনীদের সংখ্যা অগণিত। জিমি টোস ছাড়াও ট্রাম্পবিরোধীর তালিকায় ওয়ালমার্টের উত্তরাধিকারী ক্রিস্টি ওয়ালটন, হেইজ ফান্ডের রেডলিফসহ অনেকেই রয়েছেন, যাদের সবাই রিপাবলিকান। লিংকন প্রজেক্ট গোষ্ঠীর বাইরেও বেশ কয়েকজন প্রসিদ্ধ রিপাবলিকানকে নিয়ে সম্প্রতি আরও একটি গ্রুপ গড়ে উঠেছে। মূলত বিরোধী জো বাইডেন ও তার ঘনিষ্ঠদের সমর্থন দিচ্ছে এই গ্রুপ।