হবিগঞ্জের ৯টি উপজেলার মধ্যে মাধবপুর, চুনারুঘাট, নবীগঞ্জ, বাহুবল উপজেলা পাহাড়ি এলাকা। এসব পাহাড়ি এলাকাকে ঘিরে ছোট বড় মিলে ৪১টি চা বাগান গড়ে উঠেছে। এসব বাগানের বাসিন্দা প্রায় দেড় লাখ। এর মধ্যে স্থায়ী ও অস্থায়ী মিলে প্রায় ৩২ হাজার শ্রমিক চা পাতা উত্তোলনে জড়িত।
জেলায় অবস্থিত বাগানগুলোতে ব্রিটিশ আমল থেকেই চা উৎপাদিত হচ্ছে। সেই সময় থেকে বছরের মার্চ মাসের মাঝামাঝি সময়ে চা-পাতার উৎপাদন শুরু হয়ে সমাপ্ত হয় ডিসেম্বর মাসে। কিন্তু দিনে কয়েক ঘণ্টা লোডশেডিং এবং খরার কারণে ছড়িয়ে পড়া বিভিন্ন রোগে সংকটের মুখে পড়েছে এ জেলার চা উৎপাদন। এতে বাগানগুলোতে ভরা মৌসুমে চা উৎপাদন কমে গেছে কয়েকগুণ।
চা সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, এখন চা উৎপাদনের ভরা মৌসুম। কিন্তু গত কয়েক সপ্তাহ ধরে প্রচন্ড খরার কারণে রেড স্পাইডার ও হেলোফিলিসসহ বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হচ্ছে চা গাছ। যে বাগান থেকে দিনে ৪০ থেকে ৪৫ হাজার কেজি পাতা তোলা হয়, সেখানে উৎপাদন হচ্ছে ৮ থেকে ১০ হাজার কেজি।
জেলার চুনারুঘাট উপজেলার ডানকান ব্রাদার্সের চান্দপুর চা বাগান কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, এসময় তাদের বাগানে দিনে ৪০ হাজার কেজির বেশি পাতা উৎপাদন হওয়ার কথা, কিন্তু উৎপাদন হচ্ছে মাত্র ৮ থেকে ১০ হাজার কেজি। একই অবস্থা ভ্যালির আমু, নালুয়া, লস্করপুর, চন্ডিছড়াসহ অন্যান্য বাগানে। ছোট বাগানগুলোতে উৎপাদনের অবস্থা আরও খারাপ। গত জুন পর্যন্ত প্রতিটি বাগানে উৎপাদন ঘাটতি রয়েছে ১৫ থেকে ৪৫ শতাংশ।
সরকারের নির্দেশনা অনুযায়ী দিনে দুই ঘণ্টা লোডশেডিং করার কথা থাকলেও লোডশেডিং হচ্ছে কমপক্ষে ৫ ঘণ্টা। এর প্রভাব পড়েছে চা শিল্পে। অধিকাংশ চা বাগানের ফ্যাক্টরি প্রতিদিন গড়ে ৭ থেকে ৮ ঘণ্টা বন্ধ থাকছে। এছাড়া বার বার ফ্যাক্টরি বন্ধ হওয়ার কারণে নষ্ট হচ্ছে চায়ের গুণগত মান। জেনারেটর ব্যবহার করলে এতে বাড়ছে উৎপাদন ব্যয়।
চান্দপুর চা বাগানের সিনিয়র ব্যবস্থাপক শামীমুল হুদা বলেন, ‘চায়ের ভরা মৌসুমে আশানুরূপ পাতা পাওয়া যাচ্ছে না। বৃষ্টি নেই, তাই রোগের আক্রমণও বাড়ছে। পাশাপাশি বিদ্যুতের সমস্যা নতুন করে সংকট তৈরি করেছে।’
দেউন্দি চা বাগানের সিনিয়র ব্যবস্থাপক রিয়াজ উদ্দিন বলেন, ‘চায়ের ভরা মৌসুমে প্রচন্ড খরায় সেচ দিতে হচ্ছে। নতুন করে সমস্যা সৃষ্টি করেছে লোডশেডিং। এতে উৎপাদন খরচ কয়েকগুণ বেড়েছে।’
বাহুবলের আমতলী চা বাগানের ম্যানেজার সোহেল রানা পাঠান বলেন, ‘গরম তার ওপর লোডশেডিং। নিয়মিত হচ্ছে না বৃষ্টি। এ অবস্থায় চা পাতা উৎপাদনে বিরাট প্রভাব পড়েছে।‘
লস্করপুর ভ্যালির চেয়ারম্যান তেলিয়াপাড়া চা বাগানের ব্যবস্থাপক মো. রফিকুল ইসলাম বলেন, ‘পুরো ভ্যালিতেই এবার চায়ের উৎপাদনে বাধা দীর্ঘ মেয়াদি খরা, নানা রোগ এবং লোডশেডিং। সব মিলিয়ে চা শিল্প বড় সমস্যায় পড়তে যাচ্ছে।’