1. sparkleit.bd@gmail.com : K. A. Rahim Sablu : K. A. Rahim Sablu
  2. diponnews76@gmail.com : Debabrata Dipon : Debabrata Dipon
  3. admin@banglanews24ny.com : Mahmudur : Mahmudur Rahman
  4. mahmudbx@gmail.com : Monwar Chaudhury : Monwar Chaudhury
শীতে কাবু সুনামগঞ্জের হাওরপাড়ের মানুষ
রবিবার, ২৬ মার্চ ২০২৩, ০৮:৫৩ পূর্বাহ্ন




শীতে কাবু সুনামগঞ্জের হাওরপাড়ের মানুষ

সুনামগঞ্জ প্রতিনিধি :
    আপডেট : ০৭ জানুয়ারী ২০২৩, ১০:৩২:২২ অপরাহ্ন

শীতে কাবু সুনামগঞ্জের হাওরপাড়ের মানুষ। শহরের হতদরিদ্ররা নানাভাবে সহায়তা পেলেও গ্রামের মানুষেরা শীতবস্ত্রের অভাবে ভীষণ কষ্টে আছে। এক কম্বলে চারজন ঘুমাচ্ছেন, এমন অবস্থাও আছে কোন কোন পরিবারে।

সুনামগঞ্জ শহরতলির সরদাবাজ গ্রামের দিনমজুর বিকাশ রঞ্জন দাস ও রেখা রানী দাসের পাঁচ ছেলে মেয়ে। জুনের ভয়াবহ বন্যায় গলা সমান পানি ছিল এই দ¤পত্তির বসত ঘরে। বিছানাপত্র-থালাবাসন সবই ভেসে যায় ঢলে। একজনের রোজগারে চলা টানা পোড়নের সংসারে ছেলে মেয়ের পড়াশুনা খরচ যুগিয়ে কোনভাবে খেয়ে না খেয়ে বেঁচে আছে তারা। গত তিনদিন শীতের সঙ্গে লড়াই করে একেবারে অসহায় হয়ে পড়েছে এই পরিবারের সদস্যরা।

রেখা রানী দাস বললেন, এলাকার মেম্বারে দুই তিন দিন আগে একখান (একটা) কম্বল দিছলা (দিয়েছিলেন), আরেকজনে (অন্য একজন) দিছলা (দিয়েছিলেন) আরেক কম্বল। এই দুই কম্বল দিয়াই চাইর (চার) পুয়া পুরি (ছেলে মেয়ে) আর আমরা দুইজন কোনভাবে ঘুমায়রাম। এক পুরি মামার বাড়িতে আছে। কয়েকদিন ধইরা তিন পুরি লইয়া এক কম্বল দিয়া আমিসহ চাইর জন ঘুমানি লাগের (ঘুমাতে হয়)। বাইচ্ছাইনতের (ছেলে মেয়ের) বাবায় পুয়ারে লইয়া আরেক কম্বল দিয়া ঘুমাইন। কেউরই (কারোরই) শীত কুলায় না (রক্ষা হয় না), কিতা করমু (কি করবো) উপায়তো নাই (কোন ব্যবস্থা নাই)। ঘরের ভাঙা বেড়াগুড়া দিয়াও শীত হামায় (ঢুকে), কেমনে শীত যাইতো। বিকাশ ও রেখা রানীর মত বিপদাপন্ন অবস্থা হাওরপাড়ের গ্রামে গ্রামে। বিশেষ করে গেল জুনের বন্যায় ঢল যেসব এলাকা দিয়ে গেছে, এসব গ্রামের মানুষের বেহাল অবস্থা। সুনামগঞ্জ সদর, দোয়ারাবাজার ও ছাতকের বেশিরভাগ এলাকাতেই এখন এমন বিপদ। সুনামগঞ্জ শহরের বড়পাড়ার বাসিন্দা নুরুল আমিন ও পিয়ারা খানমের ঘরের ভেতর দিয়ে গেল ১৬ জুন ¯্রােতে গেছে। বন্যা পরবর্তী সময়ে বসতঘরের ছাল ছাড়া কিছুই পান নি এই দ¤পত্তি। নুরুল আমিন ফুটপাতে বসে সামান্য লেবু বিক্রয় করে সংসার চালান। সরকারি সহায়তার কিছু টাকা দিয়ে তিনি একটি লেপ কিনেছিলেন। পিয়ারা খানম বললেন, এক লেপ দিয়া (দিয়ে) কিলাখান (কেমনে) চাইর পুয়া-পুরিরে লইয়া ঘুমাইতাম কইন (বলেন) ভাই। সুনামগঞ্জ শহরতলির কোরবাননগর ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান আবুল বরকত বললেন, শীতের তীব্রতায় বিপদে পড়েছেন দরিদ্র মানুষেরা। গেল বন্যায় সবকিছু হারানো এসব মানুষ একটি কম্বল নেবার জন্য বার আসছেন আমাদের অফিসে। ইউনিয়নের সকল গ্রামে কম্বল বিতরণ করতে তিন হাজার কম্বল প্রয়োজন, আমরা পেয়েছি তিনশ। লুকিয়ে লুকয়ে এসব কম্বল বিতরণ করতে হয়েছে।

জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন কর্মকর্তা মোহাম্মদ শফীকুল ইসলাম বললেন, শতাব্দির ভয়াবহ বন্যায় এবার বহু মানুষের বিছানাপত্র ঘরবাড়ি নষ্ট হয়েছে। এই জেলায় অতিরিক্ত কম্বল বরাদ্দের জন্য তিনবার চিঠি পাঠানো হয়েছে। অতিরিক্ত কোন বরাদ্দ এখনো পাওয়া যায়নি। রুটিন বরাদ্দের ৪৫ হাজার ১০০ কম্বল ১২ উপজেলায় পাঠানো হয়েছে।

এর মধ্যে তাহিরপুরে তিন হাজার পাঁচশ, জামালগঞ্জে তিন হাজার, ধর্মপাশায় তিন হাজার, শাল্লায় দুই হাজার, দিরাইয়ে চার হাজার, শান্তিগঞ্জে চার হাজার, সুনামগঞ্জ সদরে পাঁচ হাজার, বিশ^ম্ভরপুরে দুই হাজার পাঁচশ, ছাতকে ছয় হাজার পাঁচশ, দোয়ারাবাজারে পাঁচ হাজার, মধ্যনগরে দুই হাজার এবং জেলা প্রশাসকের কার্যালয় হতে ছয়শ কম্বল বিতরণ করা হয়েছে। সব উপজেলারই কম্বল বিতরণ শেষ প্রায়। জেলা প্রশাসক দিদারে আলম মোহাম্মদ মাকসুদ চৌধুরী বললেন, মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে ৪৫ হাজার ১০০ শীতবস্ত্র পেয়েছি। সেগুলো উপজেলায় উপজেলায় বিতরণ করা হয়েছে। কিন্তু তা প্রয়োজনের তুলনায় অপ্রতুল। ইতিমধ্যে চিঠি লিখেছি বাস্তবতা বিবেচনা করে আরও শীতবস্ত্র পাঠানোর জন্য। পাওয়ার সাথে সাথে সেগুলো বিতরণ করা হবে। এছাড়াও শীতার্ত মানুষের শীত নিবারণে যারা বিত্তবান আছেন তাদেরও এগিয়ে আসার আহবান করছি।

সুনামগঞ্জ-৫ আসনের সংসদ সদস্য জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি মুহিবুর রহমান মানিক বললেন, গত জুনের ভয়াবহ বন্যার ঢলের পানিতে অনেক বাড়িঘর নষ্ট হয়েছে। অনেকের ঘরের খেতা-বালিশ ভেসে গেছে, নষ্ট হয়েছে। মানুষ এখনো বসতঘর মেরামত করতে পারেনি। শীতের কনকনে বাতাস ঘরে ঢুকছে। কেতা-কম্বলও নেই। এই অবস্থায় এই জেলার জন্য কম্বলের বিশেষ বরাদ্দ প্রয়োজন। এখনো পর্যন্ত যা পাওয়া গেছে আমরা বিতরণ করেছি। কিছু মানুষের উপকার হয়েছে।




খবরটি এখনই ছড়িয়ে দিন

এই বিভাগের আরো সংবাদ







Copyright © Bangla News 24 NY. 2020