সম্মিলিত সামাজিক আন্দোলনের সভায় বক্তারা বলেছেন, মুক্তিযুদ্ধের অসাম্প্রদায়িক ধারায় বিবেকবান মানুষের গণতান্ত্রিক চেতনায় বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠা করা গেলেই শহীদ বুদ্ধিজীবি ও ৩০ লক্ষ শহীদের ত্যাগের বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠা হবে। একইসাথে শোষণ, বঞ্চনা, বৈষম্য ও সাম্প্রদায়িকতামুক্ত সমাজ প্রতিষ্ঠায় জাতীয় জাগরণ গড়ে তুলতে হবে।
সোমবার (১২ ডিসেম্বর) শহীদ বুদ্ধিজীবি দিবসের আলোচনা সভায় বক্তারা উপরোক্ত কথাগুলো বলেন। সংগঠনের প্রেসিডিয়াম সদস্য ডা. অসিত বরণ রায়ের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সভায় বক্তারা বলেন,বিজয়ের উষালগ্নে পাকিস্তানী স্বৈরশাসকদের নীলনকশা বাস্তবায়ন ও বাঙালী জাতিসত্ত্বার ইতিহাস মুছে দেবার গভীর ষড়যন্ত্রে তৎকালীন সাম্প্রদায়িকতাবাদী দেশীয় ও আন্তর্জাতিক দালাল জামায়াতে ইসলাম ও তাদের সহযোগি ইসলামী ছাত্র সংঘের নেতৃত্বে দেশের খ্যাতিমান শিক্ষক, ডাক্তার, বুদ্ধিজীবিদের নামের তালিকা তৈরী করে নৃশংসভাবে নির্যাতন চালিয়ে মধ্যযুগীয় কায়দায় হত্যা করা হয়। তারা মনে করেছিলো বুদ্ধিজীবিদের হত্যার মধ্যদিয়ে বাঙালী জাতিসত্ত্বাকে ইতিহাস থেকে মুছে দেয়া যাবে। কিন্তু বাংলার দামাল ছেলেরা তাদের ইস্পাত কঠিন দৃঢ়তার মধ্যদিয়ে স্বৈরাচার পাকিস্তান ও তাদের দালালদের পরাজিত করে পৃথিবীর ইতিহাসে স্বাধীন বাংলাদেশ অর্জন করতে সক্ষম হয়।
সভায় অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য রাখেন সংগঠনের অন্যতম প্রেসিডিয়াম সদস্য এডভোকেট এসএমএ সবুর, ড. সেলু বাসিত, সাধারণ সম্পাদক সালেহ আহমেদ, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক অধ্যক্ষ সিরাজুল ইসলাম, সাংগঠনিক সম্পাদক জাহাঙ্গীর আলম সবুজ, সম্পাদক মন্ডলীর সদস্য হান্নান চৌধুরী, সাজেদুল আলম রিমন, বিপ্লব চাকমা, কেন্দ্রীয় নেতা আব্দুল ওয়াহেদ, মোঃ নুরুল আমিন, কামরানুর রশীদ তুহিন, ইসরাত জাহান সুমনা প্রমুখ।
সভাপতির বক্তব্যে ডা. অসিত বরণ রায় বলেন, ক্ষমতাসীন সরকারের উপর সবসময় গণতান্ত্রিক ধারা সমুন্নত রাখার দায়িত্ব বেশি থাকলেও আমাদের দেশে কোন সরকারই জনগণের আকাঙ্খা তোয়াক্কা করেননি। ফলশ্রুতিতে নির্বাচন নির্বাচন খেলার ধর্মান্ধদের সাথে আপোষ করে ক্ষমতার পালাবদলে জাতীয় অর্জন ও জাতিসত্ত্বা এখন সংকুচিত। রাষ্ট্রের প্রতিটি ক্ষেত্রে ধর্মান্ধ শক্তি তাদের অবস্থান নিশ্চিত করে এখন দেশ বিরোধী কর্মে লিপ্ত হচ্ছে। এদের দ্রুত চিহ্নিত করে সাম্প্রদায়িকতার মূল উৎপাটন করতে হবে।
ড. সেলু বাসিত বলেন, মুক্তিযুদ্ধ পরবর্তী যে দলই ক্ষমতাসীন হয়েছেন তারাই স্বাধীনতা বিরোধী শক্তিকে তোষণ করে সমাজে, রাষ্ট্রে রাজনীতিতে প্রতিষ্ঠা করেছে। এখনো সেই ধারা অব্যাহত রয়েছে। দেশে জনজীবনের অস্থিরতা সামাজিক অনাচার, দ্রব্যমূলের উর্ধ্বগতি, সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের নিরাপত্তাহীনতার মতো ঘটনাবলী উপেক্ষা করে শুধুমাত্র ক্ষমতায় যাওয়া ও টিকে থাকার লড়াইয়ের মাঝে বুদ্ধিজীবি হত্যাকারী ও তাদের দোসরদের এখনো তোষামোদ করার প্রতিযোগিতা চলছে। এই অপশক্তি সমুহের বিরুদ্ধে মুক্তিযুদ্ধের মুল চেতনায় শোষণ, বঞ্চনা, বৈষম্য ও সাম্প্রদায়িকতামুক্ত সমাজ প্রতিষ্ঠায় জাতীয় জাগরণ গড়ে তুলতে হবে।
সাধারণ সম্পাদক সালেহ আহমেদ বলেন, আমাদের মহান সংবিধানে জনগণ সকল ক্ষমতার মালিক নিশ্চিত করা থাকলেও দুর্ভাগ্যজনকভাবে স্বাধীনতার ৫২ বছর পর এখন ক্ষমতায় টিকে থাকা ও যাওয়ার নিয়ামক শক্তি হলো সাম্প্রদায়িক অপশক্তি, নির্বাচন কেন্দ্রীক আন্দোলন সংগ্রামের নামে সবসময়ই শহীদ বুদ্ধিজীবি হত্যাকারী তাদের দোসরদের আড়াল করা যেন জাতির ললাটে প্রলেপযুক্ত করা হয়ে আছে। বর্তমান ক্ষমতাসীন সরকার যেমন করে হেফাজতের মতো ফ্যাসিষ্ট শক্তির সাথে গোপন চুক্তি করে দেশের শিক্ষা, সংস্কৃতি ও জাতীয় চেতনাকে বিসর্জন দিয়েছেন তেমনি আন্দোলনের নামে বিএনপি আবারো একই পথে হাটছে। আমরা মনেকরি এই সংকুচিত ও নির্বাসিত গণতন্ত্রের রাজনীতি নয়, মুক্তিযুদ্ধের অসাম্প্রদায়িক ধারায় বিবেকবান মানুষের গণতান্ত্রিক চেতনায় বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠা করা গেলেই শহীদ বুদ্ধিজীবি ও ৩০ লক্ষ শহীদের ত্যাগের বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠা হবে।