পাকিস্তানের সাবেক প্রেসিডেন্ট ও সেনাপ্রধান জেনারেল পারভেজ মোশাররফ আর নেই । রোববার সংযুক্ত আরব আমিরাতের আমেরিকান হাসপাতালে তিনি ইন্তেকাল করেন। পারভেজ মোশাররফের পরিবারের সদস্যদের বরাতে পাকিস্তানের সংবাদমাধ্যম জিও নিউজ জানায়, পারভেজ মোশাররফ দীর্ঘদিন অসুস্থ ছিলেন। কয়েক সপ্তাহ ধরে সংযুক্ত আরব আমিরাতের ‘আমেরিকান হাসপাতালে’ ভর্তি ছিলেন তিনি। রোববার সেখানেই তার মৃত্যু হয়।
সাবেক এই সামরিক শাসক গত বছরের জুনে তিন সপ্তাহ হাসপাতালে ভর্তি ছিলেন। ২০১৮ সালে অল পাকিস্তান মুসলিম লীগ (এপিএমএল) ঘোষণা দেয়, তিনি বিরল রোগ অ্যামাইলয়েডোসিসে ভুগছিলেন। এক বিবৃতিতে পাকিস্তানের আন্তঃবাহিনী জনসংযোগ দফতর শোক প্রকাশ করেছে।
অ্যামাইলয়েডোসিস হলো বিরল রোগ, যা সারা শরীরজুড়ে অঙ্গ এবং টিস্যুতে অ্যামাইলয়েড নামক একটি অস্বাভাবিক প্রোটিন তৈরি করে। এ রোগ মানবদেহের অঙ্গ এবং টিস্যুগুলোর জন্য সঠিকভাবে কাজ করা কঠিন করে তুলতে পারে।
পারভেজ মোশাররফ ১৯৯৯ সালের ১২ অক্টোবর সামরিক অভ্যুত্থানের মাধ্যমে নওয়াজ শরীফকে মতাচ্যুত করে মোশাররফ রাষ্ট্রমতা দখল করে নেন। ২০০১ সালের ২০ জুন তারিখে তিনি রাষ্ট্রপতির পদ গ্রহণ করেন।
১৯৪৩ সালে ভারতের দিল্লিতে জন্ম হলেও পাকিস্তানের করাচী ও তুরস্কের ইস্তাম্বুলে বড় হন পারভেজ মোশাররফ। পাকিস্তান মিলিটারি একাডেমিতে যোগ দেন ১৯৬১ সালে। ১৯৬৪ সালে সেকেন্ড লেফটেন্যান্ট হিসেবে কমিশন লাভ করেন। ঐ পদবিতেই ১৯৬৫ সালে পাক-ভারত যুদ্ধে অংশ নেন।
১৯৯৮ সালের অক্টোবরে লেফটেন্যান্ট জেনারেল থেকে পারভেজ মোশাররফের পদবী জেনারেলে উন্নীত করেন তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী নওয়াজ শরীফ। জেনারেল হিসেবে পারভেজ সেনাবাহিনী প্রধান এবং চেয়ারম্যান অব দ্যা জয়েন্ট চিফস অব স্টাফ কমিটির দায়িত্ব পেয়েছিলেন। ১৯৯৯ সালে ভারতে হামলার মূল পরিকল্পনা পারভেজই করেছিলেন যেটা পরে কার্গিল যুদ্ধতে রূপ নেয়।
প্রধানমন্ত্রী নওয়াজ শরীফের সঙ্গে বিভিন্ন বিষয়ে তর্কাতর্কি থাকায় পারভেজকে সামরিক বাহিনী থেকে বরখাস্ত করার সিদ্ধান্ত নেন নওয়াজ শরীফ। এর জবাবে ১৯৯৯ সালে নওয়াজ শরীফকে সামরিক অভ্যুত্থানের মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে সরিয়ে দেন জেনারেল পারভেজ। শরীফ গৃহবন্দী হন এবং তাকে রাওয়ালপিন্ডি সেন্ট্রাল জেলে আটকে রাখা হয়।
পারভেজ দেশের শাসনমতা নিজের হাতে তুলে নেন এবং ২০০১ সালের ২০ জুন নিজেকে অয়াকিস্তানের রাষ্ট্রপতি ঘোষণা করেন। ২০০২ সালের ১ মে একটি রেফারেন্ডামের মাধ্যমে ৫ বছরের জন্য পাকিস্তানের রাষ্ট্রপতি থাকবেন বলে জানান তিনি।
মতায় বসার সঙ্গে সঙ্গেই শওকত আজিজকে পাকিস্তানের নতুন প্রধানমন্ত্রী নিয়োগ দেন পারভেজ মোশাররফ। তিনি মতায় আসার কয়েক বছরের মধ্যেই বহুবার জঙ্গিদের হামলার শিকার হন, যদিও প্রত্যেকবারই বেঁচে যান। দেশদ্রোহের অভিযোগে পাকিস্তানের লাহোর উচ্চ বিচারালয়ে পারভেজ মোশাররফকে মৃত্যুদণ্ডের রায় দেওয়া হয়। যদিও অল্প সময় পরই সেই রায় বাতিল করা হয়।