সিলেটে প্রস্তুত হচ্ছে ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট জেলা হাসপাতাল। ৬ দশমিক ৯৮ একর জায়গার উপর নির্মিত এই হাসপাতালের ব্যয় নির্ধারণ করা হয়েছে ৮৩ কোটি টাকা। নগরীর চৌহাট্টাস্থ শহীদ শামছুদ্দিন হাসপাতালের পাশে পূর্বের আবুসিনা ছাত্রাবাসের স্থানে ২০১৯ সালে হাসপাতাল নির্মাণের কাজ উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ১৫ তলা ভিত্তি বিশিষ্ট এই হাসপাতালটির বেইজমেন্টসহ ৮ তলা ভবনের কনক্রিট অবকাঠামো ইতোমধ্যে সম্পন্ন হয়েছে। এখন গাঁথুনি ও ফিটিংস এর কাজ চলছে। তবে, অর্থ ও কিছু বিষয়ে সিদ্ধান্ত না পাওয়ায় কাজ দ্রুত শেষ করতে পারছেন না বলে জানান সংশ্লিষ্ট ঠিকাদার প্রতিষ্ঠান।
এদিকে, গণপূর্ত বিভাগের নির্মাণ কাজের সাথে সিলেট স্বাস্থ্য বিভাগ কে সংযুক্ত না করায় হাসপাতালের নির্মাণ কাজের অগ্রগতি সম্পর্কে স্বাস্থ্য অফিসে কোন তথ্য নেই বলে জানান অধিদপ্তরের সিলেটের বিভাগীয় পরিচালক ডা. হিমাংশু লাল রায়। তবে গণপূর্ত বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী রিপন কুমার রায় বলছেন,স্বাস্থ্য অধিদপ্তর এর সিলেট বিভাগীয় পরিচালকের বক্তব্য সঠিক নয়।
আবুসিনা ছাত্রাবাসে জেলা হাসপাতাল নির্মাণের শুরুর দিকে একটি গ্রæপ এখানে প্রতœতাত্তি¡ক নিদর্শন উল্লেখ করে উদ্যোগের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ বিক্ষোভ শুরু করেন। অবশেষে সাবেক অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত ও পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. একে আব্দুল মোমেনের দৃঢ়তায় ২০২০ সালের জানুয়ারিতে হাসপাতালের কাজ শুরু করে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। কিন্তু করোনা মহামারির কারণে হাসপাতাল নির্মাণের কাজ বেশ কিছুদিন বন্ধ রাখা হয়। বর্তমানে বেইসমেন্টসহ ৮তলা ভবনের কনক্রিট স্ট্রাকচারের কাজ সম্পন্ন হয়ে গেছে। এখন গাঁথুনি, প্লাস্টার ও ফিটিংসের কাজ চলছে।
যা যা থাকছে হাসপাতালটিতে
হাসপাতাল ভবনের বেইজমেন্ট এ থাকবে কারপার্কিং, ১ম তলায় টিকেট কাউন্টার, ওয়েটিং রুমসহ প্রয়োজনীয় কক্ষ, ২য় তলায় আউটডোর, রিপোর্ট ডেলিভারি ও কনসালটেন্স চেম্বার, ৩য় তলায় ডায়াগনস্টিক, ৪ তলায় কার্ডিয়াক ও জেনারেল ওটি, আইসিসিইউ, সিসিইিউ, ৫ম তলায় থাকবে গাইনি বিভাগ, অবথালমোলজি, অর্থপেডিক্স ও ইএনটি বিভাগ, ৬ষ্ঠ, ৭ম ও ৮ম তলায় ওয়ার্ড ও কেবিন। এরমধ্যে আইসিইউ বেড থাকবে ১৯টি এবং সিসিইউ বেড ৯টি এবং ৪০টি কেবিন থাকবে। ভবনের বিদ্যুৎ সরবরাহ স্বাভাবিক রাখতে ৯শ থেকে ১ হাজার কেভি ক্ষমতার একটি ট্রান্সফরমার বসানো হবে বলে জানান সংশ্লিষ্টরা। জরুরি প্রয়োজনের জন্য সাথে থাকবে ৩শ কেভি অটোডিজেল জেনারেটর। হাসপাতালটি ২৫০ শয্যার জন্য নির্মাণ করা হলেও এর শয্যা সংখ্যা ৩২৩টি হবে বলে জানিয়েছেন ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা।
ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের প্রকল্পের দায়িত্বে থাকা কর্মকর্তা প্রকৌশলী রিমন জানান, ইতোমধ্যে কাজের অগ্রগতি ৬৫ ভাগ এবং আর্থিক অগ্রগতি হয়েছে ৫০ ভাগ। আগামী জুনের মধ্যে কাজ শেষ করার সময় রয়েছে। অর্থ বরাদ্দ না পাওয়ায় ও কিছু বিষয়ে সিদ্ধান্ত না আসায় এখন কাজ ধীরে চলছে।
যা বলছে স্বাস্থ্য বিভাগ
হাসপাতাল নির্মাণ ও তদারকিতে সিলেট স্বাস্থ্য বিভাগের সাথে গণপূর্ত বিভাগ সমন্বয় করেনি বলে অভিযোগ করেছে স্বাস্থ্য বিভাগ। অপরদিকে, গণপূর্ত অফিস তা অস্বীকার করেছে। হাসপাতালের অগ্রগতি সম্পর্কে সিলেট স্বাস্থ্য বিভাগ কোন তথ্য পায় না বলে জানান সিলেট স্বাস্থ্য বিভাগ সংশ্লিষ্টরা। হাসাতালের নির্মাণ কাজের সাথে স্বাস্থ্য অফিসকে সংযুক্ত করা হয়নি। ফলে নির্মাণ অগ্রগতি সম্পর্কে তারা কিছুই জানেন না। এব্যাপারে মন্ত্রণালয়ে প্রেরিত একটি চিঠিতে হাসপাতাল নির্মাণের স্থাপত্য নকশা, কর্মপরিকল্পনা, সেবা প্রদানের জন্য সুবিধা-অসুবিধা বিবেচনায় কক্ষের সুবিন্যাসকরণ ইত্যাদি বিষয় স্বাস্থ্য বিভাগের দায়িত্বশীলদের মধ্যে সিভিল সার্জন, বিভাগীয় পরিচালক অথবা ওসমানী হাসপাতালে পরিচালকের নিকট কোন কাগজপত্রাদি দাখিল করা হয়নি বলে উল্লেখ করেছেন তারা। স্বাস্থ্য বিভাগীয় একটি প্রতিষ্ঠান নির্মাণে ভবনের ব্যবহারকারী হিসেবে কোন আলাপ আলোচনা বা তদারকি কার্যক্রমে কোন প্রকার সমন্বয় না করায় সেবা গ্রহীতাদের সার্বিক চাহিদার সাথে সমন্বয় রেখে কার্যক্রমটি সম্পাদনের জন্য স্বাস্থ্য বিভাগের পক্ষ থেকে একজন কর্মকর্তা নিয়োগ দেয়ার বিষয়টি চিঠিতে উল্লেখ করা হয়েছে। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সিলেট বিভাগীয় পরিচালক ডা. হিমাংশু লাল রায়ের নিকট হাসপাতালের অগ্রগতি সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি জানান, তাদের নিকট এব্যাপারে কোন তথ্য নেই। তিনি নিজ দায়িত্বে কয়েক বার পরিদর্শন করেছেন। মন্ত্রণালয়ে চিঠি দিয়েছেন যাতে হাসপাতালের নির্মাণ কাজের বিষয়টি তারা দেখে প্রয়োজনীয় পরামর্শ দিতে পারেন।
যা বলছে গণপূর্ত বিভাগ
স্বাস্থ্য বিভাগের চিঠির বিষয় উল্লেখ করলে সিলেট গণপূর্ত বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী রিপন কুমার রায় বলেন, এ তথ্য সঠিক নয়। তিনি বলেন, মন্ত্রণালয়ের চিঠির পর টেন্ডার শিডিউল, নকশাসহ সব কাগজপত্র সিলেট স্বাস্থ্য বিভাগকে দেয়া হয়েছে। প্রতি তলায় ছাদ ঢালাইয়ের সময় তাদের জানানো হয়েছে এবং তারা এসেছিলেন। তিনি বলেন, সিলেট স্বাস্থ্য বিভাগকে একজন কর্মকর্তা নিয়োগ দেয়ার জন্য বলা হয়েছিল, যাতে দেয়াল, কক্ষ বা বিল্ডিংয়ের কোথাও সমস্যা বা প্রয়োজনীয়তা থাকলে বললে আমরা সে অনুযায়ী ব্যবস্থা নিতে পারি। কিন্তু তারা কোন লোক দেননি। জায়গা, বিল্ডিং, টাকা স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের। তারা শুধু কাজ করিয়ে দিচ্ছেন বলে জানান নির্বাহী প্রকৌশলী। কাজের অগ্রগতি সম্পর্কে তিনি বলেন, ইতোমধ্যে ৬৫ থেকে ৭০ ভাগ কাজ সম্পন্ন হয়েছে। কিছু বিষয় ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের অনুমোদনের অপেক্ষায় আছে। তবে নির্ধারিত সময় আগামী জুনের কাছাকাছি সময়ের মধ্যে কাজ সম্পন্ন হবে বলে তিনি আশা প্রকাশ করেন।
হাসপাতাল নিয়ে প্রত্যাশা
হাসপাতালটিকে একটি বিশেষায়িত হাসপাতাল হিসেবে গড়ে তোলার উপর জোর দিয়েছেন স্থানীয় সচেতন মহল। সিলেটে নতুন হাসপাতাল নির্মাণে তারা পররাষ্ট্রমন্ত্রীকে ধন্যবাদ জানিয়ে হাসপাতালটিকে একটি কিডনি, লিভার, হৃদরোগ অথবা নিউরোলজি চিকিৎসার বিশেষায়িত হাসপাতাল হিসেবে গড়ে তোলার ব্যাপারে দৃষ্টি আকর্ষণ করেন।