দুটি কমিটিতে সদস্য সংখ্যা মাত্র চারজন। জেলা ও মহানগরে পৃথক দুটি কমিটির এই চারনেতাই কাটিয়ে দিলেন তিনবছর। পুরো মেয়াদে চারজনের কমিটি আলোর মুখ দেখেনি পূর্ণাঙ্গ কমিটির। ফলে সংগঠনে স্থান পায়নি নতুন কোনো মুখ। বিস্তৃতিও ঘটেনি সংগঠনের। এ নিয়ে নেতাকর্মীদের ক্ষোভ আছে বিস্তর, কিন্তু তাতেও লাভ হয়নি গেল তিনবছরে। তবে চারনেতা বলছেন,‘বিষয়টি আমাদের হাতে নয়। সিদ্বান্ত নেবে কেন্দ্র।’ আর ‘হবে’ ‘হচ্ছে’ বলে কেন্দ্র কাটিয়ে দিয়েছে প্রায় দুই বছর। জেলা এবং মহানগরে চারনেতা বিশিষ্ট এই সংগঠনের নাম যুবলীগ। সিলেট জেলা এবং মহানগরে হাজারো নেতা জেলা ও মহানগর যুবলীগের পরিচয় দিলেও সভাপতি এবং সম্পাদকই মূলত বৈধ প্রতিনিধিত্ব করছেন সংগঠনের।
২০১৯ সালের ২৭ জুলাই সিলেটে অনুষ্ঠিত হয় যুবলীগের কাউন্সিল। ওইদিন কাউন্সিলের মাধ্যমে সিলেট মহানগর যুবলীগের সভাপতি আলম খান মুক্তি ও সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন মুশফিক জায়গীরদার। এর দু’দিন পর অর্থাৎ ২৯ জুলাই জেলা যুবলীগের কাউন্সিলে সভাপতি শামীম আহমদ (ভিপি শামীম) ও সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন মো.শামীম আহমদ (সীমান্তিক শামীম)। প্রত্যক্ষ ভোটের এই কাউন্সিল সরাসরি তত্বাবধানে ছিলেন সংগঠনের তৎকালীন চেয়ারম্যান মোহাম্মাদ ওমর ফারুক চৌধুরী।
কমিটি ঘোষণার মাসখানেক পর সারাদেশ শুরু হয় শুদ্ধি অভিযান। এই অভিযানে বাদ যান নি যুবলীগ চেয়ারম্যান ওমর ফারুক চৌধুরীও। আর অভিযান থেকে ক্যাসিনো কাÐে শেষ পর্যন্ত চেয়ারম্যান পদ হারান তিনি। এই ঘটনার পর ছন্দ হারিয়ে ফেলে কেন্দ্রীয় যুবলীগ। শুদ্ধি অভিযান পরবর্তী ক্যাসিনো কাণ্ড, চাঁদাবাজি এসব থেকে যুবলীগকে বের করতে পরশ-নিখিলের নেতৃত্বে কাজ শুরু হয়। তৃণমূল থেকে শুরু থেকে জেলা পর্যন্ত প্রত্যেক কমিটিতে শুদ্ধি অভিযান পরিচালনা করা হয়। এ অভিযানে ৩ মাস চলে যায়।
এদিকে কেন্দ্রের নির্দেশনা না পাওয়ায় জেলা ও মহানগরের নেতারা কমিটি গঠনের কোন প্রক্রিয়া শুরু করতে পারেননি। এরপর শুরু হয় করোনা। করোনাকালীন সাংগঠনিক ও দলীয় কার্যক্রমে স্তবিরতা নেমে আসে যুবলীগে। করোনার হার নিম্নমুখী হলেও কমিটি পূর্ণাঙ্গ করণের দিকে দৃষ্টি দেয়নি কেন্দ্র। জেলা ও মহানগরের চার নেতা বিষয়টিকে এমন ভাবে বিশ্লেষণ করলেও তৃণমূলের নেতাকর্মীদের অভিযোগ ভিন্ন। তাদের দাবি-সিলেট মহানগর যুবলীগ একটি তালিকা পাঠায় কেন্দ্রে। সেই তালিকায় থাকা অনেক সদস্য ছিল বিতর্কিত এবং রাজাকার পরিবারের সদস্য।
বিতর্কিতদের নাম দিয়ে তালিকা কেন্দ্রে পাঠানোর কারণে সিলেটে তোলপাড় শুরু হয়। পরবর্তীতে কেন্দ্রীয় হস্তক্ষেপে আরও একটি তালিকা কেন্দ্রে পাঠানো হলেও বিক্ষোভ কমেনি নেতাকর্মীদের।
এব্যাপারে সিলেট মহানগর যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক মুশফিক জায়গীরদার বলেন, ত্যাগী এবং পরিচ্ছন্ন নেতাকর্মীদের নাম যুক্ত করে একটি তালিকা কেন্দ্রে পাঠানো হয়েছে অনেক আগে। কর্মীরা হচ্ছেন সংগঠনের প্রাণ ভোমড়া। সুতরাং কর্মী না থাকলে সংগঠন গতিশীল হয় না। তিনি বলেন, তালিকা পাঠিয়ে পূর্ণাঙ্গ কমিটির নাম অনেক আগেই কেন্দ্রে জমা দেওয়া হয়েছে। কেন্দ্র থেকে জানানো হয়েছে অচিরেই পূর্ণাঙ্গ কমিটি দেয়া হবে।
এ ব্যাপারে সিলেট জেলা যুবলীগের সভাপতি শামীম আহমদ (ভিপি) বলেন, কমিটি অনুমোদন দিবে কেন্দ্র। সুতরাং কমিটি অনুমোদন না হওয়া অবস্থায় জেলা কমিটি মেয়াদোত্তীর্ণ হলেও তার দায় জেলার নয় এবং পূর্ণাঙ্গ কমিটি অনুমোদন পূর্ববর্তী জেলার অপূর্ণাঙ্গ কমিটিই দায়িত্ব পালন করে যাবে। তিনি বলেন,যথারীতি তালিকা প্রস্তুত করে কেন্দ্রে পাঠানো হয়েছে। নিশ্চয়ই কেন্দ্র সময় এবং তালিকা বোঝে যথাসময়ে পূর্ণাঙ্গ জেলা কমিটি অনুমোদন করবে।
যুবলীগের কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক ও সিলেট বিভাগের দায়িতপ্রাপ্ত নেতা ড.রেজাউল কবির বলেন, ‘সংগঠনের চেয়ারম্যান ও সাধারণ সম্পাদক সাহেব এব্যাপারে সিদ্ধান্ত নিবেন। কবে নাগাদ কমিটি হতে পারে এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন,এটা বলা যাবে না। চেয়ারম্যান দেশের বাইরে রয়েছেন তিনি আসার পরই এ ব্যাপারে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হবে।