রঘুনন্দন পাহাড়ের পাদদেশে হবিগঞ্জের শাহজিবাজার গ্যাস ফিল্ডের দিকে তাকালেই চোখে পড়বে অনির্বাণ শিখা, গ্যাস সংরক্ষণ ও উত্তোলনের যন্ত্রপাতি। তিন দিকে উঁচু-নিচু পাহাড়, একদিকে ঢাকা-সিলেট মহাসড়ক ও রেলপথ। আর এই গ্যাস ফিল্ডের সীমানায় অব্যবহৃত পাঁচ একর পাহাড়ি টিলায় গড়ে তোলা হয়েছে দৃষ্টিনন্দন ফ্রুটস ভ্যালি। হাতছানি দিয়ে যা ডাকছে প্রকৃতিপ্রেমীদের।
২০০৩ সালে গড়ে ওঠা এই ফ্রুটস ভ্যালিতে এখন ২০০ জাতের দেশি-বিদেশি ফল গাছের সমাহার। সারি সারি গাছ ছাড়াও ভ্যালিতে রয়েছে মনকাড়া প্যাভিলিয়ন, মিনি বাংলো ও ফোয়ারা। গাছ-গাছালির ভিড়ে গড়ে তোলা হয়েছে মিনি চিড়িয়াখানা। ময়না, ঘুঘু, তোতা, জাতা চড়ুই, ককোলেট, কোয়েল, বজুরিকা, চন্দনা, মুনিয়া, দোয়েলসহ ১৩ জাতের পাখি আর আট জাতের কবুতর। ২০১০ সালে ভ্যালির পাশের টিলায় তৈরি হয়েছে সুইমিংপুল।
ফ্রুটস ভ্যালির পুরোটা দেখার জন্য ছোট সিঁড়িগুলো দিয়ে যখন ওপরে উঠতে থাকবেন তখনই মনে হবে ওপরে না জানি কত সুন্দর অপেক্ষা করে আছে। আপনার অনুমান মিথ্যা হবে না। টিলার চূড়ায় উঠেই মনটা ভরে যাবে অপার প্রশান্তিতে। অপরূপ সুন্দর এবং আকর্ষণীয় করে সজ্জিত করা হয়েছে ভ্যালিটিকে। চাইনিজ নির্মাণশৈলী, আপেল, আনারস, আঙ্গুর লতার তোরণ ইত্যাদি বিশেষত শিশুদের জন্য দারুণ চিত্তাকর্ষক।
বিদেশি ফলগাছ যেমন- কফি, রুটি ফল, সবুজ আপেল ইত্যাদির পাশাপাশি রয়েছে দেশীয় প্রায় হারিয়ে যাওয়া ফল ঢেউয়া, ঢেফল, থৈকরের গাছ। ভেষজ উদ্ভিদের জন্য আলাদা জায়গা নির্ধারণ করে চলছে পরিচর্যা। নতুন নতুন ফলের গাছ সংযোজন হচ্ছে নিয়মিত। নামফলক থেকে জানা গেল, দেশি-বিদেশি প্রখ্যাত ব্যক্তিদের হাতেও লাগানো হয়েছে প্রচুর গাছ।
ভ্যালির একদম শেষ প্রান্তে রয়েছে একটি পরিবেশবান্ধব কটেজ। সিলেটি বেত, শীতল পাটি, গাছের বাকল ইত্যাদি দিয়ে তৈরি করা হয়েছে এই কটেজ। ভেতরে প্রবেশের সঙ্গে সঙ্গেই আপনাকে অদ্ভুত প্রশান্তিতে ভরিয়ে দেবে। এখানে দাঁড়িয়ে উপভোগ করা যাবে চারপাশের রাবার বাগান আর সবুজ অরণ্য।
শাহজিবাজার ফ্রুটস ভ্যালি এখন শুধু হবিগঞ্জবাসীর কাছে পরিচিত নয়, এর পরিচিতি ছড়িয়ে পড়েছে সারা দেশের পর্যটকদের কাছে। ফ্রুটস ভ্যালির সঙ্গে যিনি ওতপ্রোতভাবে জড়িত, তিনি হলেন গ্যাস ফিল্ডের ডেপুটি জেনারেল ম্যানেজার (নিরাপত্তা) এটিএম নাছিমুজ্জামান।
তিনি জানান, ফ্রুটস ভ্যালি ভ্রমণপিপাসুদের কাছে পরিচিত হয়ে উঠলেও সংরক্ষিত এলাকা হওয়ায় জনসাধারণের জন্য গ্যাস ফিল্ডের ভেতরে অবাধে প্রবেশ নিষিদ্ধ। তবে কর্তৃপক্ষের অনুমতি সাপেক্ষে সীমিত পরিসরে সপরিবারে ঘুরে আসা যায় ফ্রুটস ভ্যালি। অদূর ভবিষ্যতে গ্যাস ফিল্ডের বাহির দিয়ে ফ্রুটস ভ্যালিতে প্রবেশের জন্য যদি রাস্তা করা যায় তাহলে সবার জন্য উন্মুক্ত করা যেতে পারে চিত্তাকর্ষক এই ফ্রুটস ভ্যালিটিকে। তিনি জানান, ফ্রুটস ভ্যালিকে আরও আকর্ষণীয় করতে পাখি অভয়ারণ্য, লেক, হরিণের খামার এবং শিশুপার্ক তৈরি করার জন্য পেট্রোবাংলা থেকে একটি সিদ্ধান্ত ছিল। সময় এবং বরাদ্দ সঙ্কটের কারণে সেই পরিকল্পনা বাস্তবায়নে বিলম্ব হচ্ছে।
ইউপি চেয়ারম্যান মো. শামীম আহমেদ বলেন, ফ্রুটস ভ্যালির কথা ফেসবুকের মাধ্যমে অনেক আগেই জেনেছি, যাওয়ার সুযোগ হয়নি। এবার গেল ঈদের পরদিন ঘুরতে গিয়েছিলাম। বাড়ির কাছে এত সুন্দর জায়গা দেখে মুগ্ধ হয়েছি।