1. sparkleit.bd@gmail.com : K. A. Rahim Sablu : K. A. Rahim Sablu
  2. diponnews76@gmail.com : Debabrata Dipon : Debabrata Dipon
  3. admin@banglanews24ny.com : Mahmudur : Mahmudur Rahman
  4. mahmudbx@gmail.com : Monwar Chaudhury : Monwar Chaudhury
হবিগঞ্জের মাধবপুরে রমরমা মাদকবাণিজ্য
সোমবার, ২৭ মার্চ ২০২৩, ০৩:৪৪ অপরাহ্ন




হবিগঞ্জের মাধবপুরে রমরমা মাদকবাণিজ্য

মাধবপুর (হবিগঞ্জ) প্রতিনিধি
    আপডেট : ১১ ফেব্রুয়ারী ২০২৩, ৫:০৮:৩৬ অপরাহ্ন

হবিগঞ্জের মাধবপুর উপজেলার কয়েকটি ইউনিয়নের সীমান্তবর্তী গ্রামে সন্ধ্যা নামতেই তৎপর হয়ে ওঠে চোরাকারবারি চক্র। এদের সহযোগী ‘লাইনম্যান’। তারা মুঠোফোনে সংকেত দেন ‘লাইন ক্লিয়ার’। এরপর সীমান্তের দিকে এগোতে থাকেন ‘ভারীরা’। খেতের আল ধরে হামাগুড়ি দিয়ে শূন্যরেখার কাছে পৌঁছানোর পর নির্দিষ্ট সংকেত দিলে ওপার থেকে মালামাল ছুড়ে দেন ভারতীয় পাচারকারীরা। দ্রুত সেগুলো সংগ্রহ করে ফিরে আসেন তারা।

সম্প্রতি মাধবপুর উপজেলার ধর্মঘর ইউনিয়নের মোহনপুর, আলীনগর, কালিকাপুর, চৌমুহনী ইউনিয়নের রামনগর, কমলপুর, রাজনগর, বহরা ইউনিয়নের শ্রীধরপুর, কৃষ্ণপুর, এবং শাহজাহানপুর ইউনিয়নের বনগাওঁ, জালুয়াবাদ সীমান্ত এলাকা ঘুরে মাদক চোরাচালানের এমন চিত্র পাওয়া গেছে।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, সীমান্তের মাদক ব্যবসায়ীদের বলা হয় মহাজন। মাদক আনার জন্য মহাজন যাদের নিয়োগ করেন, তাদের বলা হয় ‘ভারী’। সীমান্তের অবস্থা জানানোর ‘লাইনম্যান’ হিসেবে কাজ করেন আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সোর্সরা। ‘লাইন ক্লিয়ার’ অর্থ হচ্ছে মাদক আনার সুবিধাজনক সময়। স্থানীয় বাসিন্দা, চোরাচালানে জড়িত ব্যক্তি, জনপ্রতিনিধি ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা বলছেন, এক যুগ আগেও মাধবপুর সীমান্ত এলাকাগুলো দিয়ে পাচার হওয়া মালামালের তালিকায় গরু, লবণ, চিনি, সাইকেল, জিরা, কাপড়ের মতো পণ্যের প্রাধান্য ছিল। লাভ বেশি হওয়ায় এসব পণ্যের বদলে আসছে মাদক। যার বেশির ভাগই ফেনসিডিল। এছাড়া আছে ইয়াবা, গাঁজা, মদ ও নেশাজাতীয় ইনজেকশন। সে সঙ্গে আসছে ভারতীয় মোবাইল ফোন এবং কসমেটিকস। সীমান্ত দিয়ে অবাধে মাদক আসায় জেলায় বাড়ছে মাদকসেবীর সংখ্যা, বাড়ছে অপরাধ।

হবিগঞ্জের স্থানীয় কয়েকটি সংবাদপত্র থেকে জানা গেছে, ২০২২ সালের জানুয়ারি থেকে ২৭ জানুয়ারি ২০২৩ পর্যন্ত সীমান্তে বিজিবি, পুলিশ, র‌্যাব, ডিবিসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের হাতে বিভিন্ন সময় বিপুল পরিমাণ মাদকদ্রব্যসহ মাদক চোরাকারবারিরা আটক হয়েছে।

মাধবপুর থানার সূত্রমতে, উপজেলায় মাদকদ্রব্য পাচারের সবচেয়ে বড় রোড মোহপুর, আলীনগর, কালিকাপুর, রামনগর, শ্রীধরপুর, জালুয়াবাদ, বনগাঁও সীমান্ত। এ চারটি ইউনিয়নের বিভিন্ন গ্রামের অন্তত ১০০ ব্যক্তি মাদকসহ বিভিন্ন নিষিদ্ধ পণ্য চোরাচালানের কাজে যুক্ত বলে স্থানীয়রা জানিয়েছেন। তাদের এক-তৃতীয়াংশই ১৫-৩৫ বছর বয়সি। মহাজন রয়েছেন অর্ধশতাধিক। খুচরা বিক্রেতা হিসেবে নারীরাও কাজ করছেন।

মাধবপুর সীমান্তের হবিগঞ্জ ৫৫ বিজিবির অধীনে রয়েছে ৪টি বিওপি (মনতলা, হরিণখোলা, রাজেন্দ্রপুর, তেলিয়াপাড়া)। বাকি ধর্মঘর ইউনিয়নের (ধর্মঘর বিওপি, হরষপুর বিওপি, বড়জ্বালা বিওপি) অংশ ২৫ বিজিবির অধীনে পড়েছে। বিজিবি ৫৫ ও ২৫ ব্যাটালিয়নের অধীনে রয়েছে ৭টি বিওপি ক্যাম্প।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে মোহনপুর ও কালিকাপুর গ্রামের এক মাদক পাচারকারী বলেন, সন্ধ্যার পর থেকেই তাদের সজাগ থাকতে হয়। রাতের যেকোনো সময় ‘লাইন ক্লিয়ারের’ সংকেত আসে। অনেক সময় সংকেত আসতে ভোর হয়ে যায়। সংকেত পেলেই ছোটেন সীমান্তে। আত্মরক্ষার জন্য সঙ্গে থাকে টর্চলাইট ও দা। ভারতীয়দের ছুড়ে দেওয়া মাদকদ্রব্য এনে পুকুরপাড়, ঝোপঝাড়ে ও পরিত্যক্ত ঘরে রেখে দেন। পরে সুবিধাজনক সময়ে মহাজনের কাছে পৌঁছান। এক রাতে ১০০ বোতল ফেনসিডিল সীমান্ত থেকে ৫০০ মিটার দূরত্বে নিরাপদে সরিয়ে আনলে মহাজনের কাছ থেকে তিন থেকে পাঁচ হাজার পর্যন্ত টাকা পাওয়া যায় বলে ‘ভারীদের’ সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে। তারা বলছেন, ভারীদের কাছে মাল বুঝে পাওয়ার পর সবুজ সংকেত পেলে এজেন্টের মাধ্যমে ভারতীয় মাদক ব্যবসায়ীদের টাকা পরিশোধ করেন বাংলাদেশের মাদক ব্যবসায়ীরা। সীমান্ত দিয়ে যত মাদক আসে, তার খুব কমই আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর হাতে ধরা পড়ে বলে জানিয়েছেন স্থানীয়রা।

মাধবপুর থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) আ. রাজ্জাক জানান, মাধবপুর সীমান্ত এলাকায় ২০২২ সালের জানুয়ারি থেকে ২০২৩ সালের ২৭ জানুয়ারি পর্যন্ত থানা পুলিশের অভিযানে বিভিন্ন ধরনের মাদকদ্রব্যসহ ৪০৮ জন গ্রেপ্তার হয়েছে। এর মধ্যে ১৮১৮ কেজি গাঁজা, ২১ হাজার ৫৯০ পিস ইয়াবা, ১৫২ বোতল বিদেশি মদ, ১৪৭ লিটার দেশি মদ, ১৬০টি বিয়ার ক্যান ও ১৯৫৪ বোতল ভারতীয় ফেনসিডিল জব্দ করি এবং ২৯৯টি মামলা রুজু করি। মাদক নির্মূলে মাধবপুর থানা পুলিশ জিরো টলারেন্সে আছে, মাদকের ব্যাপারে কোনো আপস নেই।

সীমান্ত এলাকার বাসিন্দারা বলছেন, মাদক পাচারকারীরা প্রভাবশালী। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সঙ্গে তাদের যোগাযোগ আছে। ভয়ে তাদের বিরুদ্ধে কেউ কথা বলে না। মোহনপুর সীমান্তের যুবক রহিম বলেন, ‘কাকে অভিযোগ দেব? অভিযোগ দিলে উল্টো মালসহ যদি ফাঁসায় দেয়, এই ভয়ে এলাকার কেউ জোর গলায় কোনো প্রতিবাদে যায় না।’

মাদক ব্যবসার টাকার ভাগ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের কাছেও যায় বলে অভিযোগ করেছেন স্থানীয়রা। তবে অভিযোগ অস্বীকার করে ধর্মঘর সীমান্ত বিটে দায়িত্বরত পুলিশের উপপরিদর্শক (এসআই) ইসমাইল হোসেন বলেন, সীমান্ত এলাকায় মাদক নির্মূলে পুলিশ নিয়মিত অভিযান চালাচ্ছে। পরোয়ানাভুক্ত আসামি গ্রেপ্তার করার পাশাপাশি মাদক নির্মূলে কাজ করছে পুলিশ ।

বিজিবির বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ ভিত্তিহীন বলে দাবি করেছেন সরাইল ২৫ বিজিবির অধিনায়ক লে. কর্নেল সৈয়দ আরমান আরিফ। তিনি বলেন, ‘মাদক নিয়ন্ত্রণে রাত-দিন পরিশ্রম করে যাচ্ছে বিজিবি। আমরা মাদকের বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স ঘোষণা করেছি।’

এ ব্যাপারে কথা হয় হবিগঞ্জ ৫৫ ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক লে. কর্নেল ইমদাদুল বারী খানের সঙ্গে। তিনি বলেন, আমি নতুন যোগদান করেছি। আমাদের দায়িত্বপূর্ণ এলাকায় ৪টি বিওপি রয়েছে। মাদক এর সাথে আমাদের কোন আপস নেই।

ধর্মঘরের মোহনপুর, মুড়াবাড়ি, কালিকাপুর, আলীনগর, সস্তামোড়া, শিয়ালউড়ি, চৌমুহনী ইউনিয়নের কমলপুর, চৈতন্যপুর, রামনগর এবং বহরা ইউনিয়নের শ্রীধরপুর, দুলর্ভপুর মাদক বিক্রির জন্য পরিচিত হয়ে উঠেছে বলে জানা গেছে।

ধর্মঘর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ফারুক আহমেদ পারুল বলেন, সন্ধ্যার আগে থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত এক-দেড়শ মোটরসাইকেল ধর্মঘরের ভিতর আসে। প্রতিটি মোটরসাইকেলে দুই থেকে তিনজন পর্যন্ত এসে মাদক সেবন করে চলে যায়।

নাম প্রকাশ না করে একজন মাদকসেবী জানান, এ ক্ষেত্রে এমন অনেকেই আছেন, নিয়মিত একজনের সঙ্গে মুঠোফোনে যোগাযোগ করে মাদক নেন, কিন্তু সামনাসামনি কখনো দেখা হয়নি। মাদক সেবন শেষে নির্দিষ্ট কিছু জায়গার চায়ের দোকানে আড্ডায় বসেন। দোকানিরা তাদের চাহিদা অনুযায়ী বেশি চিনির চা পরিবেশন করেন।

এ বিষয়ে হবিগঞ্জের (মাধবপুর সার্কেল) সহকারী পুলিশ সুপার নির্মেলন্দু চন্দ চক্রবর্তী বলেন, যেসব রুটে মাদকসেবীদের যাতায়াত আছে সেখানে পুলিশ নিয়মিত অভিযান পরিচালনা করায় মাদক কিছুটা নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। মাদক নিয়ন্ত্রণে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পাশাপাশি পারিবারিক সচেতনতা ও তৃণমূল পর্যায়ের জনপ্রতিনিধিদের এগিয়ে আসা খুব জরুরি।




খবরটি এখনই ছড়িয়ে দিন

এই বিভাগের আরো সংবাদ







Copyright © Bangla News 24 NY. 2020