হবিগঞ্জে জেষ্ঠ্য সাংবাদিক রাজিব নূরসহ স্থানীয় সাংবাদিকেরা সংবাদ সংগ্রহ করতে গিয়ে হামলার শিকার হয়েছেন। রোববার (১১ সেপ্টেম্বর) দুপুরের পর বানিয়াচং উপজেলার ২ নম্বর ইউনিয়নে রামনাথ বিশ্বাসের বাড়ির সামনেই এই হামলা হয় বলে হামলার শিকার সাংবাদিকেরা জানিয়েছেন।
জানা গেছে- হবিগঞ্জের বানিয়াচং উপজেলায় সাইকেলে বিশ্বভ্রমণকারী ও ভ্রমণকাহিনী লেখক রামনাথ বিশ্বাসের বাড়ি দখলের খবর সংগ্রহ করতে গিয়ে হামলার শিকার হন সাংবাদিকেরা। হামলার শিকারদের মধ্যে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমের স্পেশাল অ্যাসাইনমেন্ট এডিটর রাজীব নূর ছাড়াও রয়েছেন বানিয়াচং প্রেস ক্লাবের সভাপতি ও কালের কণ্ঠের বানিয়াচং প্রতিনিধি মোশাহেদ মিয়া, হবিগঞ্জ সমাচার পত্রিকার বানিয়াচং প্রতিনিধি তৌহিদ মিয়া এবং দেশসেবা পত্রিকার বানিয়াচং প্রতিনিধি আলমগীর রেজা।
হামলায় আহতরা বানিয়াচং উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসা নিয়েছেন। এ ঘটনায় বানিয়াচং থানায় মামলা করা হবে বলে জানিয়েছেন হামলার শিকার সাংবাদিকেরা। হামলার শিকার সাংবাদিকরা বলছেন, ‘দখলদার’ ওয়াহেদ মিয়া ও তার পরিবারের সদস্যরা এই হামলায় চালান।
হবিগঞ্জ প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক রাশেদ খান বলেন, ‘এ বিষয়ে আমরা পুলিশ সুপার এস এম মুরাদ আলীর সাথে কথা বলেছি। পুলিশ সুপার জানিয়েছেন সাংবাদিকদের উপর হামলাকারীদের বিরুদ্ধে আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেবেন।’ রাশেদ খান বলেন- এ ঘটনায় রোববার (১১ সেপ্টেম্বর) রাত ৮টায় হবিগঞ্জ প্রেসক্লাবে জরুরি মিটিং ডেকে তীব্র প্রতিবাদ ও নিন্দা জানানো হয়েছে।
ঘটনার বর্ণনা দিয়ে রাজীব নূর গণমাধ্যমকে বলেন, “রামনাথ বিশ্বাসের বাড়ি অনেক দিন ধরে দখল করে রেখেছেন স্থানীয় ওয়াহেদ মিয়া ও তার পরিবার। এ বিষয়ে সরেজমিন প্রতিবেদন তৈরির জন্য আমরা সেখানে গিয়েছিলাম। প্রথমে আমার সঙ্গে থাকা মোশাহেদ নিজের পরিচয় দিয়েই ওয়াহেদ মিয়ার সঙ্গে সালাম ও কুশল বিনিময় করছিলেন। ওই সময় আমি রামনাথ বিশ্বাসের ঘরের একটি ছবি তুলি। ছবি তোলার পরপর ওয়াহেদ মিয়া চড়াও হন এবং জানতে চান, ‘ছবি তুললেন কেন?’ আমরা আমাদের উদ্দেশ্য ব্যাখ্যা করার এক পর্যায়ে উনার ছেলে ওয়ালিদ সেখানে আসে এবং হ্যাঁচকা টান দিয়ে আমার মোবাইল কেড়ে নেয়।”
তিনি বলেন, “এক পর্যায়ে ওয়ালিদের সঙ্গে আরও কয়েক যুবক যুক্ত হয় এবং লাঠিসোঁটা দিয়ে মারধর শুরু করে। এর মধ্যে আলমগীর ও তৌহিদকে বেধড়ক পিটিয়েছে ওরা।”
বানিয়াচং থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) অজয় চন্দ্র দেব বলেন, ঘটনাটি শুনেছি। তবে এ বিষয়ে এখনো কোনো অভিযোগ পাননি, অভিযোগ পেলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
এদিকে স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান হায়দারুজ্জামান খান (ধন মিয়া) সাংবাদিকদের জানিয়েছেন- ওয়াহেদ মিয়া ওই বাড়িটি দখল করে আছেন। ওয়াহেদ একজন দখলদার। আর এটা রামনাথ বিশ্বাসেরই বাড়ি, তিনি দখল করে রেখেছেন। অনেক সময় চেষ্টা করে বাড়িটি দখলমুক্ত করা করা সম্ভব হয়নি।”
তবে বাড়ি দখলের অভিযোগ অস্বীকার করে আসছিলেন ওয়াহেদ মিয়া। তার দাবি, ওই জায়গা তার কেনা। ওয়াহেদ মিয়া বলেন, “আমাদের বাড়িতে এসে অনুমতি ছাড়া ছবি তোলায় কথা কাটাকাটি হয়। আমরা কোনো হামলা করিনি।”
হবিগঞ্জের পুলিশ সুপার এস এম মুরাদ আলী গণমাধ্যমকে বলেন, “সাংবাদিকদের উপর হামলার ঘটনায় আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নিচ্ছি আমরা।”
এদিকে সাংবাদিক রাজিব নূরের উপর হামলার ঘটনায় ঢাকা রিপোর্টাস ইউনিটি (ডিআরইউ) নিন্দা জানিয়েছে। এক বিবৃতিতে ডিআরইউ সভাপতি নজরুল ইসলাম মিঠু এবং সাধারণ সম্পাদক নূরুল ইসলাম হাসিব অবিলম্বে দোষীদের গ্রেফতারের দাবি জানান। ডিআরইউ নেতৃবৃন্দ বলেন- সংবাদ সংগ্রহের জেরে এভাবে সাংবাদিকদের ওপর হামলা কোনোভাবেই কাম্য নয়। দ্রুত দোষীদের গ্রেফতার করে দৃষ্টান্তমূলত শাস্তি প্রদানে আইনশৃংখলা বিাহিনীর প্রতিও দাবি জানান তারা।