মৌলভীবাজার জেলার বিভিন্ন উপজেলার পাহাড়ি টিলাভূমিতে কাগজি লেবুর আবাদ হয়। জারা, কাগজি লেবু ছাড়াও সুগন্ধি চায়না লেবুর চাষ হয় এ অঞ্চলে। তারমধ্যে শ্রীমঙ্গল ও কমলগঞ্জ উপজেলায় এর আবাদ বেশি হয়ে থাকে। লেবুর উপজেলা হলেও শ্রীমঙ্গলে এখন লেবুর দাম বেশি। রমজান মাসকে সামনে রেখে এখানকার লেবু চাষীরা বাণিজ্যিকভাবে লেবু চাষ করে থাকেন। রমজানে লেবুর চাহিদা বেশি থাকে। আর এই সুযোগ কাজে লাগিয়ে বছরের এই সময়টিতে লেবুর দাম বেড়ে যায়। অবশ্য লেবু চাষীরা বলেছেন, চৈত্র মাসে রমজান মাস হওয়ায় পাহাড় টিলায় সেচ দেয়া খুবই ব্যয়সাধ্য। ফলে বিশেষভাবে সেচ ও সার দিয়ে লেবু ফলানোর কারণে এমনিতেই লেবুর দাম বেশি পড়ে যায়। আসছে বর্ষায় লেবুর উৎপাদন ও দাম দুটোই কমে যাবে। এতে রমজানের সঙ্গে দামের কোনো সম্পর্ক নেই বলে জানান তারা।
তবে লেবুর পাইকারি আড়ৎ ও খুচরা বাজারে লেবুর দামের বিশাল ফারাক লক্ষ করা গেছে। শনিবার শ্রীমঙ্গলের লেবু বাজার ঘুরে দেখা যায়, আড়তে লেবুর রমরমা বেচাকেনা। বেপারিদের হাকডাক। ভোর সকাল থেকে আড়ৎগুলোতে লেবুর পাশাপাশি আনারস কলা ও অন্যান্য পাহাড়ি ফলের পসরা সাজিয়ে বসেন কারবারীরা। আড়ৎগুলোতে সাইজ ভেদে প্রতি শ’ লেবু ২শ’ থেকে ৬শ’ টাকায় বিক্রি হতে দেখা যায়। একই বাজারে এই লেবু হাত ঘুড়ে খুরচা বিক্রি হচ্ছে ২০ থেকে ৮০ টাকা হালি হিসেবে।
লেবু বাগান মালিক রাজিব আহমেদ বলেন, এখন খরা মৌসুম লেবুর উৎপাদন কম। মূলত বর্ষাকালে লেবু উৎপাদন বেশি হয়। খরা মৌসুমে উৎপাদন কম থাকায় লেবুর বাজার দর বছরের এই সময়ে বেশি থাকে। পাম্প দিয়ে উঁচু টিলায় লেবু গাছে পানি ও সার দিতে হয়। এতে খরচ বেশি হয়। আর রমজান মাসে বাড়তি চাহিদা থাকায় দাম বেড়ে যায়। ফলে বাজারদরের সঙ্গে রমজান মাসের কোনো সম্পর্ক নেই বলে তিনি জানান।
উপজেলার দিলবরনগর এলাকার লেবু ও আনারস বাগান মালিক খোরশেদ মিয়া বলেন, খরচ অনুপাতে লেবুর দাম বেশি না। রোজা ও কোরবানির ঈদেই লেবু ও আনারসের দাম একটু ভালো পাওয়া যায়। হাত বদলে লেবুর দাম বেড়ে গেলেও কৃষকরা দাম থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। এসব লাভের বড় অংশ চলে যায় ব্যবসায়ী ও ফড়িয়াদের পকেটে।
শ্রীমঙ্গল নতুন বাজারের উমর আলী বাণিজ্যালয়ের মালিক মো. নুর আলম বলেন, শ্রীমঙ্গলের লেবু থেকে ঢাকা কাওরান বাজার, শনির আখড়া ও ডেমরাসহ দেশের বিভিন্ন এলাকায় যায়। এসব মোকামে লেবুর দামও বেশি।
মৌলভীবাজার কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক কাজী লুৎফুল বারী জানান, মৌলভীবাজার জেলায় এ বছর ১ হাজার ৭শ’ ০২ হেক্টর জমিতে কাগজি লেবুর চাষ হচ্ছে। গত বছর উৎপাদন হয়েছিল ২৭ হাজার ২শ’ ৩২ মেট্রিক টন লেবু।