কোনো মিছিল নেই, আগে পিছে নেতা-নেত্রী নেই। কোলাহল বিহীন প্রায় ৭ থেকে ১০ জন করে মহিলারা প্রবেশ করছেন সারিবদ্ধভাবে। একটি নয়, দুটি নয়-দল বেধে এ রকম শ’য়ে শ’য়ে মহিলার দল ছোটে চলছেন একটি স্থানের দিকে। সবার হাতে হাতে রয়েছে একটি করে কুফন কার্ড। এই কুফন কার্ড দেখিয়ে সবাই প্রবেশ করছেন প্রধান ফটক দিয়ে। কেউ এসেছেন নগরীর সোনারপাড়া, তেররতন,কাষ্টঘর, টিলাঘর, ছড়ারপাড়, মাছিমপুর এলাকা থেকে। আবার কেউ এসেছেন নগরীর দক্ষিণ সুরমার মেনিখলা, শিববাড়ি,বড়ইকান্দি, ট্যাকনিক্যাল রোড, গোটাটিকরসহ বিভিন্ন এলাকা থেকে। সবারই গন্তব্য একটাই। নগরীর আবুল মাল আবদুল মোহিত ক্রীড়া কমপ্লেক্স।
বৃহস্পতিবার (১৬ ফেব্রুয়ারি) বেলা তখন সোয়া ১১ টা। ক্রীড়া কমপ্লেক্স মাঠের মঞ্চের ঠিক সামনের দিকে রাখা চেয়ারে বসে আছেন রাজিয়া আক্তার, সাকিয়া আক্তার, রাশেদা বেগম,নাহিদা আক্তার, ফাহিমা বেগম, দিলারা বেগম, কলসুমা বেগম ও সুমাইয়া আক্তার। এরা সবাই সুবিধা বঞ্চিত শ্রেণীর জনগোষ্ঠী। কারো স্বামী দিনমজুর, কারো স্বামী সবজী বিক্রেতা, কেউ বা ফেরীওয়ালা আবার কেউ রিক্সা চালিয়ে জীবীকা চালাচ্ছেন। কেন এসেছেন জানতে চাইলে সুমাইয়া বেগম জানালেন, ‘মঙ্গলবার শাহিন নামের এক বড় ভাই কইলো- আবুল মাল মাঠে বৃহস্পতিবার পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. একে আবদুল মোমেন স্যার আইবা। পরে মাঠের হকল মহিলারা রে যুক্তরাজ্য আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদকের পক্ষ থেকে সক্কলরে একটা করি উপহার দেওয়া অইবো। তাইন আমারে একটা কার্ড দিয়া কইলা, যাওয়ার সময় কার্ড লগে নেওয়া লাগবো। ‘
মাঠের প্রায় অর্ধেকাংশ জোড়ে রাখা হয়েছে সারিবদ্ধ চেয়ার। কথা বলতে বলতে পুরো মাঠে থাকা ফাঁকা চেয়ারগুলোও নিমিষেই পূর্ণ হয়ে গেল। বেলা একটা বাজার কিছুক্ষণের মধ্যেই মাঠে আসলেন কালো চেহাড়ার দীর্ঘদেহী একজন লোক। মাঠে প্রবেশ করতেই সকলের কণ্ঠে কেবল ধ্বণিত হচ্ছে ‘আনোয়ার ভাই’,‘আনোয়ার ভাই’, ‘আনোয়ার ভাই’। করতালিতে তখন মুখরিত আবুল মাল ক্রীড়া কমপ্লেক্স। তারপর স্বেচ্ছাসেবক টিমের সদস্যরা কার্ডধারী মহিলাদের হাতে তোলে দেন একটি করে শাড়ি উপহার। ৫ হাজার মহিলার হাতে হাতে যখন একটি করে শাড়ি শোভাপাচ্ছিল, দৃশ্যটিও ছিল বেশ উপভোগ্য। শাড়ির গায়ে একটি ছোট্টো স্টিকারে লেখা রয়েছে-প্রধানমন্ত্রীর পক্ষ থেকে আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরীর উপহার। শাড়ি পেয়ে দু’চোখে হাসির বান দেখা গেছে সুমাইয়া বেগমের। অনুভূতি প্রকাশ করে তিনি জানান, ‘ইলোকশন কতো আইলো গেল, কিন্তু কেউ তো আমরারে খবর নিলা না। তাইন আমরারে একটা শাড়ি দিয়া যে ভালোবাসা দেখাইলা, ইতা আমরার মনও থাকবো সব সময়’।
হ্যা তিনি আনোয়ারুজ্জামান চৌধূরী। যুক্তরাজ্য আওয়ামী যুবলীগের রাজনীতি থেকে এখন তিনি যুক্তরাজ্য আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পরিবার ঘনিষ্ট হিসেবে আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরী সম্পর্কে প্রচার থাকলেও এ বিষয়ে কোনোদিন নিজে মুখ খোলেন নি তিনি।
সম্প্রতি এই নামটি বেশ আলোচনায়। সিলেট সিটি করপোরেশন নির্বাচনে আওয়ামী লীগের হয়ে মেয়র পদে লড়বেন আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরী-এমন আলোচনা নগরের ওলিতে, গলিতে। দেয়ালে দেয়ালে পোস্টার শোভা পাচ্ছে নগরের সর্বত্র। শুভ কামনা জানিয়ে আওয়ামী লীগসহ সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীদের পোস্টার শাটানো রয়েছে সর্বত্র।
দলীয় একটি সূত্রে জানা যায়, আগামী নির্বাচনে নৌকা প্রতীকের মেয়র প্রার্থী হিসেবে যুক্তরাজ্য আওয়ামী লীগ নেতা আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরীকে দলের সর্বোচ্চ পর্যায় থেকে ‘গ্রীণ সিগনাল’ দেওয়া হয়েছে। ইতিমধ্যে দলের সভানেত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গেও দেখা করেছেন তিনি। এ সময় সিটি নির্বাচন নিয়ে প্রধানমন্ত্রীও তাকে প্রয়োজনীয় দিকনির্দেশনা দিয়েছেন বলে দাবি আনোয়ারুজ্জামানের।
এ বিষয়ে যুক্তরাজ্য আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক বলেন,‘যেহেতু আমি এই নগরীর সন্তান, সেহেতু নগরীর উন্নয়নে কিছু করার সুযোগ পে্লে নিজেকে সপে দিতে চাই। বাস্তবতা হলো-মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর সুনজরে থাকায় সিলেট নগরে যে পরিমান উন্নয়ন সাধিত হয়েছে, তার পুরো কৃতিত্ব আওয়ামী লীগের। কিন্তু মানুষ সেটিকে বর্তমান মেয়রের উন্নয়ন বলে চালিয়ে দিতে চায়। আওয়ামী লীগের উন্নয়ন ধারায় রাজনীতিকে সিলেটে কিডন্যাফ করা হয়েছে। সুতরাং দলীয় প্রধান আমাকে সিসিকের মেয়র পদে যোগ্য বিবেচনা করলে দল ও মতের উর্ধে উঠে নগরবাসীর উন্নয়নে নিজেকে উৎসর্গ করতে পুরোদমে প্রস্তুত আছি। তিনি বলেন, শুধু করোনাকালীন নয়, দুর্যোগ-দুর্বিপাকেও মানুষের পাশে থাকার চেষ্টা করেছি। দলীয় প্রার্থীর পক্ষে কাজ করে বিজয় সুনিশ্চিত করে ঘরে ফিরেছি। তিনি পুরুষের পাশাপাশি নারী সমাজকেও শক্তি হিসেবে দেখতে চান। এরই ধারাবাহিকতায় দীর্ঘদিন থেকে সুবিধা বঞ্চিত নারী সমাজকে কর্মক্ষম করার মধ্য দিয়ে শেখ হাসিনা ঘোষিত স্মার্ট দেশের স্মার্ট সিটি গড়ার মিশন হাতে নিয়েছেন। তিনি বলেন, এই উপহার প্রদানের মধ্য দিয়ে নারী সমাজকে সম্মানীত করার চেষ্টা করেছি মাত্র। এই ধারা অগামীতেও অব্যাহত থাকবে।
উপহার বিতরণী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন, পররাষ্ট্রমন্ত্রী ও সিলেট-১ আসনের সংসদ সদস্য ড. এ কে আব্দুল মোমেন এমপি। প্রধান অতিথি এ সময় বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেশের উন্নয়ন চান। সিলেট সিটি করপোরেশনে বিএনপি মেয়র থাকার সত্ত্বেও তাকে যথেষ্ট টাকা দিচ্ছেন, প্রজেক্ট দিচ্ছেন, সাহায্য করছেন। যার ফলে মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী অনেক অনেক কাজ করার সুযোগ পেয়েছেন। শেখ হাসিনা টাকা ও অনুমোদন দিচ্ছেন বলে মেয়র আরিফ কাজ করেছেন।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর আন্তরিকতার কারণে আজ দেশের মানুষের জীবন যাত্রার মান উন্নত হয়েছে। শেখ হাসিনা গরীবের বন্ধু। ইউক্রেন রাশিয়ার যুদ্ধের কারণে জিনিসপত্রের দাম বেড়েছে। এ অবস্থায় যাতে সাধারণ মানুষের কষ্ট না হয়, সেজন্যে এই সরকার দেড় কোটি মানুষের বাসায় সস্তা দরে খাবার ও বিভিন্ন অনুদান পৌঁছে দিয়েছে। গৃহহীনদের ঘর করে দিয়েছে। জনগনের মঙ্গলের ক্ষেত্রে শেখ হাসিনা সব সময় অগ্রসর।
সিলেট জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি ও সদর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান আশফাক আহমদ এর সভাপতিত্বে ও সহ-সভাপতি সুজাত আলী রফিকের পরিচালনায় উপস্থিত ছিলেন ও বক্তব্য রাখেন, সিলেট জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি এডভোকেট নিজাম উদ্দিন পিপি, সহ-সভাপতি ড. আহমদ আল কবির, এডভোকেট রাজ উদ্দিন, সিলেট-৩ আসনের সংসদ সদস্য হাবিবুর রহমান হাবিব, মহানগর আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি বিজিত চৌধুরী, সহ-সভাপতি জগদীশ চন্দ্র দাশ, যুগ্ম সম্পাদক বিধান কুমার সাহা,সাংগঠনিক সম্পাদক এডভোকেট রনজিত সরকার, জেলা আওয়ামী লীগের তথ্য ও গবেষণা বিষয়ক সম্পাদক মবশ্বির আলী, ইফতেখার হোসেন পিয়ার,জগলু চৌধুরী যুব মহিলা লীগের কেন্দ্রীয় সভাপতি ডেইজি সারোয়ার, কৃষি বিষয়ক সম্পাদক তপন মিত্র,জেলা আওয়ামী লীগের সদস্য আবদাল মিয়া,মহানগর আওয়ামী লীগে সদস্য ও সিলেট চেম্বারের সভাপতি তাহমিন আহমদ, , মহানগর মহিলা আওয়ামী লীগের সভাপতি শাহানা বেগম, সাধারণ সম্পাদক আসমা কামরান, মহানগর আওয়ামী লীগের সদস্য মো: শাহজাহান আহমদ, জুমাদিন আহমদ, জেলা যুবলীগের সভাপতি ও ওসমানীনগর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান শামিম আহমদ ভিপি, জেলা যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক শামিম আহমদ, মহানগর যুবলীগর সভাপতি আলম খান মুক্তি, সাধারণ সম্পাদক মুশফিক জায়গীরদার, সিলেট জেলা পরিষদের সদস্য সুসমা সুলতানা,জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি নাজমুল ইসলাম, সাধারণ সম্পাদক রাহেল সিরাজ, মহানগর ছাত্রলীগের সভাপতি কিশওয়ার জাহান সৌরভ, সাধারণ সম্পাদক নাঈম আহমদ প্রমুখ।