‘অবৈধপথে ইতালি যাত্রায় শীর্ষে বাংলাদেশিরা’
নিউজ ডেস্ক
প্রকাশিত হয়েছে : ২৩ জুলাই ২০২২, ৭:০৮ পূর্বাহ্ণএখন পর্যন্ত ভূমধ্যসাগর পাড়ি দিয়ে অবৈধপথে ইতালি যাত্রায় বাংলাদেশি নাগরিকরা শীর্ষে। এই বছরের শুরু থেকে গত জুন পর্যন্ত ৪ হাজার ৬০৬ জন বাংলাদেশি অবৈধপথে ইতালি গেছেন। অবৈধপথে লিবিয়া, তিউনিশিয়া হয়ে ভূমধ্যসাগর পাড়ি দিয়ে ইতালি যাত্রা মানে মৃত্যুফাঁদে পা দেওয়া। অথচ ইউরোপের দেশগুলোতে এখন বৈধভাবে বাংলাদেশি যাওয়ার সুযোগ সৃষ্টি হচ্ছে। ৩ হাজার বাংলাদেশির বৈধভাবে ইতালি যাওয়ার সুযোগ হচ্ছে। কিন্তু অবৈধপথে মানবপাচার বন্ধ না হলে বাংলাদেশিদের জন্য ইউরোপ বা ইতালি যাওয়ার বৈধপথের সুযোগ নষ্ট হবে।
শুক্রবার (২২ জুলাই) শরীয়তপুর পৌরসভা মিলনায়তনে মানব পাচার প্রতিরোধ ও নিরাপদ অভিবাসন উৎসাহ উৎসাহিত করার লক্ষ্যে আয়োজিত এক মতবিনিময় সভায় বক্তারা এসব কথা বলেন।
বাংলাদেশে নিযুক্ত ইতালির রাষ্ট্রদূত এনরিকো নুনজিয়াতা বলেন, প্রতি বছর প্রচুর মানষ জীবনের ঝুকি নিয়ে ভূমধ্যসাগর পাড়ি দিয়ে ইতালিতে প্রবেশ করেন, এই যাত্রা খুবই ভয়ঙ্কর এবং এটা মৃত্যুফাঁদ। এই যাত্রায় বাংলাদেশিরাও আছেন। এই বছরের প্রথমার্ধে ২১ হাজার ৮৪৮ জন বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে অবৈধপথে ইতালিতে প্রবেশ করেন, যা আগের বছরের তুলনায় ২২ শতাংশ বেশি। যার মধ্যে বাংলাদেশি নাগরিক রয়েছে ৪ হাজার ৬০৬ জন, যা আগের বছরের তুলনায় ৩১ শতাংশ বেশি। এভাবে অবৈধপথে ইতালি আসার মধ্যে বাংলাদেশিরা শীর্ষে। এভাবে ইতালি আসা খুবই ভঙ্ককর, এটা মানবপাচারের অংশ। এভাবে ইতালি আসতে গিয়ে গত বছর ৩ হাজার ২৩১ জন মানুষ মৃত্যুবরণ করেছে। আরেকটি ভয়ঙ্কর তথ্য হচ্ছে গত বছর ভূমধ্যসাগর পাড়ি দিয়ে ২ হাজার ৩৬০ জন অপ্রাপ্ত বয়স্ক বাংলাদেশি ইতালি এসেছে। কিন্তু আমাদের এভাবে মানবপাচার বন্ধ করতে হবে।
তিনি আরো বলেন, ইতালিতে বৈধভাবে বাংলাদেশিরা যাতে যেতে পারে সেজন্য আমরা বাংলাদেশ সরকারের সাথে কাজ করছি। এরই মধ্যে ১ হাজার ৬০০ বাংলাদেশিকে বৈধভাবে ইতালিতে কাজ করার ভিসা দেওয়া হয়েছে, সামনে আরো ৩ হাজার বাংলাদেশি ভিসা পাবে। বাংলাদেশিদের উচিত এই সুযোগ কাজে লাগানো। অবৈধপথে মানব পাচার অব্যাহত থাকলে বাংলাদেশ বৈধভাবে ইতালিতে যাওয়ার সুযোগ হারাবে।
সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে সংসদ সদস্য নাহিম রাজ্জাক বলেন, শরীয়তপুর থেক ৪ লাখ বাংলাদেশি ইতালি গেছেন। পদ্মা সেতু হওয়ার পর এই সেতুর সাথে যে ২১টি জেলা জড়িত তার মধ্যে শরীয়তপুরের মানুষ সবার আগে সুবিধা পাবে। এই জেলার অর্থনৈতিক উন্নতির জন্য আমরা পরিকল্পনা নিয়ে বাস্তবায়ন করছি। এই জেলা থেকে যেন অবৈধ উপায়ে মানুষ ইতালি পাড়ি না দেয় সেজন্য দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনা করেছি।
পররাষ্ট্র সচিব মাসুদ বিন মোমেন বলেন, অবৈধপথে লিবিয়া, তিউনিশিয়া হয়ে ভূমধ্যসাগর পাড়ি দিয়ে ইতালি যাত্রা মানে মৃত্যুফাঁদে পা দেওয়া। এভাবে অবৈধপথে বিদেশ যাওয়ায় এখন পর্যন্ত প্রচুর মানুষ নির্যাতনের শিকার হচ্ছেন। এই বছর আমরা অবৈধপথে বিদেশ যাত্রার ১ হাজার ৩৭০ বাংলাদেশিকে আন্তর্জাতিক অভিবাসন সংস্থার সহযোগিতায় দেশে ফিরিয়ে এনেছি। সামনের সপ্তাহে ৮৬ জনকে লিবিয়া থেকে দেশে ফেরত আনা হবে। এরা সবাই মানব পাচারের শিকার। এভাবে অবৈধ পথে ইতালি যাত্রা সকলের সহযোগিতা নিয়ে বন্ধ করতে হবে।
মতবিনিময় সভায় প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের সচিব ড. আহমেদ মুনিরুছ সালেহীন, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগের সিয়ির সচিব মো. আখতার হোসেন, পুলিশের মহাপরিদর্শক ড. বেনজীর আহমেদসহ আরো অনেকে বক্তব্য দেন।