জেনারুল ইসলামের একগুচ্ছ কবিতা
নিউজ ডেস্ক
প্রকাশিত হয়েছে : ১৯ ফেব্রুয়ারি ২০২২, ৩:৪৮ অপরাহ্ণজেনারুল ইসলাম
শ্রমিকের গান
রোদেপোঁড়া ধানশ্রমিকের ঘাম
কপালের ভাঁজে চকচক করে আগামির দিন
মাঝে মাঝে ভেসে যায় অকালের স্রোতে।
রিকাশার টুংটাং কিংবা প্যাডেলের চক্কর
কর্দমাক্ত পায়ে পায়ে চলে সামনের পানে
ট্র্যাফিকজ্যাম অবরোধে অচল হয় জীবন চাকা।
বহুতল ভবনে দমবন্ধ উজ্জল আলোয়
সুইং মেশিনে সেলাই করে আগামির স্বপ্ন
পলিটিক্স দালালে কেটে যায় মাইনের অংশ।
সবুজ বাগানে দেখি কিশোরীর মুখ
কপালে পিঠে সংসার আর জীবনের বোঝা
মাঝে মাঝে হেরে যায় নিয়তির কাছে।
শাওনের ঝড়ে হাওর জলে যুদ্ধ করে কেউ
স্বচ্ছজলে ফেলে স্বপ্নবোনা জীবিকার জাল
সেখানেও ইজারা মালিকের তাণ্ডবনৃত্য!
শোক ও অসুখের পৃথিবী
ছাপান্না হাজার বর্গমাইলের পুরো ঘরটায়
এলোপাতারি রক্তাক্ত ব্যান্ডেজ
ঝুলানো স্যালাইন,লম্বা প্রেসক্রিপশান
ব্যবহৃত সুঁচালো সিরিঞ্জের আগায় রক্তের ফোঁটা
ঔষধের ডিব্বা,ব্যাগভর্তি ফরমালিনমাখা রোগীর পৈথ্য।
পুরনো ডেস্কে তেলাপোকার বাসা
মেঝেতে কফ,সর্দি,কালো রক্ত,বীর্যের দাগ
মেয়াদহীন অক্সিজেন জার,পরিত্যক্ত গ্যাসলাইন
ফ্ল্যাশবিহীন শৌচাগার, আটকে পড়া নর্দমা
লাশকাটার ঘরে লাশের গন্ধ,এম্বুলেন্সের হুইসেল
তারপাশেই ভিন্ন গ্রহের সিটি কর্পোরেশানের
ময়লার ভাগাড়ে মাছির ভনভন।
অপারেশান থিয়েটারে আলোর খেলা
আপাদমস্তক শাদা পোশাকে ঢাকা স্বাস্থ্যকর্মী
ট্রলিতে ট্রলিতে লাশের দৌড়াদৌড়ি
আইসিইউ,বার্ণ ইউনিটে শিশুর কাতরানী।
চারদিকে কেবল শোক আর অসুখ
তবুও আমরা হাসি পোঁকা খাওয়া দাঁতে
ধারালো করাতে কাটি সবুজ অক্সিজেন
উন্মাদ খাল ভরাট আর নদী দখলের খেলায়।
পুরো পৃথিবীই যখন অকেজো হাসপাতাল
আমরা সেখানেই বাজাই মরণের বীণ
হাজার টাকার নোটে কিনি রিভলভারের ট্রিগার।
পূণ্যের মজলিসে পাপিষ্ঠ আদম
বেহিসেবী মনে বাস করি পাপের সাম্রাজে
লোভের মসনদে পরি দাম্ভিকতার মুকুট
পবিত্র রক্তরসে-
জাগ্রত চেতনায় অবিশ্বাসের ভাইরাস।
পিতার তসবিহ,মায়ের জায়নমাজ বোনের দস্তরখানা
মৌলভির বেত সব-সব ভূলে নিমগ্ন দুনিয়ার মায়ায়
নেয়ামেতর শুকরান, সালাম-কালাম সব-সব ভুলে
পাঠ করি কেবল উন্নয়নের ছবক।
পূণ্যের মজলিসে আমি পাপিষ্ঠ আদম
আমার চোখে কেবল নারী, কুমারী,কড়ি আর
নিকোটিনের ইবাদতে ব্যস্ত,ব্যস্ত- মহাব্যস্ত।
এবিএ/১৯ ফেব্রুয়ারী