ডিজিটাল সিলেট : ৩ বছরেও সচল হয়নি ‘জয় বাংলা’
নিউজ ডেস্ক
প্রকাশিত হয়েছে : ২৫ অক্টোবর ২০২২, ১২:২৮ অপরাহ্ণইউজার নেম ‘ডিজিটাল বাংলাদেশ’ যার পাসওয়ার্ড ‘জয় বাংলা’। বলছি ডিজিটাল নগরের আওতাভুক্ত প্রথম ধাপ পাবলিক ওয়াই-ফাই জোনের অচলাবস্থার কথা। প্রকল্পের নাম হয় ডিজিটাল সিলেট প্রকল্প। এর আওতায় সিলেট হবে দেশের প্রথম পূর্ণাঙ্গ ডিজিটাল নগর। কিন্তু গেল তিন বছরেও আলোর মুখ দেখেনি প্রকল্পটি।
২০১৯ সালে পরীক্ষামূলকভাবে চালু হয়েছিল ফ্রি ওয়াইফাই কার্যক্রম। তখন নগরীর ৬২ টি পয়েন্টে ১২৬ টি অ্যাকসেস পয়েন্টের মাধ্যমে বিনামূল্যে এই ইন্টারনেট সেবা প্রদানের প্রতিশ্রæতি দেয়া হয়েছিল। প্রকল্প ব্যয় ধরা হয়েছিল ৪ কোটি টাকা। সরকারের তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগের অধীনে এই ফ্রি ওয়াইফাই প্রকল্প বাস্তবায়ন করে বাংলাদেশ কম্পিউটার সমিতি। এরই মধ্যে পেড়িয়ে গেছে তিন বছর। তবে ডিজিটাল সেবা দূরে থাক বরং বিনামূল্যের ওয়াইফাই’ প্রকল্পটিই এখন নগরবাসীর যন্ত্রণার কারণ!
ভুক্তভোগীরা জানান, কোথাও নেটওয়ার্কের গতি খুব দুর্বল, কোথাও আবার লগইন হচ্ছে না। এতে হতাশ ব্যবহারকারীরা। কয়েক কোটি টাকার এ প্রকল্পটি বলতে গেলে মুখ থুবড়ে পড়েছে।
জানাগেছে, সিলেটকে দেশের প্রথম পূর্ণাঙ্গ ডিজিটাল নগরী হিসেবে গড়ে তুলতে হাতে নেয়া হয় ‘ডিজিটাল সিলেট প্রকল্প’। এ প্রকল্পের উদ্বোধন হয় ২০১৯ সালের ২৭ জুন। প্রকল্পের জন্য উন্মুক্ত দরপত্রে অংশ নিয়ে নগরীতে ওয়াইফাই সংযোগ চালুর কাজ পায় ‘আমরা নেটওয়ার্ক’ নামক প্রতিষ্ঠান। আমরা নেটওয়ার্ক ওয়াইফাই সংযোগ চালুর কাজ করেছিল। এ কাজে রাউটার, ক্যাবল প্রভৃতি সরঞ্জাম আনা হয়েছিল চীনা প্রতিষ্ঠান হুয়াওয়ের কাছ থেকে। নগরীর ৬২টি পয়েন্টে ওয়াইফাই রাউটার বসানো হয়েছিল। এসব রাউটারের মাধ্যমে ১২৬টি অ্যাকসেস ছিল পয়েন্ট।
পয়েন্টগুলো থেকে যে কেউ নিজের মোবাইল ফোনের ওয়াইফাই অন করার পর ‘ডিজিটাল বাংলাদেশ’ লেখা ইউজার নেম পাওয়া যাবে। পাসওয়ার্ড দিলেই সংযোগ চালু হয়ে যাবে। প্রতিটি অ্যাকসেস পয়েন্টে ৫০০ জন মানুষ সংযুক্ত হতে পারবেন। তবে একসঙ্গে ইন্টারনেট ব্রাউজ করতে পারবেন সর্বোচ্চ ২০০ জন। পুরো বিষয়টি ঢাকার নিয়ন্ত্রণ কক্ষ থেকে পর্যবেক্ষণ করার কথা ।
নগরীর চৌকিদেখি, দরগাগেইট, চৌহাট্টা, বন্দরবাজার, হাসান মার্কেট, সুরমা ভ্যালি রেস্টহাউস, কিনব্রিজ, রেলওয়ে স্টেশন, বাস টার্মিনাল, কদমতলী, হুমায়ুন রশীদ চত্বর, উপশহর, টিলাগড়, শাহী ঈদগাহ, কুমারপাড়া, বালুচর, নাইওরপুল, মীরাবাজার, রায়নগর, সোবাহানীঘাট, ধোপাদিঘিরপাড়, নয়াসড়ক, কাজীটুলা, চৌহাট্টা, হাউজিং এস্টেট, সুবিদবাজার, মীরের ময়দান, পুলিশ লাইনস ও রিকাবীবাজার এলাকায় বসানো হয় ফ্রি ওয়াইফাই সার্ভিস।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, নগরীর অধিকাংশ স্থানে ওয়াই-ফাই সচল নেই। সচল নেই আইপি ক্যামেরাও। এ ছাড়া চালু হয়নি ওসমানী মেডিকেলের অটোমেশনে হেলথ ম্যানেজমেন্ট সিস্টেম।
সম্প্রতি প্রকল্পটি পরিদর্শন করেছে সরকারের বাস্তবায়ন, পরিবীক্ষণ ও মূল্যায়ন বিভাগ (আইএমইডি)। কিন্তু ব্যর্থ ও অচল প্রকল্প পর্যবেক্ষণের পরও এতে কোনো আপত্তি না জানিয়ে বরং মেয়াদ বাড়ানোর পক্ষে অনাপত্তি জানিয়েছে আইএমইডি। এ ছাড়া দুই অর্থবছরে ৫টি অডিট আপত্তির মধ্যে ৩টিই অনিষ্পন্ন। এর মধ্যে একটিতে ব্যক্তি পরামর্শকদের বেতন-ভাতা থেকে নির্ধারিত হারে ভ্যাট না কর্তন করায় ৯০ হাজার টাকার রাজস্ব ক্ষতি, আরেকটি রয়েছে ২০১৯-২০ অর্থবছরে প্রকল্পের অব্যয়িত ৫৮ হাজার ৬৫১ টাকা সরকারি কোষাগারে জমা না দিয়ে তা কোথায় খরচ করা হয়েছে, তার হদিস না থাকা। আর তৃতীয়টি হলো, দুর্বল নেটওয়ার্ক সিগন্যাল ও ওয়াই-ফাই সিগন্যাল বিচ্ছিন্ন থাকা প্রসঙ্গে প্রকৃত উদ্যোগ ব্যাহত। এই অডিট আপত্তিগুলো দ্রæত নিষ্পন্ন করার পরামর্শ দিয়েছে আইএমইডি।
নগরীর আম্বরখানা এলাকার ব্যবসায়ী পারভেজ আহমদ ফ্রি ওয়াইফাই সেবা প্রসঙ্গে বলেন, সেবাটি নামের মধ্যেই সীমাবদ্ধ। ডিজিটাল সিলেটের বিশাল স্বপ্ন দেখিয়ে এটি বসানো হয়েছে, কিন্তু এতে নগরবাসীর কোন উপকার হয়নি। এমন ওয়াইফাই থেকে মোবাইলের টুজি’র গতি ভালো।
‘ডিজিটাল সিলেট সিটি’ প্রকল্পের উপ-প্রকল্প পরিচালক মধুসূদন চন্দ বলেন, এই প্রকল্পের আওতায় আমরা ৩টি প্রজেক্ট হাতে নিয়েছিলাম। এরমধ্যে গেল বছরের মার্চে আমরা সম্পূর্ণ চালু থাকা অবস্থায় ফ্রি ওয়াইফাই সিলেট সিটি কর্পোরেশনের কাছে এবং সিসি ক্যামেরা সিলেট মেট্রোপলিটন পুলিশের কাছে হস্থান্তর করে দিয়েছি। এখন দুটো বিষয় সংশ্লিষ্টরাই দেখভাল করছেন। আর ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের অটোমেশনে হেলথ ম্যানেজমেন্ট সিস্টেম চলতি বছরের ডিসেম্বরের মধ্যেই হস্থান্তর করতে আমরা প্রস্তুত।
এ বিষয়ে কথা বলতে সিলেট সিটি কর্পোরেশনের প্রধান প্রকৌশলী নূর আজিজুর রহমানের মোবাইলে একবাধিকবার কল দিলেও তার মোবাইলটি বন্ধ পাওয়া যায়।
এব্যাপারে সিটি কর্পোরেশনের আইটি কর্মকর্তা শাহাদাত হোসাইন সায়েম জানান, বর্তমানে কয়টি ওয়াইফাই চালু আছে সেই বিষয়টি তার জানা নেই। অফিস টাইমে তিনি খোঁজ নিয়ে চালুর খবর জানাবেন।