ধর্মঘটে বাড়তি যে সুবিধা পেল বিএনপি
নিউজ ডেস্ক
প্রকাশিত হয়েছে : ১৯ নভেম্বর ২০২২, ৩:২০ পূর্বাহ্ণগত এক দশকে সিলেট নগরীতে এমন পোস্টার-ফেস্টুন শোভা পায়নি। ছিল না এতো জনসমাগম। দেয়ালে, গাছের ডালে, বিদ্যুতের খুঁটিতে, দোকানপাটে সাঁটানো পোস্টার-ব্যানার। নেতাকর্মীরা বলছেন, নানা বাধার কারণে একদিনের সমাবেশ তিনদিনের সমাবেশে পরিণত হয়েছে। ধর্মঘট বাধা নয় বরং সমাবেশের প্রতি আরও ঝোঁক বেড়েছে সাধারণ মানুষের। ফলে সমাবেশের দু’দিন আগে থেকেই নেতাকর্মীরা মাঠে অবস্থান নেয়া শুরু করেছেন। ক্ষণে ক্ষণে সরকারবিরোধী শ্লোগান নিয়ে মাঠে ঢুকছেন বিভিন্ন জেলা থেকে আসা নেতাকর্মীরা। এদিকে বিভিন্ন জেলা থেকে আগত নেতাকর্মীদের থাকা খাওয়ার জন্য নগরের প্রায় সবকটি কমিউনিটি সেন্টার ভাড়া করা হয়েছে। ফাঁকা নেই আলীয়া মাদ্রাসা মাঠও। বিছানাসহ অনেক নেতাকর্মী রাত যাপন করেছেন ক্যাম্পের মধ্যেই।
শুক্রবার সকাল থেকে বিভিন্ন উপজেলার প্রত্যন্ত অঞ্চল থেকে লোকজন সিলেট এসেছেন নৌকাযোগে। মোটর সাইকেল মিছিল নিয়ে কয়েকহাজার নেতাকর্মীও এসেছেন বিভিন্ন স্থান থেকে। সমাবেশস্থলে আসা নেতা-কর্মীরা বলছেন, ধর্মঘট না হলে শনিবারই মাঠে আসতাম। তবে এর আগে বৃহস্পতিবারও বিভাগের বিভিন্ন স্থান থেকে নেতাকর্মীরা আশ্রয় নিয়েছেন আলীয়া মাদ্রাসা মাঠে। ক্যাম্পেই পাচ্ছেন বিশুদ্ধ পানীয়সহ খাবার সুবিধা।
সুনামগঞ্জের তাহিরপুর উপজেলার দিনমজুর রফিক মিয়া। রাজনৈতিক দলের কোনো পদ-পদবীতে নেই তার নাম। তবুও একদিন আগে সিলেট আলিয়া মাঠে আসেন। মাঠে বালির উপর স্থাপিত ক্যাম্পে বিছানা করে রাত্রিযাপন করেন। তিনি জানান, অধিকার আদায়ের জন্য বিএনপি’র সমাবেশকে সমর্থন করতে এসেছি। এখানে যারা এসেছেন সবাই নেতা না। সুনামগঞ্জ থেকে যারা এসেছেন তাদের বেশিরভাগ মানুষ ক্ষেতে-খামারে, কৃষি জমিতে কাজ করে জীবনযাপন করছেন। তবে নিত্যপণ্যের দাম নিয়ে দেশের মানুষ আজ অতিষ্ঠ হয়ে গেছে। এখান থেকে পরিত্রাণ চায়।
শুধু রফিক মিয়াই শুধু নয় তাদের মতো অনেকেই বিএনপির বিভাগীয় সমাবেশে দেখতে সিলেট এসেছেন। শুক্রবার বিকালে সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, মাঠের এক পাশে তৈরি করা হয়েছে মঞ্চ। মাঠে চলছে মাইক, ব্যানার টানানো হয়েছে এবং মাঠের দুই পাশে দুটি ‘বড় পর্দা’ লাগানো হয়েছে। মাঠে বিভিন্ন স্থান থেকে আসা বিএনপির হাজার হাজার নেতাকর্মীরা উপস্থিত হয়েছেন। বেশকিছু নেতাকর্মী একেকজন একেক দায়িত্ব পালন করছেন। প্রত্যেকেই আছেন ফুরফুরে মেজাজে। আলিয়া মাদ্রাসার মাঠে প্যান্ডেলে শ্লোগান, মিছিল আর গান বাদ্যের তালে মুখর। ছোট ছোট পিকআপ, মাইক্রোবাসে করে অন্যান্য জেলা থেকেও বিএনপি কর্মী সমর্থকরা এসে পৌঁছেছেন। সমাবেশস্থলে কাজী নজরুল ইসলামের রণ সঙ্গীত, শাহ আব্দুল করিম, রাধারমণ দত্ত ও দেশাত্মবোধক গানের তালে নেচে গেয়ে উচ্ছ্বাস প্রকাশ করেন তরুণ নেতাকর্মীরা। সব মিলিয়ে উৎসবমুখর সমাবেশস্থল। বিভিন্ন জেলা থেকে আসা দলটির কর্মীরা নেতাদের নামে, দলের বিভিন্ন ইস্যুতে শ্লোগান দিচ্ছেন।
মঞ্চের তিন পাশে নির্মাণ করা হয়েছে বিভাগের বিভিন্ন এলাকা নেতাদের উদ্যোগে ক্যাম্প। ক্যাম্পে ক্যাম্পে চলছে রান্না ও খাবারের আয়োজন। ক্যাম্পগুলোতে মওজুদ করে রাখা হয়েছে চালের বস্তা, তেল ও রান্নার সামগ্রী। কয়েকজন নারীকে পেঁয়াজ, রসুন, আদা, মরিচ কাটতে দেখা যায়। প্রতিটি ক্যাম্পেই বড় বড় ডেকচিতে হচ্ছে রান্নাবান্না। কেউ রান্না করেছেন সাদা ভাত, মাছ মাংস আবার কেউ রান্না করছেন খিঁচুড়ি। পরে দুপুরে নিজেদের মধ্যে খাবার বিতরণ করছে তারা।
এছাড়াও মাঠের প্রবেশমুখে ‘ডা. জোবায়দা রহমান ফ্রি ফুড ক্যাম্প’। এ ক্যাম্প থেকে সমাবেশস্থলে আসা নেতাকর্মীদের পানি ও শুকনো খাবার বিতরণ করা হচ্ছে।