নতজানু আকবর, সিলেটে স্বস্তি
নিউজ ডেস্ক
প্রকাশিত হয়েছে : ১০ নভেম্বর ২০২০, ১২:৪৭ পূর্বাহ্ণ
সিলেটবাসীর জন্য অভিশাপ হিসাবে কুখ্যাত কোতোয়ালি থানার বন্দরবাজার পুলিশ ফাঁড়ি। তার চেয়েও বেশি কুখ্যাতি অর্জন করেছিলেন এর ইনচার্জ আকবর হোসেন ভূঁইয়া।
তিনি পুলিশের প্রবল প্রতাপশালী এসআই। তবে এখন বরখাস্তকৃত। সিলেটের আখালিয়া-নেহারিপাড়ার যুবক রায়হান আহমদ (৩৪) হত্যাকারী হিসাবেই দেশজুড়ে কুখ্যাত এখন তিনি। নানা ছল-চাতুরি পর অবশেষে আইনের কাছে নতজানু হতে বাধ্য হলেন পুলিশের এই অভিশাপ।
গত ১৩ অক্টোবর থেকেই তিনি পালিয়েছিলেন। তবে শেষ রক্ষা হয়নি। সোমাবার দুপুরের দিকে কানাইঘাটের ডনা সীমান্ত দিয়ে ভারতে পালানোর সময় জেলা পুলিশের একটি দল তাকে গ্রেপ্তার করতে সক্ষম হয়।
এর আগে গত ১১ অক্টোবর রায়হানকে ধরে নেয়া হয় সিলেট মহানগরীর কাষ্টঘর সুইপার কলোনি থেকে। সারারাত ফাঁড়িতে রেখে আকবরের নির্দেশে তার উপর চালানো হয় অকথ্য নির্যাতন। উদ্দেশ্য ছিল মাত্র ১০ হাজার টাকা। তার মা সালমা বেগমকে ফোন দিয়ে আকবর বলেছিলেন ১০ হাজার টাকা দিয়ে তাকে বাঁচাতে।
অসহায় জননী ভোরেই রায়হানের সৎবাবা ও চাচাকে পাঠিয়েছিলেন ফাঁড়িতে। সাথে ছিল ৫ হাজার টাকা। কিন্তু এতে মন গলেনি আকবর ও তার সাঙ্গপাঙ্গদের। তারা ৯টার পর পুরো ১০ হাজার টাকা নিয়ে যেতে বলেছিল।
কিন্তু তখন গিয়ে আর রায়হানকে ফাঁড়িতে পাওয়া যায়নি। বলা হয়, অসুস্থ রায়হানকে ওসমানীতে পাঠানো হয়েছে। সেখানে গিয়ে পরিবারের সদস্যরা তার লাশ দেখতে পান। দেখেন শারীরিক নির্যাতনের বিভৎস চিহ্ন তার সারা শরীরে। চতুর আকবর গণপিঠুনিতে ছিনতাইকারী নিহত বলে চালিয়ে দিতে চাইলেও ব্যর্থ হয় রায়হানের পরিবারের চেষ্টায়।
তার বিধবা স্ত্রী তান্নি ১২ অক্টোবর গভীর রাতে পুলিশ হেফাজতে নির্যাতনে মৃত্যুর আইনে মামলা দায়ের করেন। তদন্তের দায়িত্ব দেয়া হয় পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনকে।
প্রাথমিক সত্যতা পান তারাও। এরপর ঘটতে থাকে একের পর এক ঘটনা। আকবর ও তার ৩ সহযোগীকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়। আরো ৩ জনকে করা হয় প্রত্যাহার। ১৩ অক্টোবর থেকে তিনি লাপাত্তা হলে সারাদেশে তোলপাড় শুরু হয়।
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী, পররাষ্ট্রমন্ত্রী আশ্বাস দেন অবশ্য আকবরসহ জড়িতদের গ্রেপ্তার করা হবে। কিন্তু কিছুতেই কিছু হচ্ছিলনা। পিবিআই’র তদন্ত ও চলে সমান গতিতে।
রায়হানের লাশ কবর থেকে তুলে দ্বিতীয়বার ময়না তদন্ত, জেলা পুলিশের সিসিটিভি ফুটেজ, কাষ্টঘরের যে ঘর থেকে রায়হানকে ধরে নেয়া হয়েছিল সেই ঘরের মালিকসহ তদন্তের প্রতিটি পর্যায়েই পুলিশী নির্যাতনে রায়হানের মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত হয়।
এদিকে আকবর পালিয়ে যাওয়ার পর থেকেই ফুঁসে উঠেন সিলেটের মানুষ। রাজপথে নেমে আসেন তারা। চলে মানববন্ধন, প্রতিবাদ সভা, সংবাদ সম্মেলন, অবরোধ, অনশন ইত্যাদি।
কিছুতেই কিছু হচ্ছিলনা। আকবরের টিকিটির নাগালও পাচ্ছিলেন না পিবিআই, জেলা ও মহানগর পুলিশ, র্যাব বা অন্য কোন সংস্থার সদস্যরা। তবে শেষ রক্ষা হলোনা তার। আইনের ধরা পড়তে বাধ্য হলেন প্রবল প্রতাপশালী বরখাস্তকৃত এই এসআই’র।
তার আমলে বন্দরবাজার পুলিশ ফাঁড়ির সামনে দিয়ে রাত সাড়ে ১১টার পর বৈধ স্ত্রীকে নিয়েও যেতে পারতেন না স্বামী। নানা ভয়ভীতি দেখিয়ে আদায় করতেন মোটা অংকের টাকা। নিজের গ্রামের বাড়িতে তুলেছেন আলিশান বাড়ি। কিনেছেন ফ্ল্যাট জমি ইত্যাদি। প্রায় শূন্য থেকে এখন কোটিপতি তার পরিবার।
আকবর গ্রেপ্তারের খবরে উল্লসিত রায়হানের পরিবারের সদস্যবৃন্দ। ঢাকায় পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সাথে দেখা করে বিষয়টি নিয়ে কথা বলার সময়ই গ্রেপ্তারের সংবাদ পেয়েছেন তারা।
এ খবরে সন্তোষ প্রকাশ করেন যুক্তরাষ্ট্র প্রবাসী তার চাচা ময়নুল ইসলাম কুদ্দুস। তিনি বলেন, আমরা সর্বোচ্চ শাস্তি চাই। সেটি নিশ্চিত করবেন সরকার এই প্রত্যাশা। তিনি এ ব্যাপারে গণমাধ্যম কর্মী, পুলিশ ও সিলেটবাসীকে আন্তরিক কৃতজ্ঞতা জানিয়েছেন।
এ ব্যাপারে সিলেট সিটি কর্পোরেশনের ৯ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর মখলিসুর রহমান কামরানও সবাইকে ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জানিয়েছেন।
আকবরকে সন্ধ্যায় পিবিআইর হেফাজতে নেয়া হয়েছে। মঙ্গলবার তাকে আদালতে তোলার কথা।