মিতু হত্যা : বাবুলসহ ৭ জনের বিরুদ্ধে চার্জশিট প্রস্তুত
নিউজ ডেস্ক
প্রকাশিত হয়েছে : ২৭ আগস্ট ২০২২, ৫:১০ অপরাহ্ণচট্টগ্রামে বহুল আলোচিত মাহমুদা খানম মিতু হত্যা মামলায় তার স্বামী সাবেক পুলিশ সুপার (এসপি) বাবুল আক্তারসহ সাতজনকে আসামি করে চার্জশিট প্রস্তুত করেছে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই)। আগামী সপ্তাহে আদালতে চার্জশিট জমা দেয়া হবে।
বাবুল আক্তার ছাড়া অভিযুক্ত অন্যরা হলেন- মো: কামরুল ইসলাম শিকদার মুসা, এহতেশামুল হক প্রকাশ ভোলো, মো: মোতালেব মিয়া ওয়াসিম, মো: আনোয়ার হোসেন, মো: খাইরুল ইসলাম কালু ও শাহজাহান মিয়া।
অন্যদিকে, মিতু খুনের মামলায় গ্রেফতার চারজনকে অভিযোগপত্রে অব্যাহতি দিয়েছে পিবিআই।
তারা হলেন- মো: সাইদুল ইসলাম সিকদার সাক্কু, নুরুন্নবী, রাশেদ ও গুইন্যা।
উল্লেখ্য, ২০১৬ সালের ৫ জুন সকালে চট্টগ্রাম নগরীর পাঁচলাইশ থানার নিজাম রোডে ছেলেকে স্কুলবাসে তুলে দিতে যাওয়ার পথে বাসার কাছে গুলি ও ছুরিকাঘাত করে হত্যা করা হয় মাহমুদা খানম মিতুকে। স্ত্রীকে খুনের ঘটনায় পুলিশ সদর দফতরের তৎকালীন এসপি বাবুল আক্তার নগরীর পাঁচলাইশ থানায় একটি হত্যা মামলা করেন। গোয়েন্দা কার্যালয়ে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদসহ নানা নাটকীয়তার পর ওই বছরের আগস্টে বাবুল আক্তারকে চাকরি থেকে অব্যাহতি দেয়া হয়। বাবুল আক্তার বর্তমানে কারাগারে রয়েছেন।
রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী ঢাকা মহানগর পিপি মো: ফখরুদ্দিন চৌধুরী বুধবার দুপুরে সাংবাদিকদের বলেন, মিতু হত্যাকাণ্ডে বাবুল আক্তার জড়িত ছিলেন। তার পরিকল্পনা ও নির্দেশে খুন হন স্ত্রী মিতু। মূল অভিযোগপত্র ৯ পৃষ্ঠার। তবে এর সাথে ১০ খণ্ডের নথি সংযুক্ত করা হয়েছে। মামলার সাক্ষ্যস্মারকে (এমওই) আমি এরইমধ্যে স্বাক্ষর করে দিয়েছি।
চার্জশিটের চূড়ান্ত প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, মিতু হত্যাকাণ্ডের মূলহোতা বাবুল আক্তার- এটি দিবালোকের মতো স্পষ্ট। বাবুল আক্তার কক্সবাজারে কর্মরত থাকা অবস্থায় বিদেশী এনজিও সংস্থার কর্মী গায়ত্রী অমর সিংয়ের সাথে পরকীয়ায় জড়িয়ে পড়েন। এ নিয়ে পরিবারের মধ্যে অশান্তি সৃষ্টি হয়। এ কারণে বাবুল আক্তার তার স্ত্রী মাহমুদা খানম মিতুকে দুনিয়া থেকে সরিয়ে দেয়ার সিদ্ধান্ত নেন। তিন লাখ টাকায় ‘খুনি’ ভাড়া করে স্ত্রীকে খুন করান। নিজেকে আড়ালে রাখতে প্রচার করেন- জঙ্গিরাই মিতুকে খুন করেছে। মিতুকে খুনের মিশনে নেতৃত্ব দিয়েছে পুলিশ কর্মকর্তা বাবুলের ‘সোর্স’ মো: কামরুল ইসলাম শিকদার মুসা। সাথে ছিল আরো ছয়জন। হত্যাকাণ্ডের পর বাবুল আক্তার মুসাকে ফোনে গা-ঢাকা দেয়ার নির্দেশনা দিয়েছিলেন।
একটি বইয়ের লেখার সূত্র ধরে মামলার জট খোলে বলে তদন্তসংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন। মামলার আলামত হিসেবে উপহার পাওয়া বাবুল আক্তারের একটি বই জব্দের পর হত্যাকাণ্ডের জট খোলে। গায়ত্রী বাবুলকে আহমেদ রশিদ রচিত ইংরেজি ভাষার ‘তালিবান’ নামে একটি বই উপহার দেন। ওই বইয়ের তৃতীয় পাতায় গায়ত্রী অমর সিংয়ের নিজের হাতে লেখা এবং শেষ পাতা ২৭৬-এর পরের খালি পাতাটিতে বাবুল আক্তারের হাতে লেখা ইংরেজিতে তাদের ‘প্রথম সাক্ষাতের’ বিষয়সহ রোমাঞ্চকর মুহূর্তের কিছু বিবরণ লেখা ছিল।
গ্রেফতার ভোলা, ওয়াসিম ও আনোয়ার আদালতে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দিয়ে মিতু হত্যার দায় স্বীকার করেছে। এর মধ্যে ভোলা তার জবানবন্দিতে অপর আসামি মুসার সাথে কথোপকথনের বিষয় উল্লেখ করে। সেখানে বাবুল আক্তার যে মুসাকে তার (বাবুল আক্তারের) স্ত্রীকে হত্যার বিষয়ে নির্দেশ দিয়েছেন সেটি উল্লেখ আছে। তাছাড়া সাইফুল ইসলাম নামে নিজের এক ব্যবসায়ীক অংশীদারের মাধ্যমে বাবুল আক্তার তার স্ত্রী মিতুকে হত্যার জন্য তিন লাখ টাকা পরিশোধ করেছেন সেটিও জবানবন্দিতে এসেছে।
মামলার আসামিদের মধ্যে মুসা ও কালু পলাতক বলে অভিযোগপত্রে উল্লেখ করা হয়েছে। কারাগারে আছেন- বাবুল আক্তার, ওয়াসিম, শাহজাহান মিয়া ও আনোয়ার হোসেন।
মিতু হত্যাকাণ্ডের পর থেকে হদিস মিলছে না কামরুল ইসলাম শিকদার ওরফে মুসার। তার স্ত্রী পান্না আক্তার দাবি করেন, মুছাকে হত্যাকাণ্ডের পর ২০১৬ সালের ২২ জুন প্রশাসনের কিছু লোক ধরে নিয়ে যায়। এরপর থেকে তার আর কোনো খোঁজ মিলছে না। মিতু হত্যা মামলায় মুসার স্ত্রী পান্না আক্তার আদালতে জবানবন্দি দিয়েছেন। অভিযোগপত্রে ৯৭ জনকে সাক্ষী করা হয়েছে। এর মধ্যে মুসার স্ত্রী পান্না আক্তার এবং বাবুলের বন্ধু সাইফুলও রয়েছেন।
২০২১ সালের ১১ মে বাবুল আক্তারকে হেফাজতে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করে পিবিআই। পরদিন বাবুল আক্তার মামলায় আদালতে ৫৭৫ পৃষ্ঠার চূড়ান্ত প্রতিবেদন দাখিল করা হয়। ওই বছরের ১২ মে বাবুল আক্তারের শ্বশুর মোশাররফ হোসেন নগরীর পাঁচলাইশ থানায় বাবুল আক্তারসহ আটজনকে আসামি করে হত্যা মামলা করেন।
মামলার বাকি সাত আসামি হলেন- মো: কামরুল ইসলাম শিকদার মুসা, এহতেশামুল হক ভোলা, মো: মোতালেব মিয়া ওয়াসিম, মো: আনোয়ার হোসেন, মো: খাইরুল ইসলাম কালু ও মো: সাইদুল ইসলাম।
চলতি বছরের ২৫ জানুয়ারি তদন্তকারী কর্মকর্তা আদালতের পর্যবেক্ষণ মেনে মোশাররফের মামলায় চূড়ান্ত প্রতিবেদন দাখিল করেন। একইসাথে ওই মামলার ডকেট প্রথম মামলার সাথে সংযুক্ত করে তদন্তের জন্য আবেদন করেন। আদালত অনুমতি দিলে শুধু বাবুল আক্তারের দায়ের করা মামলাটির তদন্তই চলমান থাকে।