শীতকালীন রোগ থেকে রক্ষা পেতে সতর্ক হচ্ছে সিলেটবাসী
নিউজ ডেস্ক
প্রকাশিত হয়েছে : ১২ নভেম্বর ২০২০, ৮:৩১ অপরাহ্ণকরোনাকালীন সময়ে শীতবস্ত্র কিনতে সিলেট নগরীর দোকানগুলোতে বাড়ছে ক্রেতাদের ভিড়। এতোদিন রাস্তা ঘাটে ব্যবসা মন্দ হলেও শীতকে কেন্দ্র করে নগরীর প্রতিটি দোকানে দোকানে ক্রেতা বিক্রেতার মাঝে বইছে হাঁকডাক আর দর কষাকষিতে জমজমাট হচ্ছে শীতের বাজার। পছন্দের পোশাকটি পেতে এক দোকান থেকে অন্য দোকোনে ফিরছেন ক্রেতারা।
বিশেষ করে সিলেটে নগরীর ফুটপাতে চলছে শীতবস্ত্রের জমজমাট বেচা-কেনা। মধ্যবৃত্ত, নিম্ন মধ্যবৃত্ত ও নিম্ন আয়ের মানুষসহ প্রায় সকল শ্রেণীপেশার মানুষ এ বাজারগুলো থেকে শীতের কাপড় কেনাকাটা করছে।
এদিকে সিলেটের পাহারের পাদদেশের সাথে থাকা উপজেলাতে শীতের আগমনী বার্তা ছড়িয়ে পড়ার সাথে সাথে । সাধারন মানুষ শীত মোকাবেলার প্রস্তুতি নিচ্ছেন বলে জানিয়েছন। ভীড় বাড়ছে লেপ-তোষকের দোকানগুলোতেও। এরপরও সর্দি, কাশিসহ শীতকালীন নানা রোগের হাত থেকে রক্ষা পেতে বাড়তি সতর্কতা নিচ্ছেন সিলেটবাসী। কিনছেন হালকা ও মাঝারি ধরনের শীতের গরম পোশাক।
শীতের আগমনী বার্তার সাথে সাথে সিলেটের লেপ-তোষক প্রস্তুতকারী কারিগরদের মাঝে কর্মচাঞ্চল্য ফিরে এসেছে। নগরীর লেপ-তোষক তৈরির দোকানগুলোতে সকাল থেকে রাত পর্যন্ত ব্যস্ত সময় পার করছেন কারিগররা। তাদের পাশাপাশি বেশ ব্যস্ত সময় পার করছেন ব্যবসায়ীরাও। দিন যতই গড়াচ্ছে শীতের প্রকোপ ততই বেশি বাড়ার আশংকায় উপজেলা সদরসহ বিভিন্ন গ্রামের মানুষ নতুন নতুন লেপ তৈরি করছে। বছরের অন্যান্য সময় বেচাকেনা কম হলেও শীত মৌসুমে বিক্রি কয়েক গুন বেড়ে যায়। বাজারে কম্বলের তুলনায় লেপের দাম কম হওয়ায় চাহিদা বেশি। তুলা পিটিয়ে তা রঙ বেরঙের কাপড়ের তৈরি লেপ-তোষকের কাভারে মুড়িয়ে সুই-সুতার ফোড়ে তৈরি করা হয় লেপ।
সংশ্লিষ্টদের কারিগররা সাথে কথা বলে জানা গেছে, নভেম্বর থেকে ফেব্রুয়ারি মাস পর্যন্ত শীত মৌসুমের অন্তত এই চারটি মাস তাদের ব্যস্ততা বেড়ে যায় বছরের যেকোনো সময়ের চেয়ে অনেক গুণ বেশি। এই সময়টাতে লেপ-তোষক ব্যবসায়ীরা অতিরিক্ত শ্রমিক নিয়োগ করেন। পুরুষ শ্রমিকের পাশাপাশি নারী শ্রমিকেরাও দিনরাত কাজ করেন এ সময়টাতে। তবে করোনা প্রেক্ষাপটে শীত আসার ফলে তুলনামুলক কাজ কম।
তবে অন্য সময়ের রোজগার পুশিয়ে নিতে এ চারটি মাস তারা কাজ করেন সমান তালে। বাকি আট মাস এই কাজ না থাকায় লেপ সেলাই কর্মীরা জীবিকা নির্বাহের জন্য অন্য কাজে মনোনিবেশ করেন। কেউ নেমে পড়েন রিকশা-ভ্যান চালাতে, কেউ মাঠে দিনমজুরের কাজ নেন, আবার কেউ কেউ তাদের সুবিধামতো বেছে নেন অন্য পেশা।
গতকাল সিলেটের বিভিন্ন মার্কেটগুলো ঘুরে দেখা গেছে শীতবস্ত্র বেচা-কেনার তীব্র ভিড়। মানুষকে ঈদ বাজারের মত আগ্রহ নিয়ে শীতের কাপড় কিনতে দেখা গেছে। ভিড়ের কারণে দরাদরি ও যাচাইবাচাই করে কেনার সুযোগ পাচ্ছে না ক্রেতারা। শুধু কাপড়টি পছন্দ হলেই একদাম একরেটে কিনে অন্যকে কেনার সুযোগ করে দিতে হচ্ছে।
বন্দর বাজারের ফুটপাতের ব্যবসায়ী সাহেদ মিয়া বলেন, আমরা বছরে দুই ঈদ ছাড়া এই শীতে একটু বাড়তি ব্যবসা কারার সুযোগ পেয়ে থাকি। তবে সব বছর আবার এ সুযোগ পাওয়া যায় না বলে তিনি জানান। করোনাকালে সবকিছিুতে লোকশান হলেও শীতকে কেন্দ্র করে আবারো বাজার জমজমাট হয়ে উঠছে। সাহেদ বলেন, গত বছরও শীতবস্ত্রের মার্কেট জমজমাট ছিল। তবে এবছর করোনা ও সিটি কর্পোরেনের ধারাবাহিক উচ্ছেদের কারণে
আমাদের ব্যবসার বারটা বেজে গেছে। তিনি বলেন, গত কয়েক মাস ধরে বসে বসে পুঁজি ভেঙ্গে খাচ্ছি। এবছর আমরা যারা ব্যাবসার জন্য পুঁজি খাটিয়ে প্রস্তুতি নিয়েছি তাদের অনেক বেশি লস হয়ে গেছে। তিনি বলেন, যদি কটাদিন সুযোগ পাওয়া যায় তাহলে শীতের কাপড় বেচা-কেনা লস কিছুটা কাটিয়ে উঠা যাবে বলে তিনি জানান।
জামতলার বাসিন্দা হেপি বেগম বলেন, শীতের তীব্রতা আনেক বেড়ে গেছে তাই পুরানো শীতের কাপড় দিয়ে আর কাজ হচ্ছে না। তিনি তার ছেলে অনিক ও মেয়ে সৃষ্টিকে নিয়ে শীতের কাপড় কিনতে এসেছেন, গুলিস্তান ফুটপাতে। তিনি বলেন, যেভাবে শীতের কাপড় বেচা-কেনা হচ্ছে এভাবে ঈদ বাজারেও বেচা-কেনা হয় না। মানুষের ভিড়ের কারণে দোকানেই ঢোকা যাচ্ছে না। দরদাম করে কেনাতো পরের কথা।
সরেজমিন মার্কেটগুলো ঘুরে দেখা গেছে, শীত বস্ত্রের মধ্যে বেশি বেচা-বিক্রি হচ্ছে- ছোট বাচ্চা ও বয়স্কদের কাপড়। মাথার টুপি, পায়ের মোজা, হাত মোজা, মাপলা, স্যুায়েটার, জাম্পার, পুলহাতা গেঞ্জির দোকানেই বেশি ভিড় দেখা গেছে।
তবে ফুটপাতের ব্যবসায়ীরা জানান,দিনের চাইতে রাতে ব্যবসা ভালো হচ্ছে। রাতে শীতের পোশাক কিনছেন জল্লারপারের বাসিন্দা শাহানাজ পারভীন। তিনি পরিবারের জন্য শীতের চাদর ও সোয়েটার কিনেছেন। শাহানাজ বলেন, এখন তো আর হাড় কাঁপানো শীত নেই। তবে রাতের বেলায় কিছুটা শীত পড়ছে। আর এতেই সর্দি, কাশি হচ্ছে শিশুদের।
সুবিধ বাজারের আবির বলেন, শীতের মাত্রা হালকা হলেও সাধারণ কাপড়ে শীত আটকানো যাচ্ছে না। তাই নিজের ও পরিবারের সদস্যদের জন্য শীতের কাপড় কিনতে হাসান মার্কেট এসেছি। ছেলেদের শীতের পোশাক মানেই হলো ফ্যাশন-জানিয়ে এমসি কলেজের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের
শিক্ষার্থী মইনুল হাসান আবীর বলেন, শীত যদিও নেই তারপরও হালকা বাতাসে শরীরে কাঁপুনি লাগে। তার চেয়ে বড় ব্যাপার হলো ফ্যাশন। টুপিওয়ালা সোয়েটার জিন্সের সঙ্গে পরতে অনেকেরই ভালো লাগে। তাতী পাড়ার কাপড় ব্যবসায়ী শাকির হোসেন বলেন, আমরা কমদাম, বেশিদাম সব ধরনের পোশাকই দোকানে তুলি। যে, যেটা পছন্দ করে। শীতের পোশাক বিক্রি তেমন শুরু হয়নি। তবে শীত একটু বাড়তে শুরু করলে আরও বেশি বেচাবিক্রি হবে।
এদিকে সিলেট নগরীর বিভিন্ন পাইকারি দোকানে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, শীত কাপড়ের পাইকারি বাজারে ব্যস্ততা বেড়েছে। দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে শীতের পোশাক কিনতে আসতে শুরু করেছে পাইকাররা। মৌসুমের শুরুতেই এবার বিপণী বিতানগুলোতে ক্রেতাদের আকৃষ্ট করতে সাজিয়ে রাখা হয়েছে সোয়েটার, জ্যাকেট, কোর্ট, টুপিসহ বাচ্চাদের নানা রংয়ের ও ডিজাইনের শীতের পোশাক।