সিলেটে বিলুপ্তির পথে জালিবেতের আসবাবপত্র
নিউজ ডেস্ক
প্রকাশিত হয়েছে : ২৪ সেপ্টেম্বর ২০২২, ১০:১২ অপরাহ্ণজালিবেত গাছ ও বেতের তৈরি আসবাবপত্র এখন প্রায় বিলুপ্তির পথে। গ্রামে নেই জালিবেত আর শহরে নেই বেতের তৈরি সোফা, মুড়া, চেয়ার-টেবিল, দোলনা,বেঞ্চসহ জালিবেত দিয়ে তৈরি করা বিভিন্ন আসবাবপত্র।
সিলেট বিভাগের প্রায় সকল এলাকায় এক সময়ে জালিবেতের তৈরি আসবাবপত্র সৌখিন মানুষেরা ব্যবহার করতেন। প্রতিটি এলাকায় প্রচুর পরিমাণ জালিবেতও পাওয়া যেতো। কিন্তু এখন আর পর্যাপ্ত জালিবেত কোথাও পাওয়া যায় না। প্রাকৃতিকভাবে ঝোপঝাড়ে জন্মানো কাটা ওয়ালা লম্বা লতার মতো এই গাছ সিলেটি ভাষায় জালিবেত নামে পরিচিত। জলিবেতের ইংরেজি নাম র্যাটান। অঞ্চল ভেদে দেশের বিভিন্ন এলাকায় বিভিন্ন নামেই এই লতা আকৃতির বেতের পরিচিতি রয়েছে।
সিলেট অঞ্চলে ছন-বাঁশের ঘর তৈরিতে জালিবেতের ব্যবহার ছিলো প্রচুর। জালিবেত ছাড়া বাঁশের ঘর তৈরি করা কল্পনাই করা যেতোনা। কৃষি কাজেও জালি বেত ব্যবহৃত হতো। আগে স্কুল,মাদ্রাসা, কলেজেও বেত বা বেত্র দিয়ে শিক্ষকরা শিক্ষার্থীদের শাসন করতেন। বেত্রাঘাত করা হতো শিক্ষার্থীদের উপর।
সরকারি পরিত্যাক্ত-অনাবাদি ভুমিতে জালিবেত প্রচুর পরিমাণে জন্মাতো। গ্রামের অধিকাংশ বাড়ির আশ-পাশ ও ঝোপঝাড়ে জালিবেতের গুটা থেকেই জালিবেতের ঝোপের সৃষ্টি হতো। বেতের গুটা ও এক প্রকার সুস্বাদু ফল। বেতগুটা এখন অতি মুল্যে হাট বাজারে বিক্রি হয়।
বেতের আগার নরম অংশটুকু সিলেট অঞ্চলে সবজি হিসেবে রান্না করে খাওয়া হতো। বর্তমানে ঝোপঝাড়ে জন্ম নেয়া ওই লতাজাতের বেত দুস্পাপ্য হয়ে পড়েছে। জালিবেত দিয়ে খাট- পালং, মুড়া চেয়ার,দোলনা, টেবিল, সোফা সহ বিভিন্ন প্রকার পারিবারিক সামগ্রী তৈরি ও বিক্রি করা অনেকের পুরনো পেশা ছিলো। তারা শিল্প হিসেবে এর সাথে জড়িয়ে জীবন -জীবিকার উপায় বেচে নিয়েছিলো। গ্রামে -গ্রামেএখন আর এসব দেখতে পাওয়া যায়নি।
আগে ছাতকের যেখানে -সেখানে ছিলো বেতের বাগান। বর্তমানে ছাতকসহ সিলেট অঞ্চলে জালিবেত হচ্ছে একটি মুল্যবান বস্তু। ঘর- বাড়ির কাজে এখনো প্রচুর জালিবেতের ব্যবহার হচ্ছে। জালিবেত ও বেত শিল্পকে টিকিয়ে রাখতে সরকারি উদ্যোগের প্রয়োজন রয়েছে বলে জানিয়েছেন সিলেট অঞ্চলের বিভিন্ন শ্রেণি পেশার লোকজন।
ছাতকের বিট-ফরেষ্ট কর্মকর্তা নীতিশ চক্রবর্ত্তী জানান, সরকারি জমিতে আগে প্রচুর পরিমাণ বেত জন্মাতো।বর্তমানে অনেক জমি আবাদ হয়ে গেছে যার ফলে বেত কমে গেছে এবং বেত শিল্পে ভাটা পড়েছে। বেত প্রাকৃতিকভাবেই ঝোপ- ঝাড়ে জন্মাতো এখন ঝোপ-ঝাড় ও কমে গেছে। তবে বেত মূল্যবান যুগ-যুগ ধরে মানুষের উপকারে আসছে এমন বিষয়টি তিনি স্বীকার করেছেন।