শিবির ক্যাডার নারী পাচারে জড়িত

নিউজ ডেস্ক
প্রকাশিত হয়েছে : ১৯ জুলাই ২০২০, ১০:২৬ পূর্বাহ্ণ
চট্টগ্রামের ফটিকছড়ির এক সময়কার দুর্ধর্ষ শিবির ক্যাডার আজম খান এখন দুবাইয়ে নারী পাচার চক্রের অন্যতম হোতা। ট্যুরিস্ট ভিসায় দুবাইয়ে নারী পাচার, নারীদের জোর করে ড্যান্সবারে নাচতে ও যৌনকর্মে বাধ্য করে মাত্র আট বছরে বিপুল বিত্তবৈভবের মালিক হয়েছেন তিনি।
দুবাইয়ে তার চারটি বিলাসবহুল হোটেল রয়েছে তার। এছাড়া দেশের বিভিন্ন স্থানে জমিসহ বাড়ি থাকার তথ্য পেয়েছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। আরব আমিরাতের দুবাই থেকে পুলিশের তাড়া খেয়ে বাংলাদেশে পালিয়ে আসা আজম খানকে সম্প্রতি গ্রেফতার করেছে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)।
জানা যায়, আজম খান ফটিকছড়ি পৌরসভার ৪ নম্বর ওয়ার্ডের মাহালিয়া টিলা এলাকার মৃত মাহবুবুল আলমের ছেলে। তিন ভাই এক বোনের মধ্যে সে সবার বড়। এলাকার চোখ ধাঁধাঁনো বিলাসবহুল তিনতলা বাড়িটি আজম খানের। ক’বছর আগে প্রায় ১৫-২০ কোটি টাকা ব্যয়ে অট্টালিকাটি নির্মাণ করেন। তবে আজম খান ও তার পরিবার সেখানে থাকেন না। মাঝে মধ্যে বেড়াতে আসেন।
স্থানীয় লোকজন জানান, নব্বই দশকের দিকে আজম খান ছিলেন ফটিকছড়ি এলাকার লোকজনের কাছে এক মূর্তিমান আতঙ্ক। মানুষ হত্যা ছিল তার নেশা। ২০০৪ সালে ফটিকছড়ির নানুপুর ইউনিয়ন ছাত্রলীগ সভাপতি কামাল উদ্দিনকে হত্যার মাধ্যমে আলোচনায় আসেন আজম।
ফটিকছড়িতে জামায়াত-শিবিরের আধিপত্য বিস্তারে তিনি বড় ভূমিকা রাখেন। তখন তিনি এলাকার দুর্ধর্ষ সন্ত্রাসী শিবির ক্যাডার ওসমান বাহিনীর প্রধান ওসমানের সেকেন্ড ইন কমান্ড ছিলেন। ওই সময় আজম খানের বিরুদ্ধে হত্যাসহ থানায় বেশক’টি মামলা হয়।
২০১০ সালের ৩০ জানুয়ারি র্যাবের সঙ্গে বন্দুকযুদ্ধে নিহত হন ওসমান বাহিনীর প্রধান ওসমান। এর পরই ভয়ে গাঢাকা দেন আজম। পরে শ্রমিকের ভিসায় দুবাইয়ে পাড়ি জমান। প্রথম দিকে দুবাইয়ে বাবার সঙ্গে ফলমূল বিক্রির কাজ করতেন। পরে হোটেল ব্যবসায় জড়ান। হোটেলে কাজ দেয়ার কথা বলে বাংলাদেশ থেকে দালালের মাধ্যমে তরুণী সংগ্রহ শুরু করে দুবাই নিয়ে যান। এসব নারীকে জোর করে দুবাইয়ের ড্যান্সবারে নাচতে ও যৌনকর্মে বাধ্য করান।
দুবাইয়ে চার তারকাযুক্ত তিনটি ও তিন তারকাবিশিষ্ট একটি হোটেলের মালিক এই আজম খান। তার মালিকানাধীন হোটেলগুলো হল- ফরচুন পার্ল হোটেল অ্যান্ড ড্যান্স ক্লাব, হোটেল রয়েল ফরচুন, হোটেল ফরচুন গ্র্যান্ড ও হোটেল সিটি টাওয়ার। আজমের অপকর্মের সহযোগী হিসেবে আছেন তারই দুই ভাই নাজিম ও এরশাদ। আজমের অনুপস্থিতিতে তারাই এখন হোটেলসহ দুবাইয়ের ব্যবসা দেখভাল করছেন।
দুর্ধর্ষ শিবির ক্যাডার আজম খান বিদেশে নারী পাচার শুরুর পর থেকে পাল্টে ফেলেন রাজনৈতিক লেবাসও। যোগ দেন বিএনপিতে। রাতারাতি বনে যান ‘জিয়া আদর্শ একাডেমির’ কেন্দ্রীয় সভাপতি। বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতাদের নিয়ে তিনি দেশে-বিদেশে একাধিক সভা-সমাবেশও করেন। এমনকি বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তির আন্দোলনেও আজম খানকে জিয়া আদর্শ একাডেমির ব্যানারে সক্রিয়ভাবে অংশ নিতে দেখা গেছে।
চট্টগ্রাম জেলা পুলিশ সূত্র জানায়, ইতোমধ্যে আজমের নামে তিনটি পাসপোর্ট থাকার তথ্য পেয়েছে পুলিশ। এর মধ্যে আজম খানের প্রকৃত ঠিকানায় পাসপোর্টটি হচ্ছে ‘এইচ ০১৬৫১২৮’। এছাড়া আর ০৫৭৯৪৬৯ নম্বর পাসপোর্টে তার নাম মোহাম্মদ আজিম উদ্দিন, পিতা মোহাম্মদ আবদুল আলম, মাতা ছবিলা খাতুন, বর্তমান ঠিকানা-কাজিহাটা, ডাকঘর ও থানা রায়পাড়া, জেলা রাজশাহী উল্লেখ রয়েছে। এ দুটি পাসপোর্টের বিরুদ্ধে দুবাই সরকার মামলা দায়ের করে নিষেধাজ্ঞা দেয়।
পরে নতুন আরেকটি পাসপোর্ট নম্বর (কিউ ০৩৩৭৯৯২) দিয়ে তিনি দুবাইয়ে আসা যাওয়া শুরু করেন। সম্প্রতি ভুক্তভোগী নারীদের কাছ থেকে নারী পাচার ও যৌনচক্রে জড়িত থাকার সুনির্দিষ্ট অভিযোগ পেয়ে আজম খানের এই পাসপোর্টও বাতিল করে দেয় দুবাই সরকার।
এরপর দুবাইতে বাংলাদেশ দূতাবাস পাসপোর্ট রেখে আজম খানকে দেশে পাঠিয়ে দেয়। এক্সিট পাস নিয়ে বাংলাদেশে এসে তিনি আত্মগোপনে চলে যান। পরে সিআইডির হাতে গ্রেফতার হন।
ফটিকছড়ি পৌরসভা মেয়র ইসমাইল হোসেন যুগান্তরকে বলেন, ‘আজম খান এক সময় সন্ত্রাসী ওসমান বাহিনীর সক্রিয় সদস্য ছিল। ওসমান বন্দুকযুদ্ধে নিহত হলে আজম গ্রেফতার এড়াতে বিদেশে পালিয়ে যায়। দীর্ঘদিন সে এলাকায় আসেনি। মনে করেছিলাম সন্ত্রাসী পথ থেকে ভালো পথে ফিরে এসেছে। কয়েক মাস আগেও এলাকায় এসে বিভিন্ন ক্লাব ও সংগঠনের মাঝে অনুদান দিয়েছে। সিআইডির হাতে গ্রেফতারের পর তার নারী পাচারের কথা শুনে হতবাক হয়েছি। দেখছি আগের চেয়েও বেশি খারাপ হয়েছে।
চট্টগ্রাম জেলা পুলিশ সুপার এসএম রশিদুল হক বলেন, আজম খানের বিরুদ্ধে চারটি হত্যাসহ পাঁচটি মামলা এখনও আদালতে বিচারাধীন। নথিপত্র দেখে জানা যায়, আজম খান একসময় দুর্ধর্ষ শিবির ক্যাডার ছিল। তার অন্য কোনো অপরাধ আছে কিনা সে বিষয়ে তদন্ত চলছে।