প্রতারক সাহেদ মাদক কারবারেও জড়িত ছিল

নিউজ ডেস্ক
প্রকাশিত হয়েছে : ২২ জুলাই ২০২০, ৭:৪৯ অপরাহ্ণ
করোনার নমুনা পরীক্ষায় প্রতারণার অভিযোগে গ্রেপ্তার রিজেন্ট হাসপাতালের চেয়ারম্যান মো. সাহেদ ওরফে সাহেদ করিমের বিচরণ ছিল প্রতারণার প্রতিটি স্তরেই।ওই প্রতারক সাহেদ জড়িত ছিল মাদক কারবারেও।রিজেন্টকাণ্ডে গ্রেপ্তার সাহেদ এখন ঢাকা মহানগর উত্তর গোয়েন্দা পুলিশের রিমান্ডে আছে। বুধবার (২২ জুলাই) তার রিমান্ডের ষষ্ঠদিন অতিবাহিত হয়েছে। জিজ্ঞাসাবাদরত কর্মকর্তা সূত্রে জানা গেছে, রিমান্ডে সাহেদ নানা টালবাহানা করছে।সাহেদের বিষাক্ত ছোবল থেকে বাঁচতে পারেনি অসহায় রিকশাচালকও!
নিজের বাবাকে প্রকাশ্যে বেল্ট দিয়ে পেটান সাহেদ অন্যের টাকায় সাহেদের রিজেন্ট হাসপাতাল মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা সূত্রে জানা গেছে, অনলাইনে সাহেদ মাদক কারবার পরিচালনা করতো। অনলাইনে অর্ডার দিয়ে বিদেশ থেকে আনতো মাদক ‘ব্লু আইশ’। অনলাইনে মাদক ব্যবসার বিষয়টি দেখভাল করতো রিজেন্ট গ্রুপের ট্রান্সপোর্ট শাখার জেনারেল ম্যানেজার নাজিম উদ্দিন। আর নিয়ন্ত্রণ করতো তার কর্মচারী রাহিদ এবং সুমন। দুইটি অনলাইন ঠিকানায় মাদকের কারবার চালাতো সাহেদ। সেগুলো হচ্ছে- ইন্টারেস্ট বিডি.কম এবং আরেকটি কক্সবিডি.কম। কক্সবাজারের সীমান্ত এলাকা থেকে ঢাকায় ইয়াবা নিয়ে আসতো সে।
সাহেদ গ্রেপ্তার হওয়ার পর তার লোকজন অনলাইন দুইটির ঠিকানা বন্ধ করে দিয়েছে। মাদকের কারবারে সাহেদের সঙ্গে আরো যারা জড়িত তাদের কয়েকজনকে শনাক্ত করেছে পুলিশ।জানা গেছে, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর চোখ এড়ানোর জন্য সাহেদ অনলাইনে মাদকের কারবার চালিয়ে গেছে। ২০১৮ সালের মার্চ মাসে সাহেদ কক্সবাজার ভ্রমণ করার সময় সেখানে একটি অভিজাত হোটেলে টেকনাফের অশ্বিন কুমার নামে এক ব্যবসায়ীর সঙ্গে পরিচয় হয়। পরে সাহেদকে সে অনলাইনের মাধ্যমে মাদকের কারবার করার পরামর্শ দিলে সে তা লুফে নেয়। অশ্বিন কুমার মূলত তাকে মাদক সরবরাহ করতো। সাহেদ মাদক পরিবহনে এম্বুলেন্স ব্যবহার করতো। অনলাইনের মাধ্যমে চট্টগ্রাম বন্দর দিয়ে বিদেশ থেকে অভিজাত শ্রেণির মাদক ব্লু আইশ দেশে নিয়ে আসতো।
সেই মাদক সে ঢাকার একাধিক অভিজাত হোটেলগুলোতে সরবরাহ করতো। মাদকের টাকা লেনদেন হতো হুন্ডি ও বিকাশে।এ বিষয়ে মামলার মুখ্য তদন্তকারী কর্মকর্তা ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের (উত্তর) এডিসি বদরুজ্জামান জিল্লু জানান, রিমান্ডে সাহেদকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। তার তথ্যগুলো যাচাই-বাছাই চলছে।এছাড়াও রুপালি পর্দা সিনেমা জগতের প্রযোজক হওয়ার স্বপ্ন ছিল তার। তার ফাঁদে পড়ে দুই তারকা দম্পতির সংসার তছনছ হয়ে গেছে। তাদের সংসার ভাঙার পেছনে সাহেদ দায়ী। একই জগতে প্রেমে ব্যর্থও হয়েছেন তিনি। এক নায়িকার প্রেমে পড়ে তাকে বিয়ে করতেও চেয়েছিলেন। কিন্তু শেষ পর্যন্ত তা হয়ে উঠেনি। জিজ্ঞাসাবাদে এসব তথ্য দিয়েছেন সাহেদ।
জানা গেছে, চুক্তিতে ব্যবসা করা, কোম্পানি খোলা, অংশীদারিত্বের ভিত্তিতে ব্যবসা, বড় বিজনেসের ট্রেড লাইসেন্স করে দেয়ার নামে অনেক ব্যবসায়ী তার প্রতারণার শিকার হয়েছেন। অনেকেই তার কাছে টাকা চাইতে এসেছিলেন। কিন্তু, তাদের টাকা দেয়ার বদলে হুমকি দিয়েছে। কাউকে রিজেন্ট হাসপাতালের একটি কক্ষে অনেকক্ষণ বসিয়ে রেখে মানসিক নির্যাতন করেছে। অথবা পাওনাদারকে তার গ্যাং বাহিনী দিয়ে এক রুমে নিয়ে টর্চার করেছে। কাউকে ভুয়া চেক দিয়েছে।
করোনাভাইরাসের পরীক্ষা না করে ভুয়া রিপোর্ট দেওয়া, সরকারের কাছে বিল দেওয়ার পর আবার রোগীর কাছ থেকেও অর্থ নেওয়াসহ রিজেন্ট হাসপাতালে নানা অনিয়মের খবর সম্প্রতি প্রকাশ্য হয়েছে র্যাবের অভিযানের মধ্য দিয়ে। গত সপ্তাহে ওই অভিযানের পর রিজেন্টের দুটি হাসপাতাল বন্ধ করে দেয় র্যাব। ওই হাসপাতালের অনুমোদনও বাতিল করা হয়।এ ঘটনায় দায়ের করা মামলায় গত ১৫ জুলাই সকালে সাতক্ষীরা দেবহাটা সীমান্ত এলাকা থেকে সাহেদকে গ্রেপ্তার করে র্যাব।পরে ১৬ জুলাই তাকে ঢাকা মহানগর হাকিম আদালতে হাজির করা হয়। সাহেদকে জিজ্ঞাসাবাদে ১০ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন আদালত। গোয়েন্দা পুলিশ এখন তাকে দশ দিনের রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করছে।