দলই চা বাগান খুলে দেওয়ার দাবীতে লংমার্চ,সড়ক অবরোধ

নিউজ ডেস্ক
প্রকাশিত হয়েছে : ২৪ আগস্ট ২০২০, ১২:৪৯ অপরাহ্ণ
: ব্যাক্তি মালিকানাধীন মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জের দলই চা বাগান কোম্পানীর এজিএম খালেদ মঞ্জুর খান বাদি হয়ে মারপিট, গাড়ি ভাঙ্গচুর ও নগদ টাকা ছিনাইয়ের মামলা প্রত্যাহার করে চা বাগান খুলে দেওয়ার দাবীতে লংমার্চ করেছেন চা শ্রমিকরা। সোমবার চা শ্রমিক নেত্রী গীতা রাণী কানুর নেতৃত্বে এ লংমার্চ করা হয়। সকাল ১০টায় সীমান্তবর্তী দলই চা বাগান থেকে শুরু হওয়া লংমার্চটি দীর্ঘ ২১ কিলোমিটার পথ অতিক্রম করে ৫ ঘন্টা পর বিকাল ৩টায় কমলগঞ্জ উপজেলা চৌমুহনী চত্বরে পৌছে। এ সময় রাস্তায় বসে সড়ক অবরোধ করলে কমলগঞ্জ-শ্রীমঙ্গল ও কমলগঞ্জ-মৌলভীবাজার সড়কে যানবাহন বন্ধ হয়ে যায়। এ সময় সড়কের উভয় পাশে দীর্ঘ যানজট সৃষ্টি হয়। অবস্থানকালে বক্তব্য রাখেন চা শ্রমিক নেত্রী গীতা রাণী কানুসহ শ্রমিক নেতৃবৃন্দরা বক্তব্য রাখেন। দীর্ঘ এক ঘন্টা পর সড়ক অবরোধ তুলে নিয়ে উপজেলা পরিষদ প্রাঙ্গনে চা শ্রমিকরা অবস্থান করেন। সন্ধ্যা সাড়ে ৬ টায় এ রিপোর্ট লিখা পর্যন্ত পরিষদে চা শ্রমিকরা অবস্থান করছিলেন।
এরআগে গত ২৭ জুলাই সন্ধ্যায় আকষ্মিক এক ঘোষণায় অনির্দিষ্টকালের কালের জন্য দলই চা বাগান বন্ধ করে মালিক পক্ষ। বাংলাদেশ শ্রম আইন ২০০৬ এর ১৩ নম্বর ধারা অনুযায়ী অনির্দিষ্টকালের জন্য চা বাগান সম্পূর্ণ (লক আউট) বন্ধ ঘোষণা করা হয়। বেআইনীভাবে বন্ধ করে দেওয়া দলই চা বাগান খুলে দেওয়ার দাবীতে পরদিন ২৮ জুলাই সকাল থেকে চা বাগানের শ্রমিকরা অবস্থান কর্মসূচি শুরু করেন। এ সময় চা শ্রমিকরা ব্যবস্থাপকের অপসারণের দাবী জানান। তাদের এ দাবীর প্রতি একাত্মতা প্রকাশ করে কমলগঞ্জের অন্য ২২টি চা বাগানসহ দলই ভ্যালীর বিভিন্ন চা বাগানে মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করেন। পাশাপাশি বাংলাদেশ চা শ্রমিক ইউনিয়নসহ চা শ্রমিকদের বিভিন্ন সংগঠন চা বাগান খুলে দেওয়ার দাবীতে আন্দোলনে নামে। এক পর্ষায়ে বাগান কর্তৃপক্ষের সাথে বৈঠকে বসেন কমলগঞ্জ উপজেলা প্রশাসন। বৈঠকে চা শ্রমিক নেতৃবৃন্দরা উপস্থিত ছিলেন। কয়েক দফা ত্রিপক্ষীয় বৈঠকে বাগান খুলার কোনো সিদ্ধান্তে পৌছা না গেলেও চা শ্রমিকদের বকেয়া হাজিরা প্রদান করার ব্যবস্থা করা হয়। সর্বশেষ গত সোমবার বিকেলে সাবেক চিফ হুইপ উপাধ্যক্ষ আব্দুস শহীদ এমপির উপস্থিতিতে দলই চা বাগানে এক বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। বৈঠকে জেলা প্রশাসক মীর নাহিদ হাসান, কমলগঞ্জ উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান অধ্যাপক রফিকুর রহমান, পুলিশ সুপার ফারুক আহমেদ পিপিএম (বার) সহ প্রশাসনের জেলা ও উপজেলা পর্যায়ের বিভিন্ন কর্মকর্তা,জনপ্রতিনিধি,দলই চা বাগানের মালিক পক্ষ এবং বাংলাদেশ চা শ্রমিক ইউনিয়ন ও চা শ্রমিক নেতৃবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন। বৈঠকে সিদ্ধান্ত হয় বেআইনিভাবে গত ২৭ জুলাই সন্ধ্যায় দেওয়া ঘোষণাপত্র প্রত্যাহার করে বুধবার (১৯ আগষ্ট) থেকে দলই চা বাগান খুলে দেওয়া হবে। চা শ্রমিকদের দাবির মুখে বিতর্কিত ব্যবস্থাপককে অপসারণ করে প্রধান কার্যালয়ে সংযুক্ত করারও সিদ্ধান্ত হয় ওই বৈঠকে। চা শ্রমিকরা জানান, বৈঠকের এই সিদ্ধান্ত দলই চা বাগান কর্তৃপক্ষ ও চা শ্রমিকেরা মেনে নেন। কিন্তু বৈঠক শেষে ওইদিন রাতের আঁধারে কোম্পানি আমিনুল ইসলামকে চাতুরীপনা করে দলই চা বাগানে অনুপ্রবেশ করায়। বৈঠকের পরদিন মঙ্গলবার সকালে বাগান বন্ধের ঘোষণাপত্র প্রত্যাহার করে বুধবার থেকে চা বাগান খোলার ঘোষণা দেওয়া দেয় বাগান কর্তৃপক্ষ। কিন্তু বিতর্কিত ব্যবস্থাপককে চা বাগানে প্রবেশ করিয়ে বাগান খুলায় চা শ্রমিকদের মাঝে নতুন করে উত্তেজনা দেখা দেয়। মঙ্গলবার দিনভর টানটান উত্তেজনার মধ্যে বুধবার সকাল ৮টা থেকে দলই চা বাগানের প্রধান অফিসের সামনে অবস্থান নেয় চা শ্রমিকা। ব্যবস্থাপক আমিনুল ইসলামের অপসারণের দাবী অবস্থান কর্মসূচি চলাকালে বিক্ষোভও করেন শ্রমিকরা। বেলা বাড়ার সাথে উত্তেজনা বাড়তে থাকে। খবর পেয়ে কমলগঞ্জ উপজেলা ও পুলিশ প্রশাসনের কর্মকর্তা এবং শ্রমিক নেতৃবৃন্দ এবং বাগানের এজিএম খালেদ খান বাগানে ছুটে যান। এ সময় চা শ্রমিকদের সাথে কথা বলেন তারা। কিন্তু চা শ্রমিকরা ব্যবস্থাপক অপসারণের দাবীতে অনড় থাকলে শ্রমিকদের তোপের মুখে দুপুরে দলই চা বাগান ছাড়তে বাধ্য হন বিতর্কিত ব্যবস্থাপক আমিনুল ইসলাম। এ সময় উত্তেজিত চা শ্রমিকরা দলই কোম্পানীর এজিএম খালেদ খানের গাড়ি ভাংচুর করেন। পরে পুলিশ পাহারায় বুধবার দুপুরে ব্যবস্থাপক সহ এজিএম বাগান ত্যাগ করার পর বাগানের পরিস্থিতি শান্ত হয়। এই ঘটনায় বুধবার রাতে ফের বাগান বন্ধ ঘোষণা করে বাগান কর্তৃপক্ষ। বাগান বন্ধের তিন দিন পর রোববার স্থানীয় জনপ্রতিনিধিসহ চা শ্রমিক নেতাদের বিরুদ্ধে মারপিট, গাড়ি ভাঙ্গচুর ও নগদ টাকা ছিনাইয়ের অভিযোগে বাগানের এজিএম খালেদ মঞ্জুর খান বাদি হয়ে রোববার কমলগঞ্জ থানায় মামলা করেন। মামলা দায়েরের খবরে বন্ধ ঘোষণা করা দলই চা বাগানের শ্রমিকদের মাঝে নতুন করে উত্তেজনা দেখা দেয়।