সুনামগঞ্জে শিশুর পায়ে সুইয়ের টুকরো রেখেই হাসপাতাল থেকে ছাড়পত্র

নিউজ ডেস্ক
প্রকাশিত হয়েছে : ০১ সেপ্টেম্বর ২০২২, ১২:০৯ পূর্বাহ্ণ
নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত এক শিশুকে ইনজেকশন দেওয়ার সময় ক্যানোলা সুইয়ের কিছু অংশ রেখেই হাসপাতাল থেকে ছাড়পত্র দেওয়া হয়েছে। এ ঘটনায় পরিবারের পক্ষ থেকে মঙ্গলবার সুনামগঞ্জ সদর হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়কের কাছে লিখিত অভিযোগ দায়ের করা হয়।
অভিযোগ তদন্তের জন্য আজ বুধবার (৩১ আগষ্ট) তিন সদস্যের তদন্ত কমিটিকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। গত শনিবার সকালে ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট সুনামগঞ্জ সদর হাসপাতালে এ ঘটনা ঘটে।
এক বছর বয়সী শিশুর নাম তাসনিহা আক্তার। সে সুনামগঞ্জ সদর উপজেলার কুরবাননগর ইউনিয়নের আলমপুর গ্রামের বাচ্চু মিয়ার মেয়ে। চিকিৎসায় নিউমোনিয়া সারলেও পায়ের মাংসপেশীর ভেতরে আটকে থাকা সুইয়ের টুকরো বের না করেই হাসপাতাল থেকে তাকে দ্রুত ছাড়পত্র দেওয়া হয়েছে। হাসপাতালের নার্সের ভুলের কারণে যন্ত্রণা ভোগ করছে শিশু তাসনিহা।
এই ঘটনায় সদর হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়কের কাছে লিখিত অভিযোগ করেন তাসনিহার বাবা মো. বাচ্চু মিয়া।
গতকাল মঙ্গলবার এই অভিযোগ করেন তিনি। লিখিত অভিযোগের প্রেক্ষিতে তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন, সদর হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা. আনিসুর রহমান। তিন সদস্যের তদন্ত কমিটিতে হাসপাতালে সহকারী পরিচালক, আবাসিক মেডিকেল অফিসার ও সেবা তত্ত্বাবধায়ক রয়েছেন।
অভিযোগ সূত্রে জানা যায়, গত শনিবার সকালে নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত অবস্থায় তাসনিহাকে পরিবারের লোকজন সুনামগঞ্জ সদর হাসপাতালের ৬ষ্ঠ তলায় শিশু ওয়ার্ডে ভর্তি করেন। হাসপাতালের শিশু চিকিৎসক ডা. এনামুল হক খান শিশুটির চিকিৎসা দেন। কর্তব্যরত নার্স তাসনিহার বাম পায়ে ইনজেকশন দেন। এরপর বেলা ১১টায় শিশুটির পা হঠাৎ করে ফুলে ওঠে।
বিষয়টি ডা. এনামুল হক খানকে জানানো হলে, ‘পা ফোলা কোন সমস্যা নয়, ঠিক হয়ে যাবে’ বলে সান্ত্বনা দেন। পরদিন ২৮ আগস্ট সকালে ডা. এনামুল হক খান শিশুটিকে ছাড়পত্র দিয়ে বিদায় করে দেন।
শিশু তাসনিহার পায়ে সুই গেঁথে রয়েছে এমন সন্দেহ হওয়ায় হাসপাতালের পাশের একটি ক্লিনিকে গিয়ে ডা. বিশ্বজিৎ গোলদারকে দেখান। ডা. বিশ্বজিৎ গোলদার শিশুটিকে দেখে তাদেরকে জানান, শিশুটির পায়ে ইনজেকশনের সুই বিদ্ধ রয়েছে। তিনি সিলেটে যাওয়ার পরামর্শ দেন। সুই বিদ্ধ থাকার কারণে অতিরিক্ত ব্যথা হলে পরদিন সোমবার সকালে আবারও সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয় তাসনিহাকে। ওই দিন সকাল সাড়ে ১০টায় পুনরায় ডা. এনামুল হক খান সিলেটে যাওয়ার পরামর্শ দিয়ে আবারও ছাড়পত্র ইস্যু করার চেষ্টা করেন।
এ সময় শিশু তাসনিহার মা-বাবা সিলেটে চিকিৎসার সামর্থ্য নেই বলে ডাক্তার ও নার্সদের চিকিৎসার অনুরোধ করলে কোনো ধরনের চিকিৎসা করা হয়নি। হাসপাতালের কর্মচারীরা তাসনিহার পরিবারকে দুই হাজার টাকা দিয়ে সিলেট চলে যাওয়ার জন্য বলেছিলেন। চিকিৎসা না পেয়ে বাধ্য হয়ে মঙ্গলবার বিকেলে সিলেটের এম এ জি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে শিশুকে নিয়ে যান বাবা।
ভুক্তভোগী শিশু তাসনিহার বাবা মো. বাচ্চু মিয়া বলেন, ‘আমার মেয়ে পায়ের ভেতরে সুইয়ের টুকরো আটকা থাকায় যন্ত্রণা ভোগ করছে। সুই বের না করে, ভালো পরামর্শ না দিয়েই হাসপাতাল থেকে ছাড়পত্র দেওয়া হয়েছে। এরপর সিলেটের ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করেছি।
হাসপাতালের ডাক্তার বলেছেন, অপারেশন করে নাকি পা থেকে ভাঙা সুই বের করতে হবে।’ যাদের ভুলের কারণে তার মেয়ের পায়ে সুইয়ের টুকরো আটকা রয়েছে তাদের শাস্তির দাবি করেন তিনি।
সুনামগঞ্জ সদর হাসপাতালের শিশু চিকিৎসক ডা. এনামুল হক খানের ব্যক্তিগত মোবাইল ফোনে কয়েকবার চেষ্টা করলেও ফোন রিসিভ করেননি তিনি।
হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা. মো. আনিসুর রহমান বললেন, ‘একটি শিশুর চিকিৎসা নিয়ে লিখিত অভিযোগ পেয়েছি। বিষয়টি খতিয়ে দেখা হচ্ছে। তিন সদস্য বিশিষ্ট একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। আগামী তিন কার্যদিবসের মধ্যে তদন্ত রিপোর্ট জমা দেওয়ার জন্য বলা হয়েছে। তদন্ত রিপোর্ট পাওয়ার পর পরবর্তী পদক্ষেপ নেওয়া হবে।’