এখনো ঝুঁকিপূর্ণ আখাউড়া-সিলেট রেলপথ

নিউজ ডেস্ক
প্রকাশিত হয়েছে : ১০ সেপ্টেম্বর ২০২২, ১:৫৭ অপরাহ্ণ
বাংলাদেশ রেলওয়ে আখাউড়া-সিলেট সেকশন এখনো ঝুঁকিপূর্ণ রয়ে গেছে । সিলেট অংশে বেশ কয়েক দফা মেরামত কাজ করা হলেও রেলপথটি পুরোপুরি ঝুঁকিমুক্ত হয়নি। ফলে প্রতিনিয়ত ঘটছে নানা দুর্ঘটনা। আবার ট্রেনে আগুন লেগে যাওয়া আর লাইনচ্যুতির কারণে যাত্রী দুর্ভোগের পাশাপাশি ট্রেনের রানিং আওয়ারও ক্রমেই বেড়ে চলছে। প্রতিনিয়ত দেখা দিচ্ছে ট্রেনের সিডিউল বিপর্যয়। ফলে এই রুটে চলাচলকারী সিলেটের হাজার হাজার ট্রেন যাত্রীকে সীমাহীন দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে।
ট্রেনের রানিং আওয়ার কমানোসহ দুর্ভোগ লাঘবে কোরিয়া থেকে ২০০ মেঘা হর্স পাওয়ার সম্পন্ন ৩০টি রেল ইঞ্জিন আনা হলেও লাইন ঝুঁকিপূর্ণ থাকায় এসব ইঞ্জিন সিলেট লাইনের কোনো ট্রেনে সংযুক্ত করা যায়নি। আর স্বপই থেকে গেছে আখাউড়া- সিলেট সেকশনে রেলের ডাবল লাইন নির্মাণ প্রকল্প।
রেলওয়ে সূত্র জানায়, সিলেটের সঙ্গে রাজধানী ঢাকা এবং বন্দরনগরী চট্টগ্রামের সরাসরি ট্রেন যোগাযোগ রয়েছে। দুটি রেলপথের সাধারণ অংশ আখাউড়া-সিলেট সিঙ্গেল লাইন মিটার গেজ রেলপথ। আখাউড়া-সিলেট রেলপথের এই অংশটি আখাউড়া-কুলাউড়া-শাহবাজপুর-মহিষাধন (করিমগঞ্জ, ভারত) রেলপথের অংশ হিসেবে ১৮৯৬ সালে তৈরি হয়। আর কুলাউড়া-সিলেট রেলপথটি ১৯১৫ সালে প্রথম বিশ্বযুদ্ধকালে ব্রিটিশ সরকারের অধীনে আসাম বেঙ্গল রেলওয়ে কর্তৃক তৈরি করা হয়। আখাউড়া-সিলেট রেলপথের মোট দৈর্ঘ্য ১৭৬ দশমিক ৬০ কিলোমিটার।দীর্ঘ এই রেলপথে ছোট-বড় ২৫০টির বেশি সেতু কালভার্ট রয়েছে। সর্বনিম্ন ৩ ফুট থেকে ৩০০ ফুট দীর্ঘ এই সেতুগুলো ৬০-৭০ বছর আগে নির্মিত। প্রতিদিন এইব রুটে ৬ জোড়া আন্তঃনগর এবং ৮টি ডেমু ও মেইলসহ কয়েকটি পণ্যবাহী ট্রেনও চলাচল করে।
রেলওয়ে সূত্র আরও জানায়, এ রুটের রেলসেতু ও কালভার্টগুলো অনেক বছরের পুরনো। কাঠের স্লিপারের অধিকাংশ নষ্ট হয়ে গেছে। বিভিন্ন স্থানে রেললাইনের ক্লিপ ও হুক উঠে যাওয়া, সেতু-কালভার্ট সংস্কারের অভাব ও রেলসেতুর কাঠের স্লিপারগুলো নষ্ট হয়ে যাওয়ায় মারাত্মক ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়েছে রেলপথটি।
রেলওয়ে সূত্র জানিয়েছে, সিলেট – আখাউড়া রেল লাইনের স্থানে স্থানে ঝুঁকিপূর্ণ ব্রিজ এবং স্লিপার নষ্ট হয়ে যাওয়ায় এই রুটে ট্রেনের গতি কমিয়ে ট্রেন চালাতে হচ্ছে। এরপরও প্রায়ই বিভিন্ন স্থানে ট্রেন লাইনচয়ুতির ঘটনা ঘটছে। গত ১৪ জুলাই ব্রাহ্মণবাড়ীয়া এলাকায় মুকুন্দপুর ও হরষপুর স্টেশনের মধ্যবর্তী স্থানে একটি মালবাহী ট্রেনের ওয়াগন লাইনচ্যুত হয়ে ৭ ঘন্টা ট্রেন চলাচল বন্ধ থাকে। এর আগে ১১ জুন ঢাকা থেকে ছেড়ে আসা সিলেটগামী পারাবত এক্সপ্রেস ট্রেনে আগুন লাগে। এতে সাড়ে ৪ ঘন্টা ট্রেন চলাচল বন্ধ থাকে।
ঝুঁকিপূর্ণ লাইনে ট্রেন চালানোর কারণে ২০১৯ সালের ২৪ জুন মৌলভীবাজারের কুলাউড়া ও বরমচাল রেলওয়ে স্টেশনের মধ্যবর্তী স্থানে ব্রিজ ভেঙে সিলেট থেকে ছেড়ে আসা উপবন এক্সপ্রেস ট্রেন নিচে পড়ে যায়। এতে ৫ জন নিহত ও অসংখ্য যাত্রী আহত হন। এরপর অবশ্য এই রুটের কয়েকটি ব্রিজ মেরামত করা হলেও ট্রেন লাইন এখানো ঝুঁকিপূর্ণ রয়ে গেছে।
রেলওয়ে সূত্র জানিয়েছে, আখাউড়া সিলেট রেললাইনের অবস্থা এখন এতোই শোচনীয় যে দক্ষিণ কোরিয়ার হুন্দাই রোটেম থেকে আমদানিকৃত ২০০ হর্স পাওয়ারের বেশি শক্তির ৩০ টি ইঞ্জিন আনা হলেও লআইন ঝুকিপূর্ণ থাকায় এসব ইঞ্জিন এই রুটে সংযুক্ত করা যায়নি।
রেলওয়ে সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, কোরিয়া থেকে আমদানিকৃত ইঞ্জিনগুলো উচ্চগতির। নড়বড়ে, পাথরবিহীন রেললাইনে উচ্চগতির ও অধিক ওজনের এই ইঞ্জিনগুলো চলতে পারে না। তাই নতুন ইঞ্জিনগুলো আখাউড়া -সিলেট রুটে চলাচলের অনুমতি দেয়নি রেল কর্তৃপক্ষ।
রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের চিফ ম্যাকানিকাল ইঞ্জিনিয়ার আবু জাফর মিয়া বলেন, সিলেট আখাউড়া সেকশনে রেলপথ ঝুঁকিপূর্ণ হলেও স্থানে স্থানে আমাদের লোকজন মেরামত কাজ করছে। এটি চলমান প্রক্রিয়া।
তিনি আরও জানান, দক্ষিণ কোরিয়া থেকে আমদানিকৃত ২০০ হর্স পাওয়ার বিশিষ্ট ৩০টি ইঞ্জিন ঢাকা -চট্টগ্রাম রুটে চলছে।
সিলেট অঞ্চলের যাত্রীদের দুর্ভোগ লাগবে সিলেট-আখাউড়া রেলপথটি ডাবল লাইন উন্নীত করতে ২০১৯ সালের আগস্টে ডিও (আধা সরকারি পত্র) দেন তিন মন্ত্রী। তারা হলেন-সিলেট-১ আসনের সংসদ সদস্য ও পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন, মৌলভীবাজার-১ আসনের সংসদ সদস্য ও পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন বিষয়কমন্ত্রী মো. শাহাব উদ্দিন এবং সিলেট-৪ আসনের সংসদ সদস্য ও প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান বিষয়কমন্ত্রী ইমরান আহমদ। একই মাসে একই অনুরোধ জানিয়ে ডিও দেন সুনামগঞ্জ-৩ আসনের সংসদ সদস্য ও পরিকল্পনামন্ত্রী এমএ মান্নান।কিন্তু এই স্বপ্ন এখনো স্বপ্নই রয়ে গেছে।
এ বিষয়ে বাংলাদেশ রেলওয়ের পূর্বাঞ্চলীয় জোনের মহা পরিচালক জাহাঙ্গীর হোসেন জানান, সিলেট -আখাউড়া রেলপথ ডাবল লাইন করার প্রকল্পটি রেলওয়ের বিবেচনায় আছে।